somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধিক্কার তোমাদের, ধিক্কার!

১৭ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসাদ, তোমার কি মনে আছে আমাদের সেই দিনগুলোর কথা। বিয়ের পর পরই আমি তোমার হাত ধরে সেনানিবাসের সেই বাসায় গিয়েছিলাম। আমার সেনাঅফিসারদের জীবন সম্বন্ধে তেমন কোন আইডিয়াই ছিল না।আমি মনে করতাম সেনাঅফিসারদের জীবন কতই না বিলাসী। আমি তোমার বাসায় সাধারণ আসবাব পত্র দেখে অনেক অবাক হয়েছিলাম। তুমি আমাকে বলেছিলে, তোমরা সাধারণ মানুষরা মনে কর আর্মি অফিসাররা অনেক সুখে থাকে। কিন্তু আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারব না। হ্যা, একটা জিনিস দিতে পারব, তা হল নিরাপত্তা, জীবনের নিরাপত্তা। আর্মিদের আর কিছু না থাকুক, একটা স্বাধীন দেশে নিরাপত্তাটুকু আছে।

তোমাকে এভাবে হারাতে হবে আমি জীবনে ভাবতেও পারিনি। মনে আছে, এই মাসের আটাশ তারিখেই তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল। তুমি লাজুক লাজুক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে । তোমার তিন বছরের মেয়ে আজও তোমার কথা ভাবে। ওর সামনে তোমার কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে।বলে, আব্বুর কথা আমার সামনে বলবানা, আমার খুব খারাপ লাগে। তোমার মনে আছে, যেদিন শান্তার জন্ম হল সেদিন তুমি ছিল লাইবেরীয়াতে জাতিসংঘ মিশনে । আমার বাবার বাসায় ওর জন্ম হল। তোমাকে ফোন করে আমাদের নতুন অতিথির কথা জানানো হল। তুমি সেইদিন আমার সাথে কথা বলার পরেই শান্তার কথা শুনতে চাইছিলে। আমি বললাম, ও তো কথা বলতে পারে না। ও শুধু কাদতে পারে। তুমি বললে তাহলে ওকে কান্দাও আমি কান্দার আওয়াজই শুনতে চাই।

তুমি বলতে শান্তা বড় হয়ে মেজর হবে।তুমি ওকে দুষ্টামি করে মেজর শান্তা বলেই ডাকতে। আমার দুষ্ট মেয়ে তোমার সাথে অনেক খেলাই করত। তুমি নেই ও কারো সাথে কথাও বলে না। মন মরা হয়ে বসে থাকে। আচ্ছা, তোমার মনে আছে। আমি যখন বললতাম আমাদের একটা সন্তানই যথেষ্ট। তখন তুমি আমাকে বলতে আমরা দুইটা সন্তান নিব। দুটোকেই আর্মির অফিসার বানাব।

গত ১৫ তারিখ তুমি আসলে আমাদের বাসায়। স্বাভাবতই তোমার আসার কখা ছিল না। তোমাকে অনেকটা ফোর্স করেই বিডিআর এর কুচকাওয়াজ এ অংশ নিতে আনা হল। আচ্ছা, তোমার মনে কি একটু সন্দেহ জাগেনি? তুমি আসাতে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। এমনিতে আমি মাস্টার্স এর পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তোমার আসাতে আমার মধ্যে আলাদা পুলক অনুভব করলাম। ২৮ ফেব্রুয়ারী আমাদের ৮ম বিবাহ বার্ষিকী আমরা অনেক সুন্দর করে পালন করব।

তুমি জান, সেই দিন, ইতিহাস পরীক্ষার দিন ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ এর বর্ণনা লিখতে যেয়ে আমার বার বারই কান্না পাচ্ছিল।সেই ইপিআর এর বিদ্রোহের কথা লেখতে যেয়ে বার বার আমাদের বিডিআর এর কথাই মনে পড়ছিল। যে সব নরপশু এই হত্যাকান্ড চালিয়েছে তাদের প্রতি বার বার ধিক্কার আসছিল। ২৫ মার্চ নিয়ে লেখতে যেয়ে আমার বার বারই মনে হচ্ছিল যেন আমি ইতিহাস লিখছি। নতুন করে আবারো লেখা হচ্ছে ২৫ মার্চ এর ইতিহাস।

তুমি তো আমার অনেক কাছেই ছিলে। ২৩ তারিখে তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়। আমি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তোমাকে বেশি সময় দিতে পারিনি। তুমি খেলা করছিলে আমার মেয়ে সাথে। স্যরি, ভুল বললাম তোমার মেয়ের সাথে। তুমি সেইদিন ওর জন্য একটা পুতুল কিনে এনেছিলে। সেটা নিয়ে ও যে কি পরিমান ছুটাছুটা করছিল তা নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে। আজ তোমার দেয়া পুতুলটা ও ধরেও দেখে না।

তুমি বার বার বলতে “জান দিব তাও মান দিব না”। এই কথাটা যে তোমার জীবনে এই ভাবে প্রতিফলিত হবে সেটা আমি নিজেও ভাবতে পারিনি। তুমি বিডিআর বদলী হওয়াতে অনেক বিডিআর সদস্য তাদের চোরাকারবারী বন্ধ করতে বাধ্য হয়। অনেকে তোমাকে প্রাণ নাশের হুমকিও দিয়েছিল। তুমি এই সবের কোন তোয়াক্কা না করেই বিডিআর এ তোমার ভূমিকা অক্ষুন্ন রাখছিলে।

তোমার সাথে আমার শেষ কথা হয় ২৪ তারিখ রাতে । পরের দিন সকালে তুমি ফোন দিয়েছিলে আমি ঘুমে থাকায় ধরতে পারিনি।তুমি জানতে আমি সকালে ঘুমাই তারপরও তুমি ফোন দিয়েছিলে। হয়ত তোমার মন বুঝতে পারছিল এটাই তোমার সাথে আমার শেষ কথা।

আচ্ছা, প্রধানমন্ত্রী আজকে বলছে তারা নাকি সফল হয়েছে। এত গুলো অফিসার মারা যাওয়ার পরও তারা কিভাবে সফল হয় এটাই আমার বুঝে আসে না। দশহাজার এর মত বিডিআর জোয়ান সেইদিন পিলখানা থেকে পালিয়ে গেল । আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি সফল। আচ্ছা ওনার কন্যা পুতুল যদি আজকে বিধবা হত তাহলে কি এই কথা বলতে পারতেন। তিনি কি পারতেন এত হাস্যোজ্জ্বল মুখে বসে থাকতে। জান, তোমাদের হত্যা কান্ডের তদন্ত নিয়েও বিভিন্ন ধরনের তাল বাহানা চলছে। এক এক মন্ত্রী এক কথা বলছে। অভিযুক্ত তোরাব আলী আজকে বেকসুর খালাস পাচ্ছে। কিভাবে এত সব হয় আমি কিছু্ই বুঝি না, আমি শুধু তোমার তোমার হত্যাকান্ডের বিচার চাই। যদি এই জাতি বিচার না করতে পারে তাহলে ধিক্কার জানাই এই দেশকে, এই জাতিকে।
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×