somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁকা- গল্প (শেষাংশ)

১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২য় অংশ
১ম অংশ
রুনি এবার প্রশ্ন করলো," আপনি কে? আপনার নামটা বলবেন কি?"
প্রায় ফিসফিস করে। যেন কানে কানে বলছে কারো।
তার হাত স্থির। নড়ছে না।
শাহেদ গুনছে, এক, দুই, তিন.....দশ!
সে এবার আটকে রাখা দমটা ছাড়লো। একটু স্বস্তিতে কি?
রুনি প্রশ্নটা আবার করলো, এবার একটু জোরে।
সবার বিস্ফোরিত চোখের সামনে দিয়ে আবার নড়তে শুরু করেছে রুনির হাত! খুব ধীরে সময় নিয়ে একটা একটা করে অক্ষর বাছাই করছে!
o......n........u!!
হঠাৎ করেই ঘরের ভেতরটা কেমন যেন গুমোট হয়ে উঠলো।
নীরার হাত আরো জোরে আকড়ে ধরলো শাহেদের ঘামে ভেজা আঙুলগুলো। সে নিজেও যথেস্ট অসহায় বোধ করছে, কেন যেন। আড়চোখে সাজ্জাদের দিকে তাকালো।
অভিব্যক্তিহীন!
সবসময়ই এমন সে! মনের ভেতর কি চলছে, সেটা তাকে দেখে কখনোই কেউ বুঝে উঠতে পারতোনা। রুনিও যেন থমকে গিয়েছিল ক্ষণিকের জন্য।
আবার তার অপার্থিব নীচু গলার স্বর-
"আপনি কেমন আছেন?"
r......e......v......e......n......g.......e.....
এক পশলা বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য নীরার দমটা যেন আটকে আসছিল। কে যেন জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলো। শাহেদ টের পেল, সাজ্জাদের কাঁপা কাঁপা হাতটা আর তার মুঠি ছেড়ে দিয়েছে।
"কার উপর প্রতিশোধ?" রুনির কন্ঠ যেন আবেগহীন।
k......i......l.....l....e....r.....
শব্দ করে ফুঁপিয়ে উঠলো নীরা।
"বন্ধ করো; দোহাই বন্ধ করো....।"
তার গলা দিয়ে শব্দ বেরুচ্ছে না। কিন্তু প্ল্যানচ্যাট ঘিরে থাকা মানুষগুলি কেউ শুনলো বলে মনে হয় না।
রুনিকে যেন নেশায় পেয়ে বসেছে!
"কে খুনী?"
s.......h.......a....
"বন্ধ করো; বন্ধ করো এই খেলা!"
নীরার হাতের ধাক্কায় উইজা বোর্ড ছিটকে পড়লো রুমের কোনায়! তার সারা শরীর কাঁপছে। দৃষ্টি শাহেদের দিকে। বাকি তিন জন তখনও স্থির পাথরের মূর্তির মতো তাকিয়ে আছে, যেখানে বোর্ডটা ছিল একটু আগে!
কে যেন আলোটা জালিয়ে দিয়েছে।
শাহেদের মুখটা রক্তশূন্য ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। সেদিনের ছবিগুলি সব ভেসে উঠছে তার চোখের সামনে।
মাত্র তিনদিনের জন্য এসেছিল সে ঢাকায়। রুনির কেইসের জন্য মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছিল সরকারী তদন্তকারী অফিসারকে, তা না হলে এই কেইসের নিষ্পত্তি হতো না কখনোই। নীরাও চায়নি একথা তাদের পরিবারের আর কেউ জানুক। তাই তার আসার কথাটা গোপনই থেকে গেছে। অনুর ফোনটা পেয়েই, জীঘাংসায় ছুটে এসেছিল সে চা-বাগানে।
কিন্তু তখন তাকে থামানো সম্ভব ছিলনা তার পক্ষে। আমেরিকায় ফিরে যাবার পর শাহেদ বুঝেছিল; নীরা সেই থেকে তাকে একটু একটু সন্দেহ করছে। আজকে একেবারে ভেঙ্গে পরেছে সে।
'না, না না, শাহেদ কিছু করেনি!ও এমনটা করতে পারেনা!!"- নীরার প্রলাপের স্বগোক্তিতে বর্তমানে ফিরে এলো শাহেদ। রুনীর দিকে তাকালো।
সে তাকিয়ে আছে সাজ্জাদের দিকে।প্রবল ঘৃণা আর বিতৃষ্ণায় সুদর্শন মুখখানি বিকৃত হয়ে আছে!
রুনীর কন্ঠ একদম শান্ত!
"কিন্তু কেন সাজ্জাদ ভাই? কেন?"
"অনু কখনোই আমার ছিলনা! কখনোই না!"- সাজ্জাদের গলার স্বর যেন ভেসে আসছিলো অনেক দূর থেকে!
"আমি তার জন্য সারাটা জীবন অপেক্ষায় ছিলাম! যে তাকে প্রতারিত করলো, তকে কেন ভুলতে পারলোনা?! কেন সে বার বার ফিরে ফিরে আসছিলো আমাদের মাঝে?! তার অ্যাবরশন ঘটালাম, যাতে সেই পাপের কোন চিহ্ন না থাকে আমার অনুর ভেতর! তারপরও... তারপরও কেন ছায়া হয়ে থেকে গেলো আমাদের দুজনের ভেতরে!" তার শেষ কথাগুলি বিলাপের মতো শুনাচ্ছিল!
বিদ্ধস্ত সাজ্জাদ দুহাতে মুখ ঢেকে বসে রইলো দীর্ঘক্ষণ।
কখন যেন কারা যেন এসে নিয়ে গেলো কে তাকে; নীরা, শাহেদ বলতেও পারবেনা।পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে পরস্পরের হাত আকড়ে ধরে রেখেছে তারা।
রুনীই এসে কথা বললো প্রথম।
"অনু আপুর কথা ওর কাজিন সুমীর কাছেই প্রথমে জেনেছিলাম। সুমী আমার ক্লাশমেট। আমরা একসাথে ক্রিমিনালোজির উপর পড়ছি। শেষের দিকে সাজ্জাদ ভাই এর সিজোফ্রোনিয়া মতোন হয়ে গেছিল। হঠাৎ হঠাৎ অস্থির হয়ে পড়তেন; যাকে তাকে শত্রু মনে করতেন। আবার ঠিক হয়ে গেলে, মনে করতে পারতো না কিছুই। হ্যালুসিন্যাশনে ভুগতেন খুব। শাহেদ ভাই, তুমি যখন ফোন করে অনু আপুর সাথে কথা বলেছিলে; তার আগেই সুমীর কাছে আপু ফোন করেছিল সাহায্য চেয়ে।"
শাহেদ মাথা নাড়লো,"হ্যাঁ, মনে হয়েছিল, ও খুব ভয় পেয়েছে। আমি কথা ভালো করে বলার আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল! চা- বাগানে যখন পৌছালাম, তখন অনেক খুঁজেও তাদের পাইনি। পরে যখন পেলাম, তখন অনু ....."
বাস্পারুদ্ধ হয়ে আসলো তার গলা। অনুকে ফিরিয়ে দেবার পর থেকে নিজের কাপুরুষতাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারেনি সে। চিরকালই ভীরু থেকে গেলো!
রুনী একটু আনমনা হয়ে পড়লো। সাজ্জাদকে পুলিশি পাহারায় সাইক্রিয়াটিস্ট কেয়ারে রাখা হবে আপাততো। সুমীকে দেয়া কথা সে রেখেছে। সাজানো নাটকের ঘটনায় আসল ব্যাপারটাও বের হয়ে আসলো। এবার হয়তো নীরা আপু আর শাহেদ ভাই আরেকটু সহজ হতে পারবে নিজেদের নিয়ে।
আর সে নিজে? ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্ন দেখেনা আর; তবুও বুকের ভেতর থেকে জমে উঠা দীর্ঘশ্বাসকে থামাতে পারলো কই?!
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:০০
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×