somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁকা- গল্প (দ্বিতীয়াংশ)

১২ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্ল্যানচ্যাটের কথায় শাহেদ কিছুটা গাইগুঁই করছিল। ক্ষীণ কন্ঠে দু একবার আপত্তিও করলো। কিন্তু নীরার আগ্রহের তোড়ে তা চাপা পড়ে গেলো।
অমাবস্যার রাতে চাঁদ না থাকলেও ধূলামুক্ত ঝকঝকে মেঘহীন আকাশে তারাগুলি প্রাণপণে আলো বিলিয়ে যাচ্ছে। খোলা আকাশের কাছাকাছি এসে, নীরার উপরও যেন কিছুটা তারল্য ভর করেছে। ডিনারের সময় রুনি আর সাজ্জাদের কথার ফাঁকে কয়েকবার ফোঁড়ন কেটে কিছুটা রসিকতারও চেষ্টা করছিল। তবে তারা দুজন সময়টা বেশ উপভোগ করছিল। ব্যাপারটা কেন জানি শাহেদের ভাল লাগলো না।
আজকে অনুকে তার খুব মনে পড়ছে।
গা থেকে ছাত্রত্বের গন্ধ তখনও যায়নি। চিরকাল ভীরু মনের শাহেদের অনুকে ফিরিয়ে দিতে খুব বেশী ভাবতে হয়নি। সে অনুকে বোঝানোর খুব চেষ্টা করছিলো, যাতে অ্যাবরশন করে ফেলে। কিন্তু অনুর এক কথা। তাদের ভালবাসার প্রথম চিহ্নকে হারিয়ে যেতে দিবে না। শাহেদ চলে গিয়েছিল তার মফস্বলের শহরে। অনু আর কোন যোগাযোগ রাখেনি। পরে সে জানতে পারে, সাজ্জাদের সাথে অনুর বিয়ের কথা। পরিবারের সবার তীব্র আপত্তিকে উড়িয়ে দিয়ে সাজ্জাদ ঠিকই দাড়িয়েছিল তার ভালোবাসার পাশে।

"শাহেদ ভাই, ভয় পাচ্ছো না তো?" -রুনির গলায় কি হালকা শ্লেষের সূর?
"এই সব ছেলেমানুষীতে আবার ভয়?!!"- শাহেদ বিব্রতভাব কাটানোর চেষ্টা করলো হালকা হাসি দিয়ে।
নীরাও হাসলো। তবে তার গা কিন্তু একটু ছম ছম করছিল।
যে রুমটায় তারা বসেছে, সেটা আসলে স্টোররুম। বাড়ির পেছন দিকটায়। কখনো অতিরিক্ত অতিথী থাকলে, এখানে ঠাঁই হয়। সারা বছর বন্ধ থাকেই বলেই হয়তো কেমন যেন একটা ভ্যাপসা গন্ধ। একটি মাত্র দরজা, জানালা। রুনি সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে।
উইজ্যা বোর্ডকে ঘিরে বসেছে চারজনে। রুনি, শাহেদ আর সাজ্জাদের মাঝখানে। সে বিড়বিড় কিছু একটা পড়ছিল। তার হাত দ্রুত নাড়াচাড়া করছে বোর্ডের উপর। মোমের আলোর প্রসারিত ছায়া পড়েছে কাঠের দেয়ালে। মৃদু নাড়াচাড়ার ভেতর দিয়ে ছায়াগুলি যেন মানুষগুলির অবয়বের বাইরেও কিছু একটা সংকেত দিচ্ছে। পাড়াগাঁয়ের এই সময়টা চারদিক প্রায় নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে তীক্ষ্ণ তানে ভেসে আসছিল শার্দুলের আওয়াজ। দুঃস্বপ্ন দেখলে নাকি কুকুরগুলি এভাবে কাঁদে। হঠাৎ কোথাও কাঁদতে শুরু করলো শকুনের শাবক। একেবারে মানব শিশুর কান্না!
রুনির গা থেকে একটা খুব চেনা সৌরভ ভেসে আসছিলো।
সাজ্জাদ কিছুটা আনমনা হয়ে পড়লো।
বিয়ের পরপর তিনটা মাস খুব কষ্টে গেছে তাদের; সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো এই সম্পর্ক থেকে। তবে ভালবাসার সেই প্রহরগুলি আজো জ্বলজ্বল করে তার স্মৃতিতে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দুজন মানুষ ছিল মনে হয় তারা; অন্তত সে ছিল!
হঠাৎ পড়ে গিয়ে অ্যাবরশনের পর থেকেই একটু একটু রঙ বদলাতে শুরু করে সবকিছু। অনু সন্দেহ করতে থাকে সাজ্জাদকে। তখন তারা থাকতো এই চা বাগানে। পরের একটা বছর খুব দুঃসময় গেছে। অনুর প্রায় মাথা খারাপের মতো অবস্থা হয়ে যায়। সবাইকে সন্দেহ করতে থাকে তার দূর্ঘটনার জন্য। বার বার বলার পরও কাউন্সিলিং এর জন্য যেতে রাজী হয়নি। বরং সাজ্জাদই দুবার পরামর্শ নিয়ে এসেছে সাইক্রিয়াটিস্টের কাছ থেকে। তারপর সেই অভিশপ্ত রাত। একটু চমকে গেলো সাজ্জাদ স্মৃতিটা মনে করে। সেদিনও ছিল অমাবস্যার রাত।
সন্ধ্যার পর থেকেই খুব অস্থিরতা দেখাচ্ছিল অনু। বিকেলে কার সাথে যেন দীর্ঘ ফোনালাপ করছিল। সাজ্জাদের শরীরটা ঠিক ভাল ঠেকছিল না সেদিন। কেমন যেন একটা ঘোর ঘোর লাগছিল। মাঝে মাঝে চোখে বিভ্রম হচ্ছিল। একবার মনে হলো শাহেদকে দেখলো বাগানের কোথাও।
শাহেদ?! এখানে, এসময় ?! সে তো স্টেট্‌স এ থাকার কথা। পই পই করে খুঁজেও আর দেখলো না। কেন যেনো খুব রাগ হচ্ছিল অকারণে। এর উপরে আবার অনুর অকারণ অস্থিরতা। রাতে তারা কেউ কিছু খেলোনা। কাজের লোকগুলিও ঝগড়ার অজানা আশংকায় বিদায় নিল দ্রুত। বাগানে পায়চারী করে ঘরে ঢুকার আগে আবার দেখলো শাহেদকে! এবার রুম থেকে বের হয়ে যেতে স্পস্ট দেখা গেলো।
চিৎকার করে ডাক দিল সে অনুকে। দিশেহারার মতো খুঁজছিলো তাকে। এরপর আর কিছু বলতে পারেনা সে। সকালে যখন অনুর মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেলো পাহাড়ের ঢালে, তখন সাজ্জাদকে প্রায় মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করা হলো ঝোপে আটকে থাকা অবস্থায়। অনুর সুইসাইড এটেম্প্ট ঠেকাতে গিয়ে মরতে বসেছিল সাজ্জাদও। নিজের চোখকে অবিশ্বাস না করলেও শাহেদকে দেখার ব্যাপারটা কাউকে জানায়নি সাজ্জাদ।

ধূপের গন্ধে বর্তমানে ফিরে এলো সে।
বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে এবার ফিসফিস করে কথা বলতে শুরু করলো রুনি।
"আপনি কি এসেছেন? আপনি কি এসেছেন?"
মোম থেকে ধোঁয়ার ক্ষীণ ধারা কুন্ডলি পাকিয়ে উঠছে। ধূপের গন্ধ কেমন যেন একটা মাদকতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। হালকা হিমেল বাতাসের ছোঁয়ায় গা টা একটু শির শির করে উঠলো নীরার।
আবার ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করলো রুনি-
"আপনি কি এসেছেন? আপনি কি.............।"
মাঝপথে কথা থেমে গেলো তার! হাত নড়তে শুরু করলো খুব দ্রুত। উইজা বোর্ডের ইয়েস লেখা বৃত্তে এসে থমকে গেলো আঙুল!
সাজ্জাদ দেখলো মোমবাতির শিখাটা হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে শুরু করলো!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:০২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×