somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমালয়ের বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ এবং পহেলা বৈশাখ

১১ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনার্সে কূটনীতি কোর্স পড়ার সময় জেনেছি বিদেশের বুকে দেশের অ্যাম্বাসি বা দূতাবাস কেন রাখতে হয়? কিন্তু তাত্ত্বিক সেই জ্ঞানের বাস্তব প্রমাণ পেলাম আজ। একটা দূতাবাস কিভাবে দেশের মানুষগুলোকে এক সুতায় বাঁধতে পারে, দেশেরে সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারে সেটা টের পেলাম আজ। হিমালয়ে ঘেরা ছোট্ট এক শহর কাঠমান্ডু। এই শহরের এক প্রান্তে মহারাজগঞ্জে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি। আজ সেখানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ছিলো।
বাংলাদেশের যে কারো মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে তিনদিন আগেই কেন নেপালে পহেলা বৈশাখ? কিংবা নেপালে কি বাংলা সাল আগে আসে। বিষয়টি আসলে তা নয়। ১৪ এপ্রিলই নেপালে পহেলা বৈশাখ। কিন্তু সেদিন মঙ্গলবার। বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের স্কুল সেদিন খোলা। এ ছাড়া সেদিন কিছু দাপ্তরিক কাজও বোধহয় হবে। তাই শনিবার পহেলা বৈশাখ পালনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি।

আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন শিক্ষার্থী দূতাবাসের সেই পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য গতকাল রাত থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সবাই অপেক্ষায় ছিলাম দারুন এক অনুষ্ঠানের। শনিবার ঘুম থেকে উঠেই আমরা তিনকুনে আমাদের হোস্টেল থেকে রওয়ানা দিলাম দূতাবাসের উদ্দেশ্যে। মেয়েরা লাল পাড়ের শাড়ি, ছেলেদের অধিকাংশই পাঞ্জাবি বা ফতুয়া। সকাল ১০ টায় আমরা সেখানে পৌছালাম।
হিমালয়ের বুকে লাল সবুজের প্রিয় পতাকা আমাদের মন ভরিয়ে দিল। দূতাবাসে ঢুকেই মনে হলো এ যেন ছায়ানটে এলাম। মেয়েরা লাল পাড়ের শাড়িতে। ছোট ছোট মেয়েরাও শাড়ি পরে আছে। বাংলায় চলছে চিৎকার. চেচামেচি, হৈ হল্লা। এ যেন আমাদেরই প্রিয় বাংলাদেশ। ৬০-৭০ জন লোক। আমরা ২১ জন ঢুকতেই যেন পরিপূর্ণ হয়ে গেলো অনুষ্ঠানস্থল। আমাদের দূতাবাসে স্বাগত জানালেন বাংলাদেশের নেপালের দূত ইমতিয়াজ আহমেদ।
কিছুক্ষন পরেই সেই প্রিয় গান এসো হে বৈশাখ এসো এসো দিয়ে শুরু হলো নববর্ষকে স্বাগত জানানো। মঞ্চের শিশু-কিশোরদের সাথে আমরাও গলা মেলালাম। চোখ ভিজে আসছিলো আনন্দে। মনে বাজছিল আমার সেই প্রিয় গান। আমি বাংলায় গান গাই।
বৈশাখের গানের পর কবিতা আবৃত্তি করলেন আজিজ ভাই নামে একজন। ভরাট গলায় তাঁর আবৃত্তি সবাইকে মুগ্ধ করলো। তিনি নির্মলেন্দু গুণের ক্ষেতমজুর কবিতাটি আবৃতি করলেন। এরপর আরো কিছুক্ষন চললো দেশের গান, শুকনো পাতায়.. এই গানের সঙ্গে নাচলো এক কিশোরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২১ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পুরো অনুষ্ঠানকে যেন উৎসবে পরিনত করে দিলো। তাই অনুরোধ এলো আমাদের পক্ষ থেকেও কিছু করার। গান গাইলো আমাদের বিধান দা। আমাদের এই সহপাঠী যে এতো ভালো গান গায় সেটি আমাদের অনেকেরই জানা ছিল না। আরেকটা গান গাওয়ার জন্য দর্শকরা তাকে অনুরোধ করলো। এরপর তিনি একটি বরীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেন। নয়ন মেলে দেখে আমি...
বিধান দার গানের পর আমাদের সঙ্গে থাকা সবচেয়ে সিনিয়র বন্ধু তারেক ভাই উঠলেন মঞ্চে। একের পর এক কৌতুক বলে তিনি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের মন কাড়লেন। অনুষ্ঠানন শেষে তাকেও দেখা গেলো ওইসব সুন্দরী গৃহবধুদের মাঝেই। অনুষ্ঠান চলাকালেই আমার বন্ধু জুয়েলের মাথায় কবিতা রোগ উঠলো। সে সময়েই সে একটা কবিতা প্রসব করলো। কিন্তু কবিতা লিখবে কোথায়? কাগজ কলম নেই। অতপর একজনরে কাছ থেকে কলম যোগাড় করা হলো। কাগজ নেই। অতপর এক সিনিয়র আপুর কাছ থেকে বিশাল এক টিসু্ নেওয়া হলো। তাতেই জন্ম নিলো এক কবিতা। এরপর জুয়েল আমাদের আরেক বান্ধবী সিমকিকে নিয়ে মঞ্চে উঠলো হাসির সেই কবিতা আবৃত্তি করতে। মঞ্চ কাপালো তারাও।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে অ্যাম্বাসাডর মহোদায় নিজেই মঞ্চে উঠলেন গান গাইতে। তার সাধের লাউ গানের সঙ্গে মঞ্চে উঠে গলা মেলালাম আমরা কয়েকজন। দুর্দান্ত এক অনুষ্ঠান শেষে আমরা গেলাম দুপুরের খাবার খেতে। খাবারের আয়োজন দেখে আমাদের আনন্দ আর কে দেখে? গত এক সপ্তাহ নেপালের খাবার খেতে খেতে আমাদের সবাই বিরক্ত। আজকের এই অনুষ্ঠানে খাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি এক সপ্তাহ ধরে। আমাদের সেই অপেক্ষা স্বার্থক হলো।
কি ছিলো না আজকের অনুষ্ঠানে। ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, শুটকি ভর্তা, টমেটো ভর্তা, ডাল ভর্তা, খিচুড়ি, গুরর মাংস, মুরগি, মাছ, পায়েস, দই, মিষ্টি, আঙ্গুর, আপেল, জুস এসবই। আমরা যে যার সাধ্যের বাইরেও পেটপুজো করলাম। জানলাম এসব খাবারই রান্না করে আনা হয়েছে। দূতাবাসের এক এক কর্মকর্তা বাসা থেকে এক একটি আইটেম রান্না করে এনেছেন। রান্নায় হাতের ছোয়া ভালোবাসার ছোয়া ছিল বলেই বোধহয় এতো ভালো লাগলো। অসাধারন এক খাওয়া হলেও একটু আফসোস থেকেই গেলো। ছিল না ইলিশ মাছ। এর বদলে আরো কয়েক পদের মাছ ছিল। জানা গেলো, চেষ্টা করা হলেও দেশ থেকে ইলিশ আনা যায়নি।
খাওয়ার পর ঘন্টাখানেকের জমাট আড্ডা, নানা গল্প আর ছবি তুলে সময় কাটলো আমাদের। দূতাবাসের শিশু কিশোরদের সঙ্গে নানান গল্প করলাম আমরা। তারা অনেকেই অনেকদিন ধরে দেশে যায়নি। কিন্তু দেশ নিয়ে ভালোবাসার কমতি নেই কারোই। অনুষ্ঠান শেষে অ্যাম্বাসেডর মহোদয় আমাদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন। আমরাও উত্তর দিলাম। তাকে খাবারের আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ দিলাম। তিনি বললেন এই খাবারের ঢেকুড় তুলেই যেন আমরা আগামী এক মাস কাটাই। আমরাও হেসে উত্তর দিলাম।
অসাধারন এক স্মৃতি, বিদেশের বুকে দেশর দূতাবাসের অনুষ্ঠান, বাংলাদেশেকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরলাম আমরা আবার হোস্টেলে। একটা দিন স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি হয়ে থাকলো তার নিজস্ব সোর্ন্দর্যে।
এতোক্ষন যারা ছিলেন সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। অনেকদিন পর এবার টিএসসি চত্ত্বরে, রমনা বটমূলে আমারা থাকছি না। এর বদলে ফাগুনের শেষ দিনে আমরা সবাই যাচ্ছি হিমালয়ের পাশে নাগরকোটে। সেখানেই বছরেরে শেষ দিনের সূর্যাস্ত দেখবো আমরা। রাতটা হিমালয়ের পাদদেশে কাটিয়ে পরদিন আমরা নতুন সূর্য দেখবো সেখানেই। ১৪ এপ্রিল এখানেই নেপালিরা তাদের নববর্ষ পালন করেন। দেশের সবাইকে আবারো নতুন বছরের শুভেচ্ছা। জয় হোক বাংলার। জয় হোক বাংলার মানুষের।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:১৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×