somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পনের মিনিটের চলচ্চিত্র নরসুন্দর দেখে ন'মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের মুর্ত চিত্র দেখে ফেললাম

১১ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যথারীতি মী এন্ড সুইটহার্ট গেলাম রাম্বো-৪ দেখতে। দীর্ঘ কিউ এড়াতে দুই-নম্বরী ব্যবস্থা খুঁজে পেয়েছি। সিনেপ্লেক্সের একজন টিকিট রেখে দেবার কথা বলেছিল। কিন্তু কোন এক কারণে সেটা ফেল মারলো। সিরিয়ালে পরবর্তী গন্তব্য ছিল মনপুরা। তারও অবস্থা তথৈবচ। অগত্যা তারেক মাসুদের নরসুন্দর দেখতে গেলাম ফুলার রোড।

বিশাল একটা ব্যানারে নরসুন্দর। একটা ছেলের ছবি। খোচাখোচা দাড়ি। ভাবলাম এই ব্যাটাই বোধহয় নরসুন্দর। ইংরেজী হেডিং "দি বারবারশপ" - একদম খাটি এফডিসি মার্কা। ঠোট মনে হলো পান খাওয়া।

টিকিট কাটতে গিয়ে জিকোর সাথে দেখা। টিকিট কেটে আবার জিকোর সাথে গল্প করতে গিয়ে পরিচয় হলো নরসুন্দর চরিত্র-রূপদানকারীর সাথে। বললো, একটা পার্ফেক্ট স্বল্পদৈর্ঘ্য - যার পনের মিনিট টানটান উত্তেজনায় ভরা।

বৃটিশ কাউন্সিলের হলরুম। মুভি দেখার অনুপযুক্ত ফ্লাট ফ্লোরে শক্ত চেয়ার ও পেছনের দর্শকের অনবরত মাথা এদিকসেদিক করার বিরক্তিকর অনুরোধ পেতে পেতে যখন চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছিলাম বৃটিশকাউন্সিলের তখন শুরু হলো এক টিকিটে দুটো মুভি দেখার প্রথমটা। মুক্তির কথা। তারেক মাসুদের মুক্তির গান শ্রোতাদের প্রদর্শনের অভিজ্ঞতার উপরে ডকুমেন্টারী হচ্ছে মুক্তির কথা। মুক্তির গান ও মুক্তির কথা বিচ্ছিন্নভাবে দেখেছি অনেকবার, কিন্তু বড় পর্দায় দেখার মজাই অন্যরকম। মুক্তির কথা হচ্ছে মৌখিকভাবে সংগৃহিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। দারূণ রোমাঞ্চকর, দারুন সমৃদ্ধ। বিশেষ করে কাঠালতলী গ্রামের সেই বৃদ্ধার কথা যে বলছিলেন শেখ হাসিনা যদি আমাদের গ্রামে আসতে চান অনায়েসে আসতে পারেন। বাস আমাদের বাড়ীর কাছেই থামে। অথবা মুক্তিযুদ্ধের সময় দশবৎসর বয়সী সেই মানুষটার কথা, যে তার গ্রামে একজন রাজাকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় আক্ষেপ করে বলেছিলো - তাহলে কি এইখানে ৯৫ ভাগই রাজাকার না! মুক্তিরকথা ও মুক্তির গান সিনেপ্লেক্সে চলছে না কেন সেটাই আশ্চর্য্যের।

নরসুন্দর নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল। তবে পনের মিনিট শুনে একটু হতাশ হলেও প্রধান প্রোটাগনিস্টের কাছে টানটান উত্তেজনার একটা মুক্তিযুদ্ধের মুভি শুনে আনন্দিতও হলাম। থ্রিলিং টাইপ কোন গল্প নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পটুভূমিতে কোন মুভি দেখি নাই। এবং সেজন্য নরসুন্দর দেখতে বসে মনে হলো, থ্রিলিং বটে, তবে তা মেকিং এর মুনসিয়ানায় চুড়ান্ত - দূর্দান্ত ক্যামেরার কাজ, তারেক মাসুদের বৈশিষ্ট্য যা মনে হলো - ক্ষুদ্র ও সুক্ষ্ম মুভমেন্টকে তুলে ধরা, ভাল লাগলো।

যে ছেলেটি ব্যানারে ঝুলছে সে নরসুন্দর নয়। সে এসেছে দাড়ি কাটাতে। দি ঢাকা হেয়ার কাট বা সেলুন নামে পুরান ঢাকার একটা বিহারী সেলুন। কম্যুনিস্ট ও মুক্তি। পাক হানাদার বাহিনী এসেছে তাকে খুঁজতে। দেয়াল টপকে পালালো। গুলি খেল বাবা। জানে না সে। ছুটতে ছুটতে ঢুকে পড়েছে সেলুনে। চেহারা পাল্টে ফেলবে। বিহারী নরসুন্দর খুরে ধার দিচ্ছে। রাস্তায় টহলরত হানাদারের গাড়ীর আওয়াজ। ত্রস্ত আগন্তুক। রেডিওতে পাকিস্থানের চ্যানেল, উর্দু গান আর মাঝেমাঝে এলান। মুক্তিদের ধরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে পুরষ্কারের ঘোষণা। রাজাকারদের শক্তি বৃদ্ধির আহবান। বারবারশপের মালিকের হাতে উর্দু পত্রিকা। নরসুন্দরদের উর্দু বাতচিত। বাঙালীদের শক্ত দাড়ি কাটার জন্য খুরের ধার বৃদ্ধি। ইংগিতপূর্ণভাবে দাড়ির বদলে গলা কাটার কৌতুক। ওদিকে আগন্তুকের চেহারায় ভীতি স্পষ্ট হয়। খুর যখন ঠিক গলায় স্পর্শ করে তখন রেডিওতে মুক্তিবাহিনী ধরিয়ে দেবার ঘোষণা প্রচারিত হলে আগন্তুক লাফিয়ে ওঠে। রেডিওতে হাত লেগে চ্যানেল পাল্টে স্বাধীন বাংলা অন হয়ে যায়। ওদিকে আগন্তুকের গুলিবিদ্ধ বাবাকে নিয়ে তার মা যায় ঘোষের মেডিসিন হাউসে। ডাক্তার যখন বাবার জখম ব্যন্ডেজ করছিলেন তখন হানাদারেরা এসে হিন্দু ডাক্তারকে ধরে নিয়ে গেলো। এমন সময় বারবারশপে এলো হানাদারবাহিনী। মুক্তি খুঁজছে। দোকানের মালিক উর্দুতে বলে সবাই এখানে বিহারী পাকিস্থানী। হানাদার চলে গেলে মালিক ও আগন্তুকের চোখে চোখে কথা কয়। ফুটে ওঠে ইংগিতপূর্ণ হাসি। বোঝা যায় বারবার শপের মালিক মুক্তিবাহিনীর।

নাটকীয় নির্মাণ, কোনো ডায়লগ নেই পুরো নাটকে। ওহ সরি। আছে। বিহারী নাপিতের ভূমিকায় দুজন কথা বলে, পাক হানাদারবাহিনীর ডায়লগ আছে আর আছে বারবার শপের মালিকের। তবে থ্রিল আছে পুরো মাত্রায়। যতক্ষণ দেখবেন ততক্ষণ আপনাকে মুগ্ধ করেই রাখবে। পনের মিনিটে পুরা মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাসের উত্তেজনা ঘুরে আসা যায় অনায়েসেই।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১২:৫৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×