somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্পট ফিক্সিং, বাজি, বাংলাদেশে আইপিএলের ধ্বংসাত্বক রূপ, আশরাফুল এবং কিছু স্বীকারোক্তি।

২৮ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল রাতে আইপিএল শেষ হয়ে গেছে। জুয়া-বাজি-ফিক্সিং নিয়ে ছয় সপ্তাহ ধরে চেপে রাখা কিছু কথা তাই খোলাসা করা দরকার:



আইপিএলকে কেন্দ্র করে শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রতিটা খেলায় কোটি টাকার বাজি হচ্ছে, এটা এখন আর কারও অজানা থাকার কথা না। মূলধারার দৈনিক বা ইলেকট্রিক মিডিয়ায় অজানা কারণ বশত না এলেও মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়, এটা জানে উপরের মহলও। ডিবি বা ইন্টালিজেন্স বাহিনীরও না জানার কথা না। অথচ সবাই চুপ করে আছে। অবস্থান্তর দেখে একটা পর্যায়ে মনে হয়েছে জুয়া বা বাজি বাংলাদেশে সংবিধান সিদ্ধ হয়ে গেছে!

সে যাই হোক, ভিতরের হাঁড়ির খবর না জানলেও ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি:



অভিজ্ঞতা-১:
আইপিএলের শুরুর দিকে একদিন সেলুনে চুল কাটাতে গেছি। ময়মনসিংহের মোটামুটি নামকরা একটা সেলুন। চুল কাটার একপর্যায়ে হঠাৎ দেখি দু'জন নাপিতের মধ্যে আইপিএল নিয়ে তুমুল আলোচনা। কেন করণ শর্মাকে ওই ওভারটা দেওয়া হলো না। আজাহার মেহমুদকে কেন আগে নামালো না, এইসব। ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা দেখে আগ্রহ নিয়েই শুনলাম। কয়েকটা প্লেয়ারের নাম নিয়ে আলোচনা। করণ শর্মা, গুরকিরাত সিং। 'ইশ করণ শর্মাকে বোলিং দিলে জিতে যাইতো। হোয়াইট একটা ছাগল।' প্রথমে ঠিক ধরতে পারিনি। এরপর কথায় কথায় অমিত মিশ্র, মানপ্রিত গনি আসায় বুঝতে পারি। নিয়মিত ক্রিকেট নিয়ে থেকেও করণ শর্মা, গুরকিরাত সিং নামগুলোর সাথে আমার সেদিনই প্রথম পরিচয়। একজন আরেকজনকে বলতেছিলো, 'গত ম্যাচে ৫৪০০ বাঁশ খাইছি। ১৮০০ তে ১০০০ ছিলো। পুনের ম্যাচে ২৮০০ জিতছিলাম। পরের ম্যাচে জিতলে যদি লসটা পুষাইতে পারি তো একলগে সারিন্দায় যাইবাম।' একজন নাপিত বাজি ধরার নিমিত্তে আইপিএলের অজানা-অচেনা প্লেয়ারের নাম মুখস্ত করে রেখেছে, যেটা তখনও আমি জানি না, ব্যাপারটা ভীষণ বিষ্ময় উপহার দিয়েছিলো। ওইদিন অমিতের বাসা হয়ে ফেরার পথে ক্রিকইনফোতে দেখে নিলাম করণ শর্মা সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের লেগি। ওইদিনই সানরাইজার্সের খেলা থাকায় ফেরার আগে অপেক্ষা করে অমিতের টিভিতে প্রথম করণ শর্মাকে দেখলাম। পুরো ব্যাপারটা বলার পরে একটা কথা বলেছিলাম অমিতকে, 'আচ্ছা এরা করণ শর্মার নাম কপচায়, আমি শিওর, এরা সাকলাইন সজীব বা আরাফাত সানিকে চেনে না।' অমিত বলছিলো, 'কে বলছে? তুই কি ভাবিস আইপিএলে বাজি ধরে আর বিপিএলে ধরে না?'

অভিজ্ঞতা-২:

ডিনারে ডাইনিংয়ে বসে খাচ্ছিলাম। টিভিতে আইপিএল চলছিলো। এক ছোট ভাই কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করলো, 'ভাই কালকের কোলকাতা-ব্যাঙ্গালোরের ম্যাচে কার পক্ষে ধরা যায় বলেন না, আপনি তো ভালোই বোঝেন। ম্যাচ কিন্তু ব্যাঙ্গালোরের মাঠে।' খানিকটা হতচকিত হলেও রয়ে সয়ে বললাম, 'প্রেডিকশন করা গেলে তো খেলারই মানে থাকতো না। আগে থেকে বলা যায় কে জিতবে? টেস্ট হলে তাও অনুমান করা যায় শক্তিমত্তা দেখে। টি-টুয়েন্টি স্রেফ ইম্পসিবল। আমার কথায় বাজি ধরলে নিশ্চিত হারবি। কত ধরিস?' নাছোড়বান্দা কথা প্যাচায়। বলে, 'আমি তো আর হাই-ফাই পাবলিক না ভাই, গরীব মানুষ। ম্যাচ প্রতি দুই-তিন হাজার ধরি। তাও সব ম্যাচে না। আপনি কন, যেইটা কইবেন, ওইটাই ধরমু। আগের দু'টোয় ধরা খাইছি।' শেষমেষ বললাম, 'টস কর, যেইটা উঠবে ওইটা আমার নামে ধরে নিস।'

অভিজ্ঞতা-৩:

আশিষের সাথে রাতেরবেলা খেয়েদেয়ে ফিরছিলাম। আশিষ একটা রেস্টুরেন্ট দেখিয়ে বললো, 'দাদা, ওই যে টেবিলে গোল হয়ে বসা পাবলিকদের দেখছেন, ওরা ওইখানে বসে স্পট ফিক্সিং করে রেগুলার।' জিগাইলাম, 'সিস্টেম কী?' বললো, 'একেকটা ওভার আসে, আর বাজি ধরে এই ওভারে দশের বেশি হবে। আরেকজন বললো দশ রানের কম হবে। লেগে গেলো বাজি। ১০০-২০০ টাকার মত। আবার দেখা গেলো, একজন বললো, এই ওভারে উইকেট যাবে, আরেকজন বললো যাবে না। এটা নিয়ে বাজি। এই ওভারে ওয়াইড বল হবে বা হবেনা এটা নিয়েও বাজি।'

আইপিএলে স্পট ফিক্সিং বা বিশাল অঙ্কের বাজি এখন একটা ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে। আইপিএলের সিজন আসা মানে বাজির সিজন আসা, ব্যাপারটা এরকম হয়ে গেছে গত কয়েক বছর ধরে। ব্যাপারটা বিপিএলে তুলনামূলক কম এক্সপোজ হওয়ার পিছনেও একটা লজিক আছে। বিপিএলে এস্টিমেটেড টাকা সব দল পুরোপুরি খরচ না করায় এক-দুইটা দল বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়। তারা জিতবেই, এটা নিশ্চিত হয়েই মোটামুটি বাজি ধরা যায়। তাই বাজি ধরা বা টাকা বিনিয়োগ কম হয়। এই ব্যাপারটাই সম্ভবত: ঘটেছে এবারের ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস-বরিশাল বার্নার্স বা চিটাগং কিংস ম্যাচে। সবাই ঢাকার পক্ষে বাজি ধরেছে, উল্টো দিকে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের মালিক পক্ষের কেউ কয়েক কোটি টাকা বাজি ধরে বসেছে বরিশাল বার্নার্সের পক্ষে। আর আশরাফুলকে দশ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়েছে ম্যাচটা ছেড়ে দিতে। ব্যাস, ওই একটা-দু'টো ম্যাচ থেকেই মালিকপক্ষ কামিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এটাই ছিলো সম্ভবত: স্ট্রাটেজি। তো যা লিখছিলাম, আইপিএলে সব দলগুলো প্রায় সমশক্তির হওয়ায়, সাথে, জয়-পরাজয়ে বেশি আনসার্টেনিটি থাকায় বাজি ধরার রেশিওটা বিপিএল থেকে আইপিএলে ঢের বেশি। জুয়াড়ি হয়ে যাচ্ছে ছাত্র থেকে নাপিত-রিক্সাওয়ালারাও। লিখলাম না, ওপেন সিক্রেট জেনেও চুপ করে বসে থাকা, এটাই ঘটছে। পিছনে দেড় মাস ধরে চলছে কোটি-কোটি টাকার বাজি-স্পট ফিক্সিং। এগুলোর সাথে বিন্দুমাত্র জড়িত না হয়েই এই এক কোনায় বসে এতকিছু আমার সাথে ঘটে থাকলে বাইরে কত কী যে হচ্ছে তা ভাবতেই শিউরে উঠছি। আমি যে জেনেও লিখিনি তার পিছনেও যৌক্তিক কারণ আছে। ফেসবুক-ব্লগকে আজকাল যেমন সিরিয়াসলি নেওয়া হচ্ছে তাতে লেখার সাথে সাথেই এই লেখা ধরে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না, তাই নিশ্চয়তা কী? প্রমান দেখাতে সেলুনে যাবো? তারা অস্বীকার করলে? আমি তো আর রেকর্ডারে রেকর্ড করে রাখিনি। এসব হ্যাপা পোহানোর সাধ এবং সাধ্যি নেই বলেই ছয় সপ্তাহের অপেক্ষার পর লিখছি।

শেষ করার আগে একটা কথা, আশরাফুলের বড় ধরণের ফ্যান হিশেবে লিখছি, আশরাফুলের ম্যাচ ফিক্সিং প্রমানিত হলে চাই ওর বড় ধরণের শাস্তি হোক। সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হোক। আর কখনোই যেন আশরাফুলকে ক্রিকেট ব্যাট হাতে দেখা না যায়। একটা আশরাফুলের জন্য যাতে পরবর্তীতে আরও একাধিক আশরাফুল তৈরি না হয় বাংলাদেশে সেটা নিশ্চিত করতে হবে বিসিবিকে। বিপিএল বন্ধের কথাও শুনছি। আমি টি-টুয়েন্টি তেমন ভক্ত না, তবু বলছি, মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে ফেলাটা কোনো সমাধান না।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×