এখন রাত ১ টা।আমি হাটছি ফকিরাপুলের পানির ট্যাঙ্কির সামনের ফুটপাথে। ঢাকা শহরের এই সময় মানে অনেক রাত।এই সময় কোন ভদ্রলোকের বাসা থেকে বের হওয়ার কথা না ।এই সময় চোর ছ্যাচড়দের বের হওয়ার সময়।অথবা ইয়াবা খোররা বের হতে পারে।তাদের জন্য এটা একটা ভাল সময়।তারা চোখ-কান খোলা রেখে শিকারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।আমি এখন মজিদ মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে আছি।এত রাতে ঢাকা শহরে চায়ের দোকান খোলা থাকার কথা না।কিন্তু মজিদ মিয়া তার চায়ের দোকান খুলে ঠিক একটার সময়ই।মজিদ মিয়া তার দোকান খুলছে।এমন সময় আমাকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠল।
আরে হিমু ভাইজান আপনে?
কি ব্যাপার মজিদ মিয়া কেমন আছ?
খুব ভাল আছি ভাইজান।আপনেরে দেখমু এইটা আমার কেন জানি মনে হইতাছিল।আল্লায় যে আপনেরে মিলাইব কে জানত আলহামদুলিল্লাহ।
মজিদ মিয়ার সাথে পরিচয় আমার ২ বছর আগে।তখন মজিদ মিয়া ঠেলা গাড়ি চালাত। তার ছেলে সোলায়মান হটাত হারিয়ে গিয়েছিল।ঐ সময় বাদলের বাবা মানে আমার ফুপাজান আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল।ফুপা আমাকে বলল হিমু বাইরে একটা ঠেলা গাড়ি আছে।তুমি এই মুহূর্তেই আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবা।
আমি যেন কোন দিন তোমাকে আমার বাসায় না দেখি।যদি তোমাকে আমি দেখি তাহলে আমি আমার লাইসেন্সকৃত পয়েন্ট টু টু বোরের রিভলবারের ছয়টা গুলি তোমার মাথায় করব।
উত্তেজিত মানুষের সাথে কথা না বাড়ানোই ভাল।
আমার বাবা তার পুত্রের জন্য লিখেছিলেন-"উত্তেজিত মানুষ আর রাস্তার নেড়ি কুত্তার মধ্যে তুমি কোন পার্থক্য করিতে পারিবেনা।সর্বদা তাহাদের নিকট হইতে দূরে থাকিবে"।ঠেলা গাড়িতে থাকার অবস্থায় মজিদ মিয়া বলল যে তার পুত্র হারানোর কথা বলল।আমি বললাম মজিদ মিয়া তোমার ছেলে এখন চিটাগাং রেল স্টেশনে আছে।মজিদ মিয়া বলল আমার লগে মশকরা করেন?
নামেন আমার গাড়ি থাইকা।আমি বললাম এখনি আমাকে নামিয়ে দিবা?মজিদ মিয়া কিছু না বলে গাড়ী ঠেলতে লাগল।আমি আমার মেসে নামলাম।মেস ম্যানেজার জয়নাল ভাই বলল আরে হিমু সাহেব দেখি কই থাইকা আইলেন? পরদিন মজিদ মিয়া এক প্যাকেট মিস্টি হাতে আমার মেসে উপস্থিত।তার ছেলেকে নাকি চিটাগাং রেল স্টেশনে পাওয়া গিয়েছে।আমার পায়ে কদমবুসি করল।মজিদ মিয়ার ধারণা আমি একজন ফেরেশ্তা।এই তার সাথে আমার পরিচয়।
আমি মজিদ মিয়াকে বললাম -মজিদ মিয়া আমাকে এক কাপ চা দাও দেখি।
-বসেন হিমু ভাই।মালাইর চা আপনার লাইগা।বিস্কুট দিমু?ইন্ডিয়ান বিস্কুট।আমার ছোট শালা ইন্ডিয়া গেছিল।আমি এইডা বেচি না।তয় দোকানে আইনা রাখছি। হিমু ভাই দিমু?
-দাও
-সিগারেট দেই?
-দাও।
আমার কাছে কিন্তু পয়সা নাই।আজকে কিছু পাইবা না।
মজিদ মিয়া জিহবায় কামড় দিয়া বলল কি কন হিমু ভাই?আপনের কাছ থাইকা পয়সা নাওয়ার থাইকা আমার ২ গালে ২ টা চড় বসাইয়া দেন ।
আমি চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে চা খাচ্ছি।বিস্কুটটা আসলেই মজার।
আজ রূপার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।রূপার হাসব্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।আমেরিকা থাকে।আমার কি মন টা খারাপ?রূপার বিয়ের হওয়ার জন্য?আমার তো মন খারাপ হওয়ার কথা না।
আমার বাবা আমার জন্য লিখে গিয়েছেন" মন খারাপ হইল অত্যন্ত নিচু স্তরের মানুষের জন্য।বতসো তোমার জন্য নহে।"রূপাকে আজ আমাদের মেস থেকে ওকে ফোন করেছিলাম।ফোন ধরলেন ওর বাবা।আমি বললাম আমি রূপার মামা শশুর।রূপার সাথে একটু কথা বলব।রূপা ভয়ে ভয়ে ফোনে বলল
-হ্যালো
নতুন বিবাহিত মেয়েরা এমনিতেই একটু ভয়ের মাঝে থাকে।
আমি বললাম রূপা কেমন আছ?
-ভাল আছি।ফোন করেছ কেন?
-নব বধূর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হল।
-আজকে এসো বাসায়?
-অবশ্যই আসব।কি আনব তোমার জন্য?হীরার নেকলেস?
-ধূর! ফাজলামো কর না।তুমি আসলেই আমি খুশি হব।
-তোমরা হানিমুন কথায় করতে যাচ্ছ?
-তুমি আস সব বলব।
-বলে ফেল কোথায় যাচ্ছ?
-আমরা মরিশাস যাচ্ছি।
আমি ফোনের লাইন কেটে দিলাম।রূপার মনের মাঝে এক ধরণের অস্থিরতা হবে এখন।মানুষ মাত্রই অস্থির।রূপা এখন আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে ।আমি জানি।অপেক্ষার মাঝে এক ধরণের আনন্দ আছে।আমি আজ সন্ধ্যায় ওর বাসায় যাইনি।বেচারী অনেক কস্ট পাবে আমি জানি।
প্রথম খন্ড এখানে সমাপ্ত
চলবে