somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমুর গল্প-১

০৩ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন রাত ১ টা।আমি হাটছি ফকিরাপুলের পানির ট্যাঙ্কির সামনের ফুটপাথে। ঢাকা শহরের এই সময় মানে অনেক রাত।এই সময় কোন ভদ্রলোকের বাসা থেকে বের হওয়ার কথা না ।এই সময় চোর ছ্যাচড়দের বের হওয়ার সময়।অথবা ইয়াবা খোররা বের হতে পারে।তাদের জন্য এটা একটা ভাল সময়।তারা চোখ-কান খোলা রেখে শিকারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।আমি এখন মজিদ মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে আছি।এত রাতে ঢাকা শহরে চায়ের দোকান খোলা থাকার কথা না।কিন্তু মজিদ মিয়া তার চায়ের দোকান খুলে ঠিক একটার সময়ই।মজিদ মিয়া তার দোকান খুলছে।এমন সময় আমাকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠল।
আরে হিমু ভাইজান আপনে?
কি ব্যাপার মজিদ মিয়া কেমন আছ?
খুব ভাল আছি ভাইজান।আপনেরে দেখমু এইটা আমার কেন জানি মনে হইতাছিল।আল্লায় যে আপনেরে মিলাইব কে জানত আলহামদুলিল্লাহ।
মজিদ মিয়ার সাথে পরিচয় আমার ২ বছর আগে।তখন মজিদ মিয়া ঠেলা গাড়ি চালাত। তার ছেলে সোলায়মান হটাত হারিয়ে গিয়েছিল।ঐ সময় বাদলের বাবা মানে আমার ফুপাজান আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল।ফুপা আমাকে বলল হিমু বাইরে একটা ঠেলা গাড়ি আছে।তুমি এই মুহূর্তেই আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবা।
আমি যেন কোন দিন তোমাকে আমার বাসায় না দেখি।যদি তোমাকে আমি দেখি তাহলে আমি আমার লাইসেন্সকৃত পয়েন্ট টু টু বোরের রিভলবারের ছয়টা গুলি তোমার মাথায় করব।
উত্তেজিত মানুষের সাথে কথা না বাড়ানোই ভাল।
আমার বাবা তার পুত্রের জন্য লিখেছিলেন-"উত্তেজিত মানুষ আর রাস্তার নেড়ি কুত্তার মধ্যে তুমি কোন পার্থক্য করিতে পারিবেনা।সর্বদা তাহাদের নিকট হইতে দূরে থাকিবে"।ঠেলা গাড়িতে থাকার অবস্থায় মজিদ মিয়া বলল যে তার পুত্র হারানোর কথা বলল।আমি বললাম মজিদ মিয়া তোমার ছেলে এখন চিটাগাং রেল স্টেশনে আছে।মজিদ মিয়া বলল আমার লগে মশকরা করেন?
নামেন আমার গাড়ি থাইকা।আমি বললাম এখনি আমাকে নামিয়ে দিবা?মজিদ মিয়া কিছু না বলে গাড়ী ঠেলতে লাগল।আমি আমার মেসে নামলাম।মেস ম্যানেজার জয়নাল ভাই বলল আরে হিমু সাহেব দেখি কই থাইকা আইলেন? পরদিন মজিদ মিয়া এক প্যাকেট মিস্টি হাতে আমার মেসে উপস্থিত।তার ছেলেকে নাকি চিটাগাং রেল স্টেশনে পাওয়া গিয়েছে।আমার পায়ে কদমবুসি করল।মজিদ মিয়ার ধারণা আমি একজন ফেরেশ্তা।এই তার সাথে আমার পরিচয়।
আমি মজিদ মিয়াকে বললাম -মজিদ মিয়া আমাকে এক কাপ চা দাও দেখি।
-বসেন হিমু ভাই।মালাইর চা আপনার লাইগা।বিস্কুট দিমু?ইন্ডিয়ান বিস্কুট।আমার ছোট শালা ইন্ডিয়া গেছিল।আমি এইডা বেচি না।তয় দোকানে আইনা রাখছি। হিমু ভাই দিমু?
-দাও
-সিগারেট দেই?
-দাও।
আমার কাছে কিন্তু পয়সা নাই।আজকে কিছু পাইবা না।
মজিদ মিয়া জিহবায় কামড় দিয়া বলল কি কন হিমু ভাই?আপনের কাছ থাইকা পয়সা নাওয়ার থাইকা আমার ২ গালে ২ টা চড় বসাইয়া দেন ।
আমি চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে চা খাচ্ছি।বিস্কুটটা আসলেই মজার।
আজ রূপার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।রূপার হাসব্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।আমেরিকা থাকে।আমার কি মন টা খারাপ?রূপার বিয়ের হওয়ার জন্য?আমার তো মন খারাপ হওয়ার কথা না।
আমার বাবা আমার জন্য লিখে গিয়েছেন" মন খারাপ হইল অত্যন্ত নিচু স্তরের মানুষের জন্য।বতসো তোমার জন্য নহে।"রূপাকে আজ আমাদের মেস থেকে ওকে ফোন করেছিলাম।ফোন ধরলেন ওর বাবা।আমি বললাম আমি রূপার মামা শশুর।রূপার সাথে একটু কথা বলব।রূপা ভয়ে ভয়ে ফোনে বলল
-হ্যালো
নতুন বিবাহিত মেয়েরা এমনিতেই একটু ভয়ের মাঝে থাকে।
আমি বললাম রূপা কেমন আছ?
-ভাল আছি।ফোন করেছ কেন?
-নব বধূর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হল।
-আজকে এসো বাসায়?
-অবশ্যই আসব।কি আনব তোমার জন্য?হীরার নেকলেস?
-ধূর! ফাজলামো কর না।তুমি আসলেই আমি খুশি হব।
-তোমরা হানিমুন কথায় করতে যাচ্ছ?
-তুমি আস সব বলব।
-বলে ফেল কোথায় যাচ্ছ?
-আমরা মরিশাস যাচ্ছি।
আমি ফোনের লাইন কেটে দিলাম।রূপার মনের মাঝে এক ধরণের অস্থিরতা হবে এখন।মানুষ মাত্রই অস্থির।রূপা এখন আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে ।আমি জানি।অপেক্ষার মাঝে এক ধরণের আনন্দ আছে।আমি আজ সন্ধ্যায় ওর বাসায় যাইনি।বেচারী অনেক কস্ট পাবে আমি জানি।

প্রথম খন্ড এখানে সমাপ্ত
চলবে
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×