somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভারত ভ্রমণ: দ্বিতীয় পর্ব-বেনাপোল টু কলকাতা

০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝ রাতে দেখি পিঠে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে ,তাকিয়ে দেখি আমার এক দোস্ত। ও ফিস ফিস করে বল্ল ‘আয় বিড়ি খায়া আসি’।দেখলাম বাস থেমে আছে,আমরা নদীর মাঝখানে,বাস ফেরীর ওপর দাড়ানো।আমার পাশের সীটেই স্যার আর ম্যাডাম।ম্যাডাম গুজরাটের মেয়ে,ভালোই বাংলা বলেন।স্যারের সাথে পি.এইচ.ডি করতে গিয়ে পরিচয়।বিয়ের পর ম্যাডাম বাংলাদেশে চলে আসেন।পরে আমাদের ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেন।
বাস থেকে নেমে দেখি আরো অনেকে দাড়িয়ে।বাইরে তাকিয়ে নদী দেখছে।আমরা একদম ফেরীর ওপরের তলায় চলে গেলাম।রাতের ফেরী, ঠান্ডা বাতাস,সিগারেট দারুন উপভোগ্য হয়ে ওঠে।এ সময় জীবনটাকে ভারী ভালো লাগতে থাকে।
ও একটা কথা ,সিগারেট খেকোরা যথেষ্ট পরিমানে সিগারেট নিয়ে যাবেন,ইন্ডিয়ায় সিগারেটের কিন্তু মেলা দাম।অনেক জায়গায় আপনার প্রিয় ব্র্যান্ড টাকা দিলেও মিলবেনা।
বাসে উঠে দেখি মেয়েরা চেঁচাচ্ছে সমানে।আমাদের সাথে তিনটা মেয়ে।ব্যাপারটা কাছে যেতেই বোঝা গেল।বাসে প্রচুর তেলাপোকার বাচ্চা,অন্ধকার থাকায় কেউ খেয়াল করেনি।আমাদের দলনেতা পেছন দিক থেকে হুঙ্কার দিল‘ডাক সুপারভাইজার রে’।জানেন কোথাও বের হলে আমাদের এই দোস্ত নিজেকে নেতা ভাবা শুরু করে।আমরা অবশ্য থামিয়ে দিইনা,‘খেটে মরুক শালা’।
সুপার ভাইজার স্প্রে নিয়ে হাজির!তার মানে এটা নিয়মিত উপদ্রব।‘আর বলবেন না বস এগুলা কোন মতেই তাড়ান যাচ্ছেনা’-তার মুখে অসহায়তার ছাপ,‘অনেক চেষ্টা করছি আমরা’।
তেলাপোকার যন্ত্রনা মাথায় নিয়ে দ্বিতীয়বার ঘুমিয়ে পড়লাম।
খুব ভোরে বাসটা বেনাপোলের শ্যামলীর কাউন্টারে এসে দাড়ালো।এই বাসটা আর ওদিকে যাবেনা।সীমান্তের ওপাড়ে আমাদের জন্য শ্যামলীর ভারতীয় বাস অপেক্ষা করবে। বাইরে তখন সামান্য কুয়াশা।ভোরের আলো ফুটছে।
শ্যামলী পরিবহণের মাইক্রোবাসে করে আমরা সীমান্তের দিকে রওয়ানা হলাম।পাঁচ সাত মিনিটের ভেতর বেনাপোল বর্ডারে এসে নামলাম।নেমেই দেখলাম মানুষের বিশাল লাইন।বর্ডারে আনুষঙ্গিক কাজ সেরে আমরা লাইনে দাড়ালাম।বাংলাদেশ থেকে এত মানুষ ভারত যায়! অবাক না হয়ে পারিনি।শুনলাম এদের বেশির ভাগ লোক নাকি যায় ব্যাবসা আর চিকিৎসার জন্য।একটু পরেই ব্যাগ চেকিং শেষে এসে দাড়ালাম যে স্থানে সেটি ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’।
‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে’ এসে অদ্ভুত অনুভূতি হল।সরু একফালি জায়গা,দুই পাশে দুই দেশ মাঝখানে আমরা।ইন্ডিয়ার গেটে দেখলাম বিশাল ভুড়িয়াল বি.এস.এফ।এখানেও লাইন।বাংলাদেশের গাইড হাত নেড়ে বিদায় নিল।ঢুকে পড়লাম ইন্ডিয়ায়।
ঢুকেই বাংলাদেশের দিকে তাকালাম।কেমন যেন বুকের ভেতর ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।ওই তো আমার দেশ মাত্র কয়েক গজ দুরে।ফিরতে পারবো তো ফের।কত মানুষই তো ফেরেনা! বাইরে গেলেই দেশের প্রতি ভালোবাসা বোঝা যায় হয়তো!
মাফ করবেন কিছুটা ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম।
আবার ইন্ডিয়ার কাস্টমসে চেকিং,তারপরেই ওপাশের হরিদাশপুর বর্ডার।আমরা ফের ওখানকার শ্যামলীর কাউন্টারে।
এখানে কাউন্টার থেকেই ডলার ভাঙাতে পারেন।আমরা অল্প কিছু ভাঙিয়ে নিলাম।এখানে আমাদের কোলকাতার গাইড সঞ্জুদার সাথে দেখা হল।তিনিই আমাদের খুঁজে নিলেন।ছোটখাটো মানুষ,চল্লিশের মত বয়স(সঞ্জুদা নিজে না বল্লে সেটা বোঝা একদম অসম্ভব),দারুন সুপুরুষ। আপনাদের বলে রাখি কোলকাতার মানুষদের ব্যাপারে আমার একটা নেতিবাচক ধারনা ছিল,তবে সঞ্জুদার সাথে পরিচয়ের পরে সে ভুল আমার ভেঙেছে (ভুল সবই ভুল)।
তারপরে আবার বাস।শ্যামলীর এই বাসগুলো ভারতে টাটার তৈরী। আমরা ভেবেছিলাম বর্ডার পেরোলেই বুঝি কলকাতা।অথচ সে অনেক দুর ,গাড়ি চলছে তো চলছেই।মাঝখানে এক জায়গায় গাড়ি থামলো।সেখানে বিস্বাদ লুচি আর শব্জি খেলাম।আর সবাই সমানে ছবি তুলে যাচ্ছে,কখনো ভিডিও ক্যামেরা,কখনো ডিজিটাল ক্যামেরায়।বান্ধবীরাও বিভিন্ন স্টাইলে,বিভিন্ন ভঙ্গিতে,হাহা হিহি করতে করতে অজস্র ছবি তুলছে।একটু পর পরই ক্যামেরার ঝিলিক।আমাদের মত বাসের লোকরাও নিশ্চয় বিরক্ত।একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, আমরা অনেক দুর পর্যন্ত মোবাইলের নেটওয়ার্ক পেয়েছি,বাড়িতে কথা বলেছি।
আবারো বাস।এখানকার চারপাশের দৃশ্যপট বাংলাদেশের যে কোন মফশ্বল শহরের মতো, অধিকাংশ সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা।আমরা সবাই হুমড়ি খেয়ে সাইনবোর্ড পড়ছিলাম।
ঠিক দুপুর দেড়টায় কলকাতার মার্কুইস স্ট্রীটে এসে আমরা থামলাম।যাক বাবা এসে পড়লাম শেষে।হোটেল কাছেই।হোটেল প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল।ব্যাগ বোচকা নিয়ে ছুটলাম সেদিকে।
(চলবে.....)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৩:৫০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×