somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধপরাধীদের বিচার

০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধপরাধীদের বিচার

মার্চ মাস আসলেই আমি একটা বিষয় খুব করে লক্ষ্য করি দেশের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম কিভাবে জেগে ওঠে।পত্রিকাগুলোতে থাকে স্বাধীনতার কথা,যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে অনেক রকম কথা।এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তবে এবারই প্রথম মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি যুদ্ধপরাধীদের বিচারটা হবে।ঠিক যখন যুদ্ধপরাধীরা তাদের গায়ের থেকে এ চিহ্নটা ছলে বলে কৌশলে মুছেই ফেলেছে।

আমার বয়স যখন বারো বছর তখনকার একটা গল্প মনে পড়ে গেল এবারের বিচার হওয়া প্রায় নিশ্চিত ভেবে।আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।আমার শরীরের সবচেয়ে গোপন অঙ্গে এক ধরনের পাঁচড়া জাতীয় রোগ দেখা দিলো।এটা এমন একটা বয়স আর এমন একটা জায়গায় যে কাউকে বলতে পারলাম না আমি।দিন যায় আর আমার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ঠিকমতো হাটতেও পারি না আমি।অবশেষে একদিন আমার immediate বড় ভাইকে বিষয়টা জানাই আমি। সে আমাকে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।আমার অবস্থা দেখে ডাক্তার প্রথম যে কথাটা বলেছিলো সেটা হলো ‘একটু দেরি হয়ে গেলো না’। স্বাধীনতার আজ সাঁইত্রিশ বছর পরে যখন যুদ্ধপরাধী পশুগুলো দেশের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে দেশটাকে পঁচিয়ে গলিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে তখন দেশবাসীকে বিচারের প্রত্যাশা দেওয়া হলো,তাই আমার মনেও প্রশ্ন জাগে ‘একটু দেরি হয়ে গেলো না’। তবু আজও যদি এদের বিচার করে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয় তবে দেশের মানুষগুলো আরও একবার মুক্ত হতে পারবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

রাজাকার শব্দটার সাথে আমার প্রথম যখন পরিচয় হয় তখন আমি জানতামই না রাজাকার আসলে কারা।সে সময় রূপকথার গল্পের প্রতি ছিলো অনেক অনেক বেশি টান।তাই ধরেই নিয়েছিলাম রাজার মত কেউ হবে আর কি?এরপর যখন জানতে পারলাম স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিলো তাদেরই একটা দল রাজাকার। তখন থেকেই এসব পশুদের প্রতি জন্ম নেয় ঘৃণা।বোধ করি এদেশের প্রত্যেকটি বিবেকবান মানুষ তাদের আমার মতো ঘৃণা করে। তাদের প্রতি ঘৃণা অটুট থাকলেও সতেরো বছর বয়স পার করার পর আমি জেনেছি আমার প্রথম ধারণার সাথেই এদের মিল খুঁজে পাওয়া যায় বেশি।তারা এদেশে রাজার মতই আছে।এ রাজ্য দখল করেই আছে।এ রাষ্ট্রের শত্রু হয়েও শাসক হয়ে থাকে।আজব এক ব্যাপার স্বাধীনতার পরে জন্মেছি আমি সুতরাং যে আমাকে একজন রাজাকার দেখতে চাইলে হারিকেন নিয়ে খোঁজা উচিত ছিলো সেই আমাকে হয়তো তারই অনুগত হয়ে চাকরি করতে হবে। বিচারটা তাই এদেশের কোটি কোটি মানুষের সাথে বুক মিলিয়ে আমিও চাই। বিচারের নামে যেন জনগণের সাথে প্রহসন না করা হয়।

মার্চ মাস পেরিয়ে গেলো।এখন আর এ বিচার নিয়ে কিছুই হয়তো পত্রিকায় আসবে না। তারা আবার ডিসেম্বর মাসের জন্য অপেক্ষা করবে! তাই ভয় হচ্ছে বিচার কি থেমে যাবে না’কি তা কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলবে! আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি এবার যদি বিচার না হয় তবে সাঁইত্রিশ কেন চুয়াত্তর বছর পরও তা সম্ভব হবে না। তখন মানুষ ভুলেই যাবে এদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার বলে একদল পশু ছিলো যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো!হয়তো তারাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবে!এজন্য যারা এই বিচারের বিষয়টার সাথে জড়িত তাদের কাছে আবেদন বিচারটা যেন থেমে না থাকে। দেশের মানুষ যেন এ বিচারের সমাপ্তি দেখতে পায়।

শাস্তির ধরনটা কেমন হবে সেটা নিয়ে অনেক কিছুই ভাববার আছে।তবে যারা এ বিচারের বিষয়টা নিয়ে আছে তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে হবে। এমন যেন না হয় পাঁচ বছর পরে ঐ সব যুদ্ধপরাধীরাই আবার এদেরকে নিয়েই বিচার শুরু করে। বিচারের বিষয়টা নিয়ে শুধু এটুকুই বলব কোন যুদ্ধপরাধীরাই যেন সাধারন ক্ষমায় রক্ষা পেয়ে না যায়।

যুদ্ধপরাধীদের পাশাপাশি আমি আর একটা বিষয় খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করেছি বাংলাদেশ হওয়ার সাঁইত্রিশ বছর পরেও এদেশের মাটি থেকে পূর্ব পাকিস্তান নামটা যায় নি। ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ যুদ্ধের সময় বুয়েটে ক্লাস হয়েছিলো একথা প্রথম শুনে অবাক হয়েছিলাম বটে কিন্তু কল্পনাও করতে পারি নি তার চেয়ার বেঞ্চের পেছনে আজও EPUET(East Pakistan University Of Engineering And Technology) লেখা থাকবে। কি এক আশ্চর্য ব্যাপার আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি সাঁইত্রিশ বছর হলো কিন্তু বুয়েটের মতো জায়গা থেকেও ‘East Pakistan’ শব্দটা যায় নি। বিষয়টা কারো কোনদিন চোখে পড়ে নি না’কি চোখে পড়েও স্বাভাবিক মনে হয়েছে সেটা বলতে পারি না। কিন্তু যে ‘East Pakistan’ বাহ্যিক ভাবে আজও ঘোরা ফেরা করছে সে যে যুদ্ধপরাধীদের মনের মাঝে ক্ষনে ক্ষনে করূনস্বরে হানা দেয় না একথা বলা কঠিন। আমরা যদি এই হানা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেই তবে পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হবে কল্পনা করা যায়। তাই এদেশের সর্বস্তরের মানুষের সাথে একাত্ম ঘোষনা করে আমিও বলি আমরা যুদ্ধপরাধীদের বিচার চাই এবং অতি অবশ্যই এ বিচারের নামে আমাদের সাথে যেন প্রহসন না করা হয়।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×