somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"অলৌকিক"

৩০ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়দিন আগে বাসায় ফেরার সময় মিরপুর-১ এর বাসস্ট্যান্ড যখন পার হচ্ছিলাম তখন একটা ঘটনা ঘটল। রিকশা ঠিক করার আগে ঠিক ওভারব্রিজের নিচে তরমুজওলা তরমুজ বিক্রি করছিল। তরমুজগুলোর মধ্যে একটা ছোট আকারের তরমুজ পছন্দ হলো। হাতে তুলে টোকা দিয়ে দেখলাম; পাকা মনে হল, ভিতরে লাল হবে এবং যেরকম মিষ্টি চাই সে রকমই হবে বলে ধরে নিলাম। তখন বাজে প্রায় সাড়ে তিনটার মতো, বাইরে খটখটা রোদ, চৈত্রের খরদুপুর যাকে বলে। বাসে বসেই গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছিল। তো যখন তরমুজটা পছন্দ হলো তখন জিঞ্জেস করলাম তরমুজওলাকে, ‘দাম কত?’;
তরমুজওলা বলল, ‘একশত টাকা’।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। তরমুজটার সাইজ ছিল এমন যে একহাতেই পুরোপুরি ধরা যায়। আর ঠিক এরকম সাইজের একটা তরমুজ আমি একসপ্তাহ আগেও নিয়েছি চল্লিশ টাকায়। তাই আমি কিছু না বলে সাথে সাথেই তরমুজটি যথাস্থানে রেখে দিলাম। তখন তরমুজওলা তরিঘরি করে বলল,
‘কি হল স্যার নিবেন না?’
আমি বললাম, ‘এতদামি তরমুজ নেয়ার সামর্থ্য নাইরে ভাই!’
তখন ও বলল, ‘একটা দাম বলেন অন্তত!’
আমি একটু ভেবে বললাম, ‘চল্লিশ টাকা’
তরমুজওলাও একটু ভেবে বলল, ‘ঠিকআছে স্যার, নেন’।
আমি তখন তরমুজওলার হাতে তরমুজটি দিয়ে মানিব্যাগ বের করলাম। যখন টাকা গুনছি, সে সময় তরমুজওলা একটু পরখ করল তরমুজটা। এতক্ষন সে তরমুজটা হাতে নিয়ে দেখেনি। তার এখন কি মনে হলো সে আবার আমাকে বলল, ‘এ তরমুজ চল্লিশটাকায় দেয়া যাবে না’। বলে সে মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকাল।
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। মনটা খুব খারাপ হলো। একবার নিতে বলে আবার মানা করল কেন? অনুযোগ করতে ইচ্ছে হলো। কিছুই বললাম না। নিজেকে খুব ছোট মনে হলো। একটা চাপা অভিমান বুকের ভেতর ফুলে ফুলে উঠতে চাইলো। তবুও কিছু বললাম না। সোজা একটা রিকশা নিয়ে বাসার দিকে রওনা করলাম।
তার একদিন পর আবারও ঠিক ঐ জায়গা দিয়ে যখন একই সময়ে বাসায় ফিরছি, হঠাৎ দেখি সেই তরমুজওলা কোত্থেকে যেন এসে উপস্থিত। তার চুল উস্কখুস্ক, জামার বোতাম দুইটা খোলা, দেখে অনেকটা উদ্ভ্রান্তের মতো মনে হলো। সে দৌড়ে এসে আমার সামনে এসে হাত জোড় করে বলল, ‘স্যার আমারে মাফ করেন!’
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম, ‘তোমার কি হয়েছে? আর আমার কাছেই বা মাফ চাচ্ছ কেন?’
সে ভেউ ভেউ করে কেদে বলল, ‘স্যার মনে আছে পরশুদিন আপনে একটা তরমুজ কিনতে চাইছিলেন?’
আমি বললাম, ‘হ্যা, মনে আছে!’
তরমুজওলা বলল, ‘আমি আপনেরে তরমুজ দিতে কইয়াও দেইনাই। আপনেরে বিদায় করনের পর থেইক্কা ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত একটা তরমুজও আর বিক্রি হয় নাই। হের পরদিন সকাল থিক্কাও দুপুর বারটা পর্যন্ত বইস্যা ছিলাম, তাও একটা তরমুজও বেচতে পারি নাই। আমার সামনে রাস্তার ঐপাশের দোকান থিকা কাস্টামার আইসা তরমুজ কিনা লয়া যায় কিন্তু আমার কোন বেচা-কিনা নাই। এমন সময় দুপুর বেলা পুলিশে আইস্যা আমাগো ওঠায় দিছে। থানার নতুন ওসি আইছে হ্যার লাইগ্যা’।
এই বলে একটু থেমে ও নিশ্বাস নিল, তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘স্যার দয়া কইরা আপনার ইচ্ছা মতো একটা তরমুজ আপনি নিয়া যান! আমারে ক্ষমা করেন স্যার আমারে ক্ষমা করেন!’ এই বলে আবার সে শব্দ করে কান্না শুরু করল।
এঘটনাটার বর্ণনা এখানেই শেষ করছি; তবে, পোস্টটির শেষ পর্যন্ত একটু পড়ুন। এ ঘটনার প্রথম অংশটি মানে, রিকশায় করে বাড়ি রওনা দেয়া পর্যন্ত পুরোপুরি সত্য ঘটনা। কিন্তু এর পরের অংশটি পুরোপুরিই কাল্পনিক; অবাস্তব। ঘটনার নাম দিতে পারতাম ‘এমন যদি হতো’, কিন্তু তা না দিয়ে দিয়েছি ‘অলৌকিক’। কেননা, আমার মতে এরকম ‘অলৌকিক’ ক্ষমতার অধিকারী না হলে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের এ জিম্মি অবস্থা কোনদিন ঘুচবার নয়। আমাদের ছোট ছোট আকাঙ্খাগুলো অন্যকারো ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর হয়ে থাকবে চীরদিন; আর আমাদের শুধু থাকবে কাঠ-ফাটা রদ্দুরে শুষ্ক গলা আর আর্দ্র নেত্র।
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×