somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাবিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী

২৮ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই বিশাল মহাবিশ্বের নগণ্য এক সদস্য আমাদের সৌর জগতের প্রাণশক্তি হলো সূর্য। সূর্যের সমান ছোট এবং বড় অনেক বিলিয়ন নত্র রয়েছে আমাদের ছায়াপথ নামের গ্যালাক্সিটিতে। আর এর প্রাণ কেন্দ্রে রয়েছে ‘রহস্যময় এক দানব’। যা-ই এর কাছে আসুক না কেন মুহূর্তের মধ্যে তা এর মাঝে বিলীন হয়ে যায়। নব্বুই দশকের প্রথম দিকে স্টুয়ার্ড মানমন্দির থেকে তোলা একটি ছবি পর্যালোচনা করা হলে বোঝা যায় এই বিশাল আকৃতির বস্তুপিণ্ড ঘন একটি নত্রকে (স্টার কাস্টার) গ্রাস করে নিয়েছে।
জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা অন্যান্য গ্যালাক্সিগুলোর কেন্দ্রেও একই ধরনের প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞানীরা এই শক্তিশালী দানবগুলোকে ব্লাক হোল বলে সন্দেহ করেছেন। বলার অপো রাখে না যে, বিশাল আকৃতির, বিপুল শক্তিধর এবং অসীম অন্ধকার ব্লাক হোলই হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী।
ব্লাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই প্রবল যে, কোন বস্তু এর আওতায় পড়লে পালিয়ে যেতে পারে না। এমনকি আলোও এর হাত থেকে রেহাই পাবার মতা রাখে না। আর এজন্যেই বোধহয় ব্লাক হেলের রঙ নিকষ কালো।
বছর দশেক আগেও মানুষ মনে করত ব্লাক হোল বিজ্ঞান-কল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু পর্যবেণের পর জানা গেছে, এদের অস্তিত্ব তো আছেই, এরা মহাবিশ্বের অনেক রহস্যের জন্মদাতাও বটে।
কোয়েসার হলো মহাবিশ্বের আর এক বিস্ময়। বহু মিলিয়ন আলোকবর্ষ দুরের নত্রের মত এই জ্যোতিষ্কগুলো তীè আলো বিকিরণ করে। কোয়েসার পর্যবেণ করে জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা বৃহস্পতি গ্রহের ভরের সমান ভরের কিছু জ্যোতিষ্কের আবিষ্কার করেন সেখানে। এগুলোকে মিনি ব্লাক হোল হিসেবে অনুমান করা হয়। ধারণা করা হচ্ছিল এসব অনুমিত খুদে ব্লাক হোলগুলো মহাবিশ্বের অনেক ধাঁধার সমাধান দিতে পারবে।
একসময় বিজ্ঞানীদের একটা মহল মনে করতেন মহাবিশ্বের ৯০ শতাংশই আঁধার বস্তুর (ডার্ক ম্যাটার) সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু কেউ আঁধার বস্তুর সম্মিলিত ভর নির্ণয় করতে পারেননি। সেই বিজ্ঞানীরা এসব আঁধার বস্তুকেই ব্লাক হোল বলে মনে করেন। বর্তমানের জ্ঞান দিয়ে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয় যে ২৫ বছর আগেও ব্লাক হোলের ধারণাটা ছিল পুরোপুরি তাত্ত্বিক। ১৯৭০ এর দশকে মহাকাশে এক্স-রে উৎস খুজে বের করার জন্যে একটি উপগ্রহ উৎপণ করা হয়। এই উৎসটি সিগ্লাস তারকাপুঞ্জে অবস্থিত। এর আগে কোন দ্বৈত তারকা মণ্ডলী থেকে এক্স-রে বিকিরণ হলে সেখানে একটি ব্লাক হোল থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হত।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ব্লাক হোলের উপস্থিতির জন্যেই শুধুমাত্র এক্স-রে নিঃসরিত হয়। এরপর থেকে বিজ্ঞানীরা অনেক ব্লাক হোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে তথ্য পেতে থাকেন। আইনস্টাইনের আপেকিতা তত্ত্বে ব্লাক হোলের মত বস্তু সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। আপেকিতা তত্ত্বে আইনস্টাইন স্থান, সময় ও মধ্যাকর্ষণকে জ্যামিতির হিসাবে সমন্বিত করেছেন। তত্ত্বে উল্লেখ আছে কোন বিশেষ বস্তুর বিপুল ভর, সময় ও স্থানকে বিকৃত তথা বাঁকা করতে পারে, যার ফলে তার আওতাধীন বস্তু তার দিকে বিপুল আকর্ষণে ধাবিত হয়। সময়-স্থানকে বিকৃত করে এবং সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন আলোকে টেনে নিতে পারে এমন বিপুল মাধ্যাকর্ষণ বিশিষ্ট অত্যন্ত ুদ্রাকার বস্তুপিণ্ডকে (অর্থাৎ ব্লাক হোল) কল্পনা করা বর্তমানের জ্ঞান দিয়ে আর অসম্ভব কিছু নয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে স্যার আইজাক নিউটনের আবিষ্কারের পরে মানুষ জানতে পারে একটি নির্দিষ্ট বেগের অধিক বেগে কোন বস্তুকে ছুড়ে দিতে পারলে তা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানকে অতিক্রম করে মহাশূন্যে চলে যেতে পারে। এই এসকেপ ভ্যালোসিটি বা অতিক্রম বেগের মান হলো প্রতি সেকেন্ডে ১১ কিলোমিটার। অর্থাৎ সেকেন্ডে ১১ বা তার বেশি কিলোমিটার বেগে ঢিল ছুড়ে মারতে পারলে তা মহাশূন্যে চলে যাবে। এখন পৃথিবীর ভর সমান রেখে তাকে যদি অর্ধেক ব্যাসার্ধে সংকুচিত করা যায় তবে এই অতিক্রম বেগের মান দাড়াবে সেকেন্ডে ১৫.৬ কিলোমিটার।
আপনি পৃথিবীকে আরও সংকুচিত করতে থাকলে (ভর সমান রেখে) এবং ধরুন শেষে এর আকার দাড়াল একটি বাদামের মত, এ অবস্থায় অতিক্রম বেগে হবে সেকেন্ডে ৩০,০০০ কিলোমিটার অর্থাৎ আলোর গতির সমান। বাদাম আকৃতির পৃথিবীর রঙ হবে কালো। কারণ, এটা কোন আলো বিকিরণ করবে না বরং সব আলো শুষে নেবে। নত্রের মত বড় বস্তুপিণ্ডকে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধে সংকুচিত করলেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।
ত্রিশের দশকে পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট ওপেন হাইম তার এক প্রবন্ধের উপসংহারে লেখেন, যখন কোন নত্রের পারমাণবিক জ্বালানির ভাণ্ডার ফুরিয়ে যায়, নিজের মাধ্যাকর্ষণের চাপে তা চুপসে যাবে, তখন এর উপাদানের ঘনত্ব হবে অবিশ্বাস্য রকম বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিজ্ঞানীরা জানতে পারলেন, বিশালাকৃতি নত্রের পারমাণবিক জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে সুপার নোভার বিস্ফোরণ ঘটে। নত্রের গভীরে পারমাণবিক প্রক্রিয়া এই বিস্ফোারণের সূচনা করে, প্রথমত বাইরের চাপে নত্রের অন্তঃস্ফোরণ (ইমপ্লোশন) ঘটে। এই প্রক্রিয়াটিই নত্রের বাইরের স্তরকে বিস্ফোরিত করে।
১৯৬৭ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিও অ্যাস্ট্রোনমার জোসিলিন বেল একটি নিয়মিত বিরতির বেতার সংকেত সনাক্ত করেন। জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা ধারণা করছিলেন একটি সুপার নোভার চুপসে যাওয়া থেকে এই সংকেতটি আসছে। এর ভর সূর্যের সমান, কিন্তু ব্যাস মাত্র কয়েক কিলোমিটার। এই জ্যোতিষ্কটির পরমাণু ভেঙে সব নিউট্রন মিলে একটি বলের আকার ধারণ করেছে। নিউট্রনের এরকম বলের মত নত্রকে নিউট্রন নত্র বলে। নিউট্রন নত্রের মাধ্যাকর্ষণের মান এত বেশি যে এটি আলোক রশ্মিকে বাঁকিয়ে দেয় এবং মাধ্যাকর্ষণের মান আর একটু বেশি হলে এই নত্র আলোকে শুষে নিতে পারত। এই আবিষ্কারে এটিই অনুমিত হয় যে সুপার নোভার অবশিষ্টাংশ থেকেও সত্যিকারের ব্ল্যাক হোলের জন্ম হতে পারে।
আরও চুপসে যাবার হাত থেকে বাঁচতে হলে নিউট্রন নত্রকে যথেষ্ট পরিমাণ শক্ত হতে হয়। নত্র যত বিশাল হবে এর ভারসাম্যহীনতা হবে তত বেশি, অর্থাৎ তাকে আরও বেশি শক্তপোক্ত হতে হবে। তবে শক্তপোক্ত হবার একটা সীমা রয়েছে। মহাবিশ্বে পূর্ণাঙ্গ কঠিন কোন বস্তু নেই। হিসেব করে জানা গেছে, নিউট্রন নত্রের ভর সূর্যের ভরের তিনগুণের বেশি হলে সেই শক্তপোক্ত হবার সীমানা অতিক্রান্ত হয়।

আপেকিতা তত্ত্বেও মূল সুর অনুসরণ করে নিউট্রন নত্রের সীমার পরও যদি কোন নত্র চুপসাতে থাকে তার নিয়তি অনুমান করা যায়। বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দেন যে মাত্র মাইক্রো সেকেন্ড (সেকেন্ডের দশ ল) সময়ে নত্রটি শূন্য ব্যাসার্ধের একটি অনন্য সাধারণ বস্তুতে পরিণত হতে পারে। যার ঘনত্ব হলো অসীম, এই অবস্থাটিকে সিঙ্গুলারিটি বলা হয়।
নত্রের উপাদান বলতে সকল বস্তু অদৃশ্য হয়ে যাবে, কিন্তু এর অবস্থান থাকবে এমন এক নত্রকে জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞানী জন হুইলার তার নাম রেখেছেন ব্লাক হোল।
নত্রটি অদৃশ্য হয়ে গেল ঠিকই কিন্তু এর মাধ্যাকর্ষণ বিলীন হয়নি। এটি স্পেসটাইম মাত্রায় চলে গেছে। প্রচণ্ড মাধ্যাকর্ষণের টানে যেহেতু আলোক রশ্মিও এখানে অস্তিত্ব হারায়, তাই চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবার পরিণতি মানুষের জানা জ্ঞানে সম্ভব নয়। শুধু একভাবেই ব্ল্যাক হোলে কি হচ্ছে তা জানা সম্ভব, এর মধ্যে প্রবেশ করে। যা প্রকৃত পইে সম্ভব নয়। কারন একবার এখানে ঢুকলে বেরিয়ে আসা অসম্ভব।
ব্লাক হোল যেহেতু কালো, কালো মহাকাশে একে খুজে পাওয়া দুষ্কর , তাই বিজ্ঞানীরা আঙুলকে একটু বাঁকা করেন, অর্থাৎ তারা পরো পদ্ধতি অনুসরণ করেন। যেমন ব্লাক হোল যেহেতু আলো শুষে নেয় সেহেতু এটি নিকটের কোন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক থেকে অবশ্যই আলোক আকর্ষণ করবে, এটি ধরে নেয়া যায়। এটি পর্যবেণ করা একেবারে অসম্ভব নয়। মহাবিশ্বে অনেক পরিচিত যুগল নত্র রয়েছে, যারা একে অন্যের চারদিকে অবর্তিত হয়। এদের একটি যদি ব্লাক হোলে পরিণত হয় অন্যটি সেটির চারদিকে ঘুরতেই থাকে। এরা কাছাকাছি এলে ব্লাক হোলটি জীবিত নত্র থেকে এর উপাদান সমূহ টেনে আত্মীকরণ করতে থাকে। গ্যাস সমূহ যেহেতু ঘুরে ঘুরে ব্লাক হোলে অদৃশ্য হতে থাকে, এগুলোকে ঘূর্ণায়মান চাকতির মত মনে হয়। স্থানান্তরের ঘর্ষণে ভীষণ তাপের উদ্ভব হয়, আর এর ফলে এখানে উচ্চ শক্তির এক্স-রে উৎপন্ন হয়।
সাধারণত ব্লাক হোলের সংস্পর্শে যাই আসুক না কেন, তা এতে মিশে যাবে। এই অতিরিক্ত বস্তু ব্ল্যাাক হোলের ভর বাড়িয়ে দেয় এবং এতে তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আরও বেড়ে যায়। ব্লাক হোলের ুধা কিন্তু অসীম। এটি একটা পুরো নত্রকে ভেতরে টেনে নিতে পারে, এমন কি অন্য একটি ব্লাক হোলকেও।
গুচ্ছ নত্রের (স্টার কাস্টার) অথবা গ্যালাক্সির কেন্দ্রের দিকে খুব সহজেই ব্লাক হোল গঠিত হতে পারে, যদিও কেন্দ্রের দিকে প্রথমে নত্রের জন্ম হবারই কথা। এ জন্যেই বিভিন্ন গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বিশেষ রকম অসামঞ্জস্য দেখা যায়। কোন কোনটিতে আলোর গতিতে গ্যাস উৎপ্তি হয়। কোন কোনটি থেকে শক্তিশালী বেতার তরঙ্গ বা এক্স-রে নির্গত হয়। কখনও কখনও গ্যালাক্সিগুলোর কেন্দ্রে উজ্জ্বলতার অসম্ভব রকম হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর জন্যে দায়ী দানবাকৃতির ঘূর্ণায়মান কিছু ব্লাক হোল। এই সুপার ব্লাক হোলগুলো পাগলের মত বস্তু সাবাড় করতে থাকে এবং ণে ণে তা বিপুল শক্তি বিকিরণ করে। ব্লাক হোলের ঘূর্ণনের জন্যে এসব শক্তি চারদিকে বিচ্ছুরিত হয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি করে, এমনও কিছু নজির রয়েছে। কোন কোন গ্যালাক্সিতে একশো কোটি সূর্যের ভরের সমান ভরের অসংখ্য ব্লাক হোল রয়েছে।
কোয়েসার হলো মহাবিশ্বের আর একটি বিস্ময়। বিশালাকার নত্রের মত এই জ্যোতিষ্ক বিপুল শক্তি বিকিরণ করে। অনেক জ্যোর্তিবিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, এই বিপুল শক্তি বিকিরণের পেছনে ব্লাক হোলের কোন প্রভাব রয়েছে। এটা খুবই সম্ভব যে অধিকাংশ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বিশাল আকৃতির ব্লাক হোল রয়েছে । আর বলাই বাহুল্য অতি সক্রিয় এসব কোয়েসার এবং গ্যালাক্সিগুলোর সক্রিয়তার কারন সম্ভবত ব্লাক হোল।
অনেক বিজ্ঞনী ধারণা করেন, আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই বিশালাকার ব্লাক হোল রয়েছে। অনেক বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা স্যাগিটারিয়াস নামে একটি অদ্ভুত এবং সূক্ষ্ম বেতার তরঙ্গের উৎস সম্পর্কে জানেন। মনে হয় এটি গ্যাসের কুণ্ডলীতে আবদ্ধ একটি বিশাল ব্লাক হোল। এমনটি হলে চারদিকের গ্যাসের ইনফ্রারেড রশ্মিতে উদ্ভাসিত হবার কথা। কয়েক বছর আগে ইফ্রারেড রশ্মির বিকিরণও আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু অবস্থাটি বেশ বিভ্রান্তিকরও বটে। তাই অনেক বিজ্ঞানী বলেন, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি নয়, বরং দুটো ব্লাক হোল রয়েছে।
যে বস্তু ব্লাক হোলে অদৃশ্য হয়ে গেছে তাকে ফেরত পাওয়া আর সম্ভব নয়। এর পরিবর্তে ব্লাক হোলটি ক্রমশ বড় হতে থাকে, আর যতই বড় হয় এর ুধাও তত বাড়তে থাকে। সময়ের সাথে সাথে ব্লাক হোলে তার চারদিকের বস্তু সমূহকে আত্মসাৎ করতে থাকে এবং আরও বড় হতে থাকে। এর ফলে অনেক নত্র এর ভেতরে একসময় অদৃশ্য হতে থাকবে। এমনও হতে পারে, এখন থেকে অজানা বছর পর মহাবিশ্বের সব জ্যোতিষ্ক (আমাদের সৌরজগৎ সহ) কিছু ব্লাক হোলের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যাবে। তাদের ক এক সময় থেমে গেলে তারা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হবে এবং একটি দানবীয় ব্লাক হোলে পরিণত হবে।
এমনও হতে পারে মহাবিশ্ব একসময় নিজের ওজনের চাপেই চুপসাতে শুরু করবে। সব গ্রহ, নত্র, ব্লাক হোল অন্তঃস্ফোটিত (ইমপ্লোশন) হয়ে এক হয়ে যাবে (একে বিগ ক্রাঞ্চ বলে), বিগ ব্যাঙের বিপরীত। এ রকম নিয়তি যদি সত্যি হয় তবে মহাবিশ্ব এক সময় এক বিশাল ব্লাক হোলে পরিণত হবে।
জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের দুটি দল অস্ট্রেলিয়া ও চিলিতে ভূমি ভিত্তিক টেলিস্কোপ ও হাবল মহাকাশ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পৃথিবীর মহাজাগতিক পরিমণ্ডলের কাছাকাছি তিনটি বিশাল আকৃতির ‘ ব্লাক হোল ’ বা কৃষ্ণ গহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন। এর ফলে বিজ্ঞানীদের সামনে যে প্রশ্নটি এখন গুরুত্ব পাচ্ছে তা হলো গ্যালাক্সি সমূহের আগেই ব্লাক হোলগুলোর জন্ম হয়েছে কিনা, যদিও গ্যালাক্সির মধ্যেই ব্লাক হোলের অবস্থান। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ভার্গো ও অ্যারিম নত্র পুঞ্জে এ নতুন তিনটি ব্লাক হোলের অবস্থান জানা গেছে। আমাদের পৃথিবী থেকে এই দুটি নত্রপুঞ্জের দূরত্ব ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি আলোকবর্ষ।
জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীর মহাজাগতিক পরিমণ্ডলের কাছাকাছি ব্লাক হোলগুলোর অবস্থান অস্বাভাবিক নয়। তবে যেটা অস্বাভাবিক তা হলো এর বলয়ের ওজন। এর প্রত্যেকটির বলয়ের ওজন আমাদের সূর্যের বলয়ের চেয়ে ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি গুণ বেশি। এ পর্যন্ত মাত্র ২০ টি ব্লাক হোলের অস্তিত্ব জানা গেছে, এর মধ্যে বেশির ভাগ ব্লাক হোলের বলয় আমাদের সূর্যের বলয়ের চেয়ে বেশ কয়েকগুণ বৃহৎ। গত এক দশক ধরে এই ব্লাক হোল নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে। তবে বর্তমানে অধিকাংশ জ্যোর্তিবিজ্ঞানীই ব্লাক হোলের অস্তিত্ব তত্ত্ব মেনে নিয়েছেন। তবে তাদেও যে প্রশ্নটি নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে তাহলো মহাজাগতিক েেত্র, বিশেষ করে গ্যালাক্সি গঠনের েেত্র এদের প্রভাব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ডগলাস রিচস্টোন আটলান্টায় আমেরিকান জ্যোর্তিবিজ্ঞান সোসাইটির বৈঠকে ব্লাক হোলগুলোর সর্ম্পকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, দূরবর্তী আলোক তরঙ্গের উৎসের কাছাকাছি ব্ল্যাক হোলগুলোর অবস্থান । আলোক তরঙ্গের উৎসগুলো এতই শক্তিশালী যে, সেগুলোর আয়তন আমাদের সূর্যের চেয়ে এক ট্রিলিয়ন গুণ বড় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ড. রিচস্টোন বলেন, এসব দূরবর্তী আলোক তরঙ্গই পরবর্তীকালে গ্যালাক্সিতে অধিকাংশ নত্র রুপ পেয়েছে। তিনি এবং তার সহযোগীরা মনে করেন যে দূরবর্তী আলোক তরঙ্গের উৎসগুলো বর্তমানে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম যুগে অবস্থান করছে। দূরবর্তী উজ্জ্বলতম আলোক যুগের হিসাব কষে তারা বলেছেন, তাদের ধারণা বর্তমানে মহাবিশ্বের বয়স হবে প্রায় একশো কোটি বছর।
ব্লাক হোল আবিষ্কার করতে বিজ্ঞানীরা গ্রাভিটেসনাল মাইক্রোলেনসিং টেকনিক ব্যবহার করেন। এই টেকনিক ব্যবহার করে তারা দুটি কলা আকৃতির উজ্জ্বল আলোকবিন্দু আবিষ্কার করেন, যার আশেপাশেই ব্লাক হোলগুলোর অবস্থান বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।


(সংগৃহীত)



৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×