somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা শৈশব অথবা একটা টাইম মেশিনের আক্ষেপ নিয়ে বড় হচ্ছি প্রতিদিন -২

২৭ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগেরটার লিংক: Click This Link

আমার স্কুল
আমার আনন্দের দিন কাটছিল ভালোই। হঠাৎ একদিন খুব ভোরে আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে জানানো হলো, আজ থেকে স্কুলে যেতে হবে। স্কুল আবার কী? সেখানে কী হয়? এত কিছু না বুঝেই বাবার হাত ধরে স্কুলের পথে পা বাড়াই। স্কুলের নাম মাহমুদাবাদ প্রাইমারি স্কুল। পৃথিবীজুড়ে আমার যতগুলো প্রিয় জায়গা আছে এটা তার একটা। সামনে বিশাল মাঠ। মাঠের শেষে রাস্তা।
আমার স্কুলের প্রথম দিন। মোটেও ভালো লাগছিল না। কিছুক্ষণ থেকেই বের হয়ে গেলাম। কারণ, স্যার আমাকে মেরেছে। আমিও প্রতিবাদী কম না। পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে সোজা বাসায়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাসায় চলে আসায় মায়ের কঠিন জেরা, কেন চলে এসেছিস? আমি ব্যাপক দুঃখবোধ নিয়ে জানালাম, স্যার মেরেছে। হয়তো ভেবেছিলাম মায়ের সহানুভূতি পাব। ফল হলো উল্টো। আমার প্রতিবাদী আচরণকে সামরিক জান্তার মতো ধূলোয় মিশিয়ে মা আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন সোজা স্কুলে হেড স্যারের কাছে। বলা হলো, স্যার মার দিলে স্টুডেন্ট বাড়ি চলে যায় কীভাবে? অপরাধ করলে কোনো মাফ নেই। আপনাদের কাছে তুলে দেয়া হলো। যেভাবে হোক মানুষ করবেন। শুরু হলো এক বিদ্রোহী ছাত্রের স্কুলজীবন। পরের সময়গুলোতে স্যারদের কাছে প্রচুর মার খেয়েছি তবে আর কখনো চলে যাওয়া হয়নি স্কুল ছেড়ে। কারণ ভালেবাসার এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম। লেখাপড়ার ইতিহাস ভালোই ছিল। রোল নম্বরগুলো ৫ এর বাইরে যায়নি ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত। স্যারদের কাছেও ভালো ছিলাম। তারা অসম্ভব মমতা ও স্নেহে আমাকে আগলে রেখেছিলেন স্কুলজীবনের পুরোটা সময়। জীবনের এক অসাধারণ সময় আসে ক্লাস ফাইভে। থানার অন্যতম সেরা ওই স্কুলে ক্লাস ফাইভে ওঠার পর ছাত্রছাত্রীদের আসন বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতো প্রতি বছর। একদল ভালো স্টুডেন্টদের আলাদা করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। উদ্দেশ্য তাদের বিশেষভাবে কোচিং করিয়ে বৃত্তির জন্য প্রস্তুত করে তোলা। সে তালিকায় আমিও পড়ে গিয়েছিলাম। হেড স্যারের রুমের চারদিকে আমাদের বসতে হতো। যাতে সরাদিন আমরা হেড স্যারের নজরে থাকি। আমাদের নজরে রাখা সেই মহান শিক্ষকের নাম, কফিলউদ্দিন পাটোয়ারী। স্কুলের প্রতি শিক্ষদের কি প্রেম থাকে এটা জীবনে একবারই কারো মধ্যে দেখেছি। এই স্যারের মধ্যে। স্যারের এই তালিকায় থাকা ছাত্রদের কিছু এক্সট্রা দায়িত্ব ছিল। এগুলো হলো, সকালে স্কুলে এসে হেড স্যারের সাথে স্কুল ঝাড়ু দিতে হবে। স্কুলে কোনো দপ্তরি ছিল না, তাই ঘণ্টা দেওয়ার কাজটাও ছিল তাদের। আর শেষ কাজটা ছিল স্কুল ছুটির আগে শেষ কাসের সময় স্কুলের বাথরুম পরিষ্কার করা। বলতে দ্বিধা নেই, আমরা কী আনন্দ নিয়ে যে এই কাজগুলো করেছি। সকালে স্কুল ঝাড়ু দেয়ার সময় মনে হতো এত আনন্দের কাজ পৃথিবীতে কী আর আছে? আমরা সবাই বসে বসে ঝাড়ু দিতাম। ঝাড়ু দেয়াটা মূল কাজ হলেও সেখানে মনোযোগ কমই ছিল। আমরা ঝাড়ু নিয়ে বসে গল্প করতাম। হেড স্যার এসে গেলে এমন একটা ভাব দেখাতাম যে, নিবেদিতভাবে ঝাড়ু দিচ্ছি। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ঝাড়ু দিচ্ছি। সময় লাগুক কিন্তু ময়লা থাকতে পারবে না এক বিন্দুও। স্যার চলে গেলে আবার কথায় মগ্ন হতাম।
অসম্ভব আনন্দ লাগত স্কুলের ঘন্টা দিতে। আধঘন্টার একটা ক্লাস শেষ হলেই আমরা ঘন্টা দেবার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। কে ঘন্টা দেবে তা নিয়ে চলত কঠিন প্রতিযোগিতা। হেড স্যার মুখ থেকে 'ঘন্টা দে' বলতে দেরি আমরা দৌড়ে যেতাম ঘন্টা ধরতে। যে আগে ধরতে পারত সেই ঘন্টা দিত। আমি বহুবার দিয়েছি। এরকম তাড়াতাড়ি ধরে ঘন্টা দিতে গিয়ে একদিন মহা ঝামেলা করে ফেলেছিলাম। ওহ! সে কী ভয়াবহ অবস্থা? আমার ভুলে দেখলাম স্কুলজুড়ে আনন্দের জোয়ার। সব দৌড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন হেড স্যার...। ক্লাস শেষ হয়নি। পুরো স্কুলের সবাইকে ক্লাসে দিয়ে তার রুমে আসলেন। আমার অবস্থা শেষ। আমি তাকিয়ে আছি স্যারের দিকে। আমার আশু পরনিতির কথা ভেবে। কি শাস্তি দিবেন? কি হলো কে জানে সেদিন কিছুই বললেন না। তবে এরপর অবশ্য আমি নিজেই ঘন্টা দেয়া থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসিত ছিলাম কয়েকদিন।
স্কুলের শেষ ক্লাসে বাথরুম পরিষ্কারও আমাদের কাছে কোনো অপছন্দের কাজ ছিল না। আমরা ব্যাপক আনন্দ নিয়ে সে দায়িত্ব পালন করেছি। একটি বছরের পুরো সময়। আমাদের কাছে স্কুল আরেকটা প্রিয় জায়গা ছিল খেলাধুলার কারণে। সেখানে গোল্লাছুট খেলা হতো। এ এক আজব দৃশ্য ছিল। একটি ছোট মাঠে দশ থেকে পনেরোটি দল গোল্লাছুট খেলছে। কতদিন যে কতজন অন্যমনস্ক হয়ে দৌড়াতে গিয়ে মুখোমুখি ধাক্কা খেয়েছে সে হিসেব কারো বের করা সম্ভব না। সম্ভব হয় না মুছে ফেলা আমার মন থেকে সেই সব প্রিয় শিক্ষক আর প্রিয় বন্ধুদের নামও।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৩:০৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×