somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফোন নম্বর - ২

২৬ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বের লিংক - ফোন নম্বর - ১
সারাহ জানে, এই রকম গুরুতর আহত রোগীর সাথে লোক না থাকলে চিকিৎসা সম্ভব না। কারণ, যে ধরণের ওষুধ , চামড়া সেলাইয়ের যন্ত্রপাতি বা অন্য সরঞ্জাম লাগে, তা প্রায় কোন সময়েই হাসপাতালে সাপ্লাই থাকে না। সব কিছুই রোগীর লোককে আনতে হয়। আর ব্লিডিং বেশী হলে রক্ত যোগাড়ের জন্য ছুটাছুটি করতে হয় রোগীর আত্মীয়কেই। গুরুতর আহত যাদের সাথে কেউ থাকে না, তাদের বেঁচে যাওয়াটা তাই মিরাকল।
লোকটার জন্য দুঃখবোধ করে সারাহ। কিন্তু অতদূর থেকে কি-ই বা করতে পারে সে?
আরিফকে বলে, ‘তুই পত্রিকায় এর ছবি ছাপাতে পারবি না। অজ্ঞাত অনেকের ছবি তো আসে দেখি। দেখে যদি এর আত্মীয়স্বজন আসে।’
‘এত রাতে তো রোড অ্যাকসিডেন্টের নিউজই যায় না। কালকে দেখি ট্রাই করে, পরশুর পেপারে আসে কিনা। যে চেহারা সুরত আর জামাকাপড়, আশা করি চলে আসবে। চ্যানেলওয়ালারাও দেখাতে পারে।’

সারাহ ফিরে আসে বিয়ের অনুষ্ঠানে। হাসিঠাট্টায় মেতে ওঠে বন্ধুবান্ধবীদের সাথে। তবে ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিটা রয়েই যায়।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাত একটার দিকে রুশদার বাসায় আসে ওরা। পরদিন খুব সকালে রওয়ানা হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে পৌঁছায় সাড়ে আটটার দিকে।
সারাহর ডিউটি মেডিসিন ওয়ার্ডে। এখানে সকাল সাড়ে আটটা থেকে এক ঘন্টা ক্লাস হয় প্রতিদিন, ইন্টার্নী আর পোস্ট-গ্রাজুয়েট ট্রেইনীদের জন্য। আজকের ক্লাসে বড় স্যার স্বয়ং হাজির। তাই ইচ্ছে থাকলেও ফাঁকি মারতে পারলো না সারাহ। তবে লেকচারের কিছুই মাথায় ঢুকলো না। মনে অস্থিরতা।

ক্লাসটা শেষ হতেই অ্যাসিসটেন্ট রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে দশ মিনিট সময় চেয়ে সে ছুটলো মর্গের দিকে। মর্গের ডোম সিকান্দার তাকে নিয়ে গেল যে ঘরে লাশ কাটা হয় সেখানে। এখানে আগে মাত্র দুবার ঢুকেছে সে, ফোর্থ ইয়ারে পড়ার সময়। ফরেনসিক বিষয়ের টিউটোরিয়াল ক্লাসের সময় লাশের ময়নাতদন্ত দেখার জন্য স্যার নিয়ে এসেছিলেন। মূল কক্ষে ঢুকতে হয় নি তাদের। কক্ষের উপরে করিডোর মতো রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের দাঁড়ানোর জন্য। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে উঠে দাঁড়িয়ে দেখেছে তারা মৃতদেহ কাটা-ছেঁড়া। সারাহর কখনোই ভাল লাগতো না দৃশ্যটা দেখতে।
কিন্তু আজ কোন দ্বিধা না করেই সে কক্ষের মাঝখানে চলে এলো। কাল রাতে আসা ঠিকানাবিহীন মৃতদেহটি দেখবে। কে তার ফোন নম্বর মুখস্থ করে রেখেছে?
ডোম মৃতদেহের উপর থেকে সাদা চাদরটি সরিয়ে দেয়। মুখটি দেখে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে সে। তার চেনা কেউ নয়। কিন্তু পরক্ষণেই মনটা খারাপ হয়ে যায় সারাহর। কোথাও কখনো এ মুখটি দেখেছে বলে মনে পড়ে না। কিন্তু বেশ সুন্দর দেখতে যুবকটি। ফর্সাই বলা চলে। মসৃণ চুল, খাড়া নাক। সুঠাম দেহ। বাম হাতে ঘড়ি পড়ার জায়গাটি আরো বেশী ফর্সা। অ্যাকসিডেন্টের পর হাত থেকে ঘড়িটিও কেউ খুলে নিয়েছে - বোঝা যায়। কাপড়চোপড় থেকে বোঝা যায়, বেশ সম্ভ্রান্ত ও ধনী পরিবারেরই যুবকটি।
তার কিছু করার ছিল না জানে, তবু কেন যেন কান্না পায় সারাহর। মনে হয়, তার কাছেই যেন শেষ সাহায্য চেয়েছিল যুবকটি। কিন্তু সে কিছুই করতে পারেনি। নিজেকেই সান্ত্বনা দেয় সারাহ - এমনও হতে পারে , কোন নিকটজনের ফোন নম্বর বলতে গিয়ে আহত অবস্থায় ভুলে তার নম্বর মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে ছেলেটির। বাবা-মা কি এখনও জানে না এর পরিণতির কথা?
সারাহর মনে পড়ে, ঢাকা মেডিক্যালের এক অধ্যাপকের কথা শুনেছিল সে কার কাছে যেন। দীর্ঘদিন এখানেই চাকুরী করে অবসর নেন তিনি। কয়েক বছর পর অ্যাকসিডেন্ট করে অজ্ঞাত হিসেবে ভর্তি হন ক্যাজুয়ালটিতে। হাসপাতালের কেউ চিনতে পারেনি তাকে। সঙ্গে কেউ ছিল না। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সময় পরিবারের কারো মুখ দেখে যেতে পারেননি তিনি। ২-৩ দিন মর্গে বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে থাকার পর তার আত্মীয়স্বজন এসে লাশ সনাক্ত করেন। মনে পড়ে মডেল তিন্নির কথা। তখনকার জনপ্রিয় মুখচেনা মডেলটির লাশও মিটফোর্ড মর্গে বেওয়ারিশ পড়ে ছিল কয়েকদিন।

বিষণœ মন নিয়ে ওয়ার্ডে ফিরে আসে সারাহ। রোগীর ফলো-আপ দেয়, স্যারের পিছনে পিছনে ওয়ার্ডে রাউন্ড দেয়। কিন্তু মন পড়ে থাকে মর্গে। দুপুরে বাড়ি যাওয়ার আগে আবার মর্গে ঘুরে আসে। নাহ। এখনও কেউ আসে নি যুবকটির। আরিফের সাথে দেখা হয়। আরিফ জানায়, যুবকটির ছবি আগামীকাল তাদের পত্রিকায় ছাপা হতে পারে। অন্য পত্রিকার ফটোগ্রাফারদের দিয়েও ছবি তুলিয়েছে সে। তবে টিভি চ্যানেলে আসবে কিনা এটা নিশ্চিত করতে পারে না।


আগামী পর্বে সমাপ্য
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×