somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফোন নম্বর - ১

২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'রহস্য-পত্রিকা' মার্চ সংখ্যায় ছাপা হওয়া গল্পের 'অ-(পরি)মার্জিত' ও 'অ-(পরি/সং)শোধিত' সংস্করণ ......
এত রাতে অচেনা নম্বর থেকে কল! রিসিভ করবে কিনা খানিকক্ষণ চিন্তা করে সারাহ। প্রথমবারে ধরে না। কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে চেষ্টা চলতেই থাকে। তৃতীয়বারে গিয়ে সে কিছুটা বিরক্ত হয়েই রিসিভ করে। ভীড় থেকে একটু দূরে সরে আসে।
‘হ্যালো, কে বলছেন?’- কণ্ঠও অচেনা।
প্রশ্ন শুনে সে আরও বিরক্ত হয়। উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে - ‘আপনি কাকে চাচ্ছেন?’
‘দেখুন, শাহবাগে এখানে একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। একটা সিএনজিকে বাস ধাক্কা দিয়েছে। সিএনজির যে যাত্রী আহত হয়েছেন, তিনি তার নাম বলেছেন তুষার। তিনি এই নম্বরটা বলতে পেরেছেন। এরপর অজ্ঞান হয়ে গেছেন। এজন্য এই নম্বরে ফোন করলাম আপনাকে অ্যাকসিডেন্টের খবরটা জানাতে। উনাকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। আপনারা দ্রুত ওখানে চলে যান। ’
কোন তুষার?- খানিকক্ষণ ভাবে সারাহ।
‘উনার সাথে মোবাইল নাই?’
‘উনার সাথে কিছু দেখছি না। অ্যাকসিডেন্টের পর চুরি গেছে হয়তো। আপনাদের এখানে আসার দরকার নেই। সোজা ঢাকা মেডিক্যালে পৌঁছে যান।’- বলে ফোন কেটে দেয় লোকটি।

তুষার নামে একজন দূর সম্পর্কের কাজিন আছে সারাহর। তাকে ফোন করে সে। ফোন ধরে তুষারই।
‘হ্যালো আপু কি খবর?’
‘ভালো। তুই কেমন?’
‘ভাল। এত রাতে কি মনে করে?’
‘এমনিই। একটা ফোন এসেছিল , তুষার নামে কে যেন অ্যাকসিডেন্ট করেছে। ভাবলাম তুই নাকি?’
‘আরে নাহ। আমি তো বাসায়। তুমি কই?’
‘আমি গাজীপুরে। বিয়ের দাওয়াতে এসেছি। ঠিক আছে, রাখি রে।’
ফোন কেটে দেয় সারাহ। নিশ্চয়ই কেউ ধাপ্পা দিয়ে ফোন করেছে। রাত এগারোটায় শাহবাগের সামনে অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে, এমন কে তার ফোন নম্বর মুখস্থ করে বসে আছে? বাসায় বাবা-মা আর ছোট ভাইয়ের সাথে পাঁচ মিনিট আগেই কথা হয়েছে তার। আত্মীয়স্বজন কারো কোন সমস্যার কথা তো তারা বলেনি।

ভাবতে ভাবতে সে ফিরে আসে বন্ধু-বান্ধবীদের মাঝে। তার বাসা ঢাকায়। গাজীপুরে এসেছে বান্ধবী নীলাঞ্জনার বিয়ে উপলক্ষ্যে। ঢাকা থেকে ওর আরো দুই বান্ধবী এসেছে। বিয়ের লগ্ন রাতে পড়েছে বলে ওরা আর সেদিন ফিরে যাবে না বলেই ঠিক করে এসেছে। নীলাঞ্জনাদের বাসার কাছেই আরেক বান্ধবীর বাসায় থাকবে রাতে। পরদিন সকাল সকাল চার বান্ধবী ফিরবে। সাথে অবশ্য ওদের ব্যাচের দুটি ছেলেও আছে। সবাই সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে ডিউটি ধরবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে মাসখানেক হয় ইন্টার্ণী হিসেবে কাজ শুরু করেছে ওরা।
‘কার ফোন?’ - জিজ্ঞেস করে মৌমিতা।
‘রং নম্বর বোধহয়’ - বলে উড়িয়ে দিতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ে তুষারের কথা। ওদের ব্যাচমেট। সারাহর সাথে ঘনিষ্ঠতা কম। ওর ফোন নম্বর মুখস্থ রাখার প্রশ্নই ওঠে না। তবুও জিজ্ঞেস করে বন্ধুদের। - ‘তোদের কাছে তুষারের নম্বর আছে?’
ইকবাল বলে, ‘হ্যা, কেন?’
একটু আগে আসা ফোনটার কথা সংক্ষেপে বলে সে। ইকবাল ফোন করে তুষারকে। তুষার হোস্টেলেই আছে। টিভি রুমে বসে সিনেমা দেখছে সে।
আর কোনো তুষারকে চেনে না সারাহ। মোটামুটি নিশ্চিত হয়, ওটা একটা ধাপ্পাই ছিল। অথবা রং নম্বর। তবু কেমন যেন অস্থির লাগে তার। যদি সত্যি হয়! যে নম্বরটা থেকে ফোন এসেছিল, সেটাতে আবার কল করে বন্ধ পায়।

হাসপাতালে বা হোস্টেলে ফোন করে কাউকে দিয়ে খবর নেয়াবে? যদি কিছুই না হয়। শুধু শুধূ কাকে কষ্ট দেবে? মনে পড়ে আরিফের কথা। ও একটি দৈনিক পত্রিকায় মেডিক্যাল রিপোর্টার হিসেবে কাজ করে। রাত সাড়ে এগারোটা-বারোটার দিকে সে মর্গ আর ইমারজেন্সীতে নিয়মিত ঢুঁ মারে। আরিফের ভাষায়- লেট নাইট রাউন্ড। আরিফের ফোন নম্বর সারাহর কাছে আছে।
আরিফকেই ফোন করে ও। ভাগ্য ভালো, আরিফ এখনও হাসপাতালেই আছে। তাকে ফোনের ঘটনাটা বলে অনুরোধ করে-‘ওরকম কেউ ইমারজেন্সীতে এসেছে কি না দেখবি? উনার জ্ঞান ফিরলে আমার সাথে একটু কথা বলিয়ে দে। অথবা সঙ্গে যে আছে তার সাথে। ’
‘ইয়েস ম্যাম, আই এম এট ইউর সার্ভিস।’ হালকা রসিকতা করে ফোন রাখে আরিফ।
কিছুক্ষণ পর ফোন করে আরিফ জানায়, ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে তুষার নামে একজন ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মারা গেছে। বয়স ৩০-৩২ বছর। শার্ট -প্যান্ট পরনে। দেখে সচ্ছল পরিবারেরই মনে হয়। ভর্তির পর থেকেই সঙ্গে কেউ ছিল না। সম্ভবত ভর্তি করিয়ে দিয়েই চলে গেছে। প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।
সারাহ জানে, এই রকম গুরুতর আহত রোগীর সাথে লোক না থাকলে চিকিৎসা সম্ভব না। কারণ, যে ধরণের ওষুধ , চামড়া সেলাইয়ের যন্ত্রপাতি বা অন্য সরঞ্জাম লাগে, তা প্রায় কোন সময়েই হাসপাতালে সাপ্লাই থাকে না। সব কিছুই রোগীর লোককে আনতে হয়। আর ব্লিডিং বেশী হলে রক্ত যোগাড়ের জন্য ছুটাছুটি করতে হয় রোগীর আত্মীয়কেই। গুরুতর আহত যাদের সাথে কেউ থাকে না, তাদের বেঁচে যাওয়াটা তাই মিরাকল।

চলবে..
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×