somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রোহ ও ঘৃণার গল্প

২৫ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেয়াল ঘড়িটা আয়েসি ভঙ্গিতে ঢং-ঢং শব্দ করে জানান দিচ্ছে মধ্যরাতের বারতা।এই সময়টাতে গভীর ঘুমে অচেতন থাকে মাসুম।কিন্তু আজ সে ঘুমোতে পারছেনা। ।সকালের উত্তেজনা এখনো কাটেনি মাসুমের।সমস্ত শরীর জুড়ে টগবগ করছে দ্রোহের রক্ত..
"শালা পাকির বাচ্চা ! তোর এট বড় সাহস আমার সামনে বাংলাদেশ কে নিয়ে বাজে কথা বলিস!! কি করে ভুলে গেলি আমরা তোদের পরাজিত করেছিলাম!!! ঐবেটা রোনালদোর জন্য তোর মাথাটা আজ ফাটিয়ে দিতে পারলাম না"---আপন মনে কথা গুলো আওড়াতে থাকে মাসুম।

মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি সে।তবে ইতিহাস পাঠ আর মায়ের কাছ থেকে যা জেনেছে তাতেই সে পাকিস্তানিদের ঘৃণা করে ।তবে এই আরব মুল্লুকে এসে একসাথে কাজ করতে গিয়ে পাকিস্তানিদের ভাল করেই চেনা হয়ে গেছে তার ।সে এখন বুজতে পারে ৭১ সালে এই বর্বর মানুষগুলো কতটা হায়েনার মত ছিল।এখনও সুযোগ পেলেই এরা বাংলাদেশ আর বাঙ্গালী সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে।মাসুম তার সামনে এটা হতে দেয়না।প্রতিবাদ করে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে।সকালে সহকর্মী আসলাম খান বাংলাদেশ নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় ক্ষেপে যায় সে।
-ইউ পিপলস আর কাওয়ার্ড গালি দেয় মাসুম
-শালা বাঙ্গালী তুম ক্যায়া কাহরাহে হো?চিৎকার করে বলে আসলাম খান। মেজাজ চটে যায় মাসুমের।মূহুর্তে নিজের সমস্ত শক্তি এক করে দানবাকায় পাকিস্তানির কলার চেপে ধরে নাকের উপর সপাং করে বসিয়ে দেয় ঘুষি।পরক্ষনেই পান্জাবী হায়েনার শক্ত হাতের প্রতিউত্তর আসে।এবার টেবিলে রাখা কাঠের ফুলদানী হাতে তুলে নেয় মাসুম।"শালা পাকির বাচ্চা জানোয়ার তোকে আজ মেরেই ফেলব"...হুংকার দিয়ে উঠে মাসুম। ততক্ষনে পাশের ডেস্ক থেকে ছুটে আসে ফিলিপিনো নাগরিক রোনালদো। সে মাসুমের হাত ধরে ফেলে ।টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।ভিতরে পরাজিত হায়েনা তখনও বাংগালীদের গালিগালাজ করছিল....

মাসুম বিছানায় গড়াগড়ি খায়। মনে মনে রোনালদো কে ভৎসনা করে। কিছুতেই চোখের পাতা দুটো এক করতে পারছেনা।মাঝে মাঝে মরুভূমির আচমকা দমকা হাওয়ায় বাইরের লনে পরিত্যক্ত পেপসির ক্যান,পানির বোতল,জুসের শিশি গড়াগড়ি খাওয়ার ক্যচ ক্যচ শব্দ আর দুএকটা মরুচারী কুকুরের আর্তনাদ কানে ভেসে আসছে।পাশের রুমে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে পাকিস্তানি জানোয়ারটা।মাসুমের ইচ্ছে করছে কিচেন থেকে মাংস কাটার ধারালো চোরাটা এনে হায়েনাটার বুকে বসিয়ে দিতে।বিছানার পাশে রাখা এক জগ পানি পুরোটাই শেষ করে ফেলে।চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্ঠা করে..
"বাচাঁও ! বাচাঁও !! কতগুলো আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার শুনতে পাচ্ছে মাসুম।সাথে মেশিনগান আর রাইফেলের ভীবৎস আওয়াজ।কিছু উর্দি পরা সৈনিক নির্বিচারে মেরে ফেলছে কতগুলো নিরীহ ঘুমন্ত নারী,পূরুষ আর শিশুকে।এরা কারা মাসুম কিছুই বুঝতে পারছেনা।সহসা সে দেখতে পায় কিছু অপরিচিত পূর্বপুরুষের মুখ।তারা মাসুম কে বাহবা দিচ্ছে,প্রতিবাদের প্রেরণা যোগাচ্ছে.....-"
ঢং-ঢং-ঢং আবারো সুর করে বেজে উঠে ঘড়িটা। ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসে মাসুম।এতক্ষন তন্দ্রার ঘোরে স্বপ্ন দেখছিল সে।তার সমস্ত শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে।এসির শীতল হাওয়ার মাঝেও তার ঘাম বের হচ্ছে।
আলো জ্বালিয়ে টিবিলে গিয়ে বসে মাসুম।শূন্য জগ উচিঁয়ে পানি খাওয়ার ব্যর্থ চেষ্ঠা করে।টেবিলে রাখা মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন।
হঠাৎ বড় ঘড়িটার ডায়ালে চোখ পড়তেই চমকে উঠে! আজ ২৫ মার্চ;সেই কালো রাত।আটত্রিশ বছর আগে এমনি এক রাতের অন্ধকারে নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানি হায়েনারা।এই মূহুর্তে একটু আগে স্বপ্নের ঘোরে দেখা মানুষগুলো কে চিনতে পারে মাসুম।অন্তর্গত যন্ত্রনা আর ক্ষোভে কেঁদে উঠে মন।
দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে মাসুম ।করিডোরে কয়েকবার অস্থির পায়চারী করে।আচমকা গিয়ে দাঁড়ায় পাকিস্তানী রুমের সামনে।নিজের মনের সমস্ত ক্ষোভ আর ঘৃণা উগড়ে দিয়ে মুখের ভিতর থেকে এক দলা বিশ্রী থু থু এনে ছিটিয়ে দেয় রুমের দরজায় সাঁটানো পাকিস্তানের পতাকায়।

তারপের ধীর পায়ে মরুভূমির উন্মুক্ত প্রান্তরে এসে দাঁড়ায় মাসুম।আজকের আকাশে অসংখ্য তারার মেলা।মায়ের কথা ভীষন মনে পড়ে তার। ছোটবেলায় এমন তারা ভরা রাতে মা তাকে ২৫ মার্চের ইতিহাস শুনাতো; মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনাতো; যুদ্ধে শহীদ হওয়া চাচার গল্প শুনাতো।আর মনের ভিতর জ্বালিয়ে দিত পাকিস্তানি হায়নাদের প্রতি দ্রোহ ও ঘৃণার আগুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×