somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহা পৃথিবী [উপন্যাস] - ৮

২৫ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব

লম্বা একটা শ্বাস নিলো রায়হান৷ শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো, “অহনা, যদি আজকে আমাদের অনুষ্ঠানটা সফল হয় তাহলে কি হবে?”
“সফল হওয়া বলতে তুমি কি বোঝাচ্ছ?” রায়হান স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, সে শান্ত গলায় কথা বলছে দেখে অহনার ভালো লাগছিলো৷ ঘুরে রায়হানের দিকে মুখ করে বসে প্রশ্ন করলো সে৷ “তুমি যে এক্সপেরিমেন্টটা করতে চাচ্ছো সেটার সফলতা নাকি শুধু অনুষ্ঠানটার সফলতা?”
“অনুষ্ঠান তো সফল হবেই, না হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ আমি বলছি এক্সপেরিমেন্টটার সফলতার কথা৷”
“ওটার সফল হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ তুমি ভালো করেই জানো তোমার এক্সপেরিমেন্টের কোনো ভিত্তি নেই৷ পৃথিবীতে এরকম হয় না৷”
“কেন হবে না? নিশ্চয় হয়৷”
“হয়? আচ্ছা উদাহরণ দাও৷”
“দিবো৷ তার আগে বলো, অতিপ্রাকৃত কোনো কিছুতে তুমি বিশ্বাস করো না, তাই না?”
অহনা উত্তর দিলো না, চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো৷ রায়হান একটুপর আবার বলল, “কি হলো, উত্তর দিচ্ছো না যে?”
“আমি ঠিক জানি না৷” অহনা মৃদু গলায় উত্তর দিলো৷
“কি জানো না?”
“আমি বিশ্বাস করি কিনা সেটা আমি ঠিক জানি না৷”
“আমি বিশ্বাস করি৷”
“জানি৷”
“না জানো না৷”
অহনা অবাক হয়ে রায়হানের দিকে তাকালো৷ রায়হান আবার বলল, “আসলে আমিও জানি না আমি বিশ্বাস করি কিনা৷ সত্যি কথা হলো, প্রমাণিত নয় এরকম কোনো কিছু আমি বিশ্বাসও করি না আবার অবিশ্বাসও করি না৷ কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে চাই৷”
“বিশ্বাস করতে চাও? কেন?” অহনা অবাক হয়ে জানতে চাইলো৷
“আমি বিশ্বাস করতে চাই পৃথিবীতে অনেক কিছুই ঘটে যা আমাদের বুদ্ধির অগোচর৷ এমন কিছু, যা ঠিক স্বাভাবিক নয়, স্বাভাবিক বুদ্ধিতে যা ব্যাখ্যা করা যায় না, আমাদের জ্ঞান যা ব্যাখ্যা করতে পারে না৷ আমি বিশ্বাস করতে চাই কারণ এতে করে আমি এক অজানা শক্তির কথা জানতে পারি৷ এমন শক্তি, যা আমাদের সৃষ্টি করেছে৷ সেই শক্তির কথা ভাবলে মনে হয়, হয়তো সত্যিই মৃত্যুর পর অন্য একটা জীবন আছে৷ মৃত্যুতেই সব শেষ না৷”
অহনা চেয়ে রইলো রায়হানের দিকে৷ রায়হান আবার বলল, “মৃত্যুতেই যদি সব শেষ হয়ে যায় তাহলে কি হবে অহনা?”
অহনা নীচু গলায় বলল, “আমি জানি না৷”
“সব কিছু যে বড় বেশি অর্থহীন হয়ে যাবে তাহলে৷ বড় বেশি অর্থহীন!”
“তুমি কি ধর্ম বিশ্বাস করো না?”
“তাতে কিছু আসে যায় না৷”
“মানে কি?”
রায়হান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আসলে ধর্ম বিশ্বাস করা বা না করা দিয়ে কি তেমন কিছু আসে যায়? অন্তত আমি যে বিষয়টা নিয়ে বলছি সেটাতে? আমি বহু ধার্মিক দেখেছি যারা পরকালের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত না৷ আসলে কেউ কি এই ব্যাপারটায় পুরোপুরি নিশ্চিত? আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি যারা জীবনে কখনো নামাজ ক্বাজা করেনি, কখনো অন্যায় কোনো কাজ করেনি৷ কখনো তাদের বিশ্বাসের কোনো কমতি দেখিনি৷ অথচ যত বয়স বাড়ে তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়৷ কিসের যেন একটা অনিশ্চয়তা৷ এই অনিশ্চয়তা কিসের? এই অনিশ্চয়তা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সব শেষ হয়ে যাবার অনিশ্চয়তা৷ সারা জীবন যে বিশ্বাস নিয়ে তারা চলে এসেছে সেই বিশ্বাস ভেঙে যাবার অনিশ্চয়তা৷ যদি পরকাল বলে আদৌ কিছু না থাকে? যদি সব মিথ্যে হয়? এই পৃথিবীতে আসা, এতগুলো বছর বেঁচে থাকা, এই ক্রমাগত সামনে যাওয়ার চেষ্টা, এই অভিমান, এই অহংবোধ, সফলতার গর্ব, ব্যর্থতায় জেগে ওঠা অভিমান, এসব কিছুই মিথ্যে হয়ে যায় যদি পরকাল বলে কিছু না থাকে৷ এটাই অনিশ্চয়তা৷ এই অনিশ্চয়তা আমি দেখেছি সবার মধ্যে৷ এমন কাউকে আমি পাইনি যার মধ্যে এটা নেই৷ এটাই বাস্তব৷ ধর্ম আসলে আমাদের সাময়িক সান্ত্বনা দিতে পারে বটে, কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারে না৷ কোনো কিছুই আসলে এই ব্যাপারে আমাদের পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারে না৷”
“তোমার এক্সপেরিমেন্ট যদি সফল হয় তাহলে কি তুমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারবে?”
“নাহ, পারবো না৷ আসলে কিছুই প্রমাণিত হবে না এক্সপেরিমেন্টটা দিয়ে৷ পৃথিবীর বুকে আমাদের অস্তিত্বের যে রহস্যময়তা তা তেমনি রহস্যময় থেকে যাবে৷ তবু আমি আসলে বিশ্বাস করতে চাই৷ বিশ্বাস করতে চাই যে পরকাল বলে কিছু আছে৷”
থেমে অহনার দিকে তাকিয়ে হাসলো রায়হান৷ আবার বলল, “আগেও চাইতাম৷ আর এখন তো আরো একটা কারণ আছে৷”
অহনা একটু অবাক হয়ে বলল, “কি কারণ?”
রায়হান মুখ টিপে হেসে বলল, “বলব না৷ বললে তুমি রাগ করবে৷”
অহনা কি যেন বুঝে হেসে ফেলল৷ হাসতে হাসতে বলল, “তাহলে না বলাই ভালো৷”
রায়হান অস্থিরভাবে বলল, “আহ, তুমি সব কিছু বড় সহজে মেনে নাও! আমি বলব৷”
যেন একটা বাচ্চাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এমন ভঙ্গিতে হেসে অহনা বলল, “আচ্ছা বলো৷”
রায়হান হেসে বলল, “এ জীবনে তো তোমাকে নিজের করে পেলাম না৷ পরকাল, স্বর্গ, বেহেস্ত বলে যদি কিছু থাকেই, আর সেখানে যদি চলেই যাই, তাহলে তোমাকে চাইব৷ শুনেছি সেখানে যা চাওয়া যায় সব পাওয়া যায়৷ সেখানেও কি পাব না তোমাকে?”
“আর কাকে কাকে চাইবে বলো৷”
রায়হান অহনার দিকে ফিরে তাকালো৷ অহনা হাসছে৷ তার দু'চোখে গভীর ভালোলাগা খেলা করছে৷ রায়হান মুচকি হেসে বলল, “আর কাকে কাকে চাইব? হা হা হা... না, এখন পর্যন্ত তো তোমাকে ছাড়া আর কাউকে এমন গভীরভাবে চাইনি৷ এখন যদি স্বর্গে চলে যাই তবে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে চাইব না, শুধু তোমাকে চাইব!”
“কিন্তু আমি যদি তোমাকে না চাই সেখানে?”
রায়হান একটা অপেক্ষাকৃত দ্রুতগামী বাসকে সাইড দিলো৷ কিছুক্ষণ কোনো কথা বলল না সে৷ হঠাৎ করেই একটা নীরবতা নেমে এলো গাড়িতে৷ রায়হানের বুকের ভিতর আবার একটা ব্যথা চাপ বেঁধে উঠলো৷ অহনা কি সত্যিই তাকে চায় না? সেকি অন্য কাউকে চায়? কে সেই মানুষ? যার পায়ে রায়হানের সব ভালোবাসা মাথা কুটে যায় অথচ যে ফিরেও দেখে না, তার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে যেতে পারে কেমন সেই পুরুষ? কেমন মহাপুরুষ সে?
রায়হান খুব শান্ত গলায় বলল, “হ্যাঁ, এই ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢোকে না৷ আমি তোমাকে চাইলাম কিন্তু তুমি আমাকে চাইলে না, তাহলে কি হবে সেখানে? আমি জানি না৷ তবে তোমার আমাকে না চাইবার স্বাধীনতা আছে বটে৷ তুমি আমাকে না চাইতেও পারো৷ কি জানি, তুমি হয়তো অন্য কাউকে চাইবে!”
অহনা শ্বাস ফেলে বলল, “থাক এসব কথা৷ তারচেয়ে আমি একটা গান গাই শোনো৷”
অহনা রায়হানকে গান শোনাতে ভালোবাসে, সে প্রায়ই রায়হানকে গান শোনাতে চায়৷ এই একটা জিনিসই সে নিজে থেকে করতে চায়৷ অন্য আর কোনো কিছু সে কখনো চায় না৷
রায়হান অবশ্য অন্য কথা ভাবছিলো৷ যে মেয়েটিকে সে তার সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে বসে আছে, সে অন্য একজনকে ভালোবাসে ভাবতে তার ভালো লাগছিলো না৷ তার কষ্ট হচ্ছিলো৷ অনেকক্ষণ সে কিছু বলতে পারলো না৷ অনেকক্ষণ পর বলল, “আচ্ছা গাও৷ অনেক দিন তোমার গান শুনি না!”
“কোন গানটা গাইব?”
“যে কোনোটা৷ তুমি যা গাও তাই অমৃত হয়ে যায়!”

(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×