somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রকাশিত (শেষ পর্ব)

২৫ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাব্বিশ

কক্সবাজারে অসাধারন দুটি দিন কাটিয়ে আমরা এখন সেন্টমার্টিনের পথে। স্বগত’র উপর এমনিতেই আমার অনেক আস্থা। এই দুদিনে সেটা অনেক ক্ষানি বেড়ে গেল। কাজের ব্যাপারে ও সবসমই অনেক সিরিয়াস। আর অনেক গোছানো। এত সুন্দর করে সব কিছু সাজিয়েছে। উপস্থাপনা ছিল অত্যন্ত প্রাঞ্জল। খুবই মজার সব কথা বার্তায় ভর্তি। সবাই এত হাসাহাসি করছিল যে দূর থেকে অনেকে একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছিল। আনন্দের মধ্য দিয়ে তার যেই কথাগুলো বলা দরকার ছিল কত সহজেই না বলা হয়ে গেল। সবার আগ্রহ দেখে মনের মধ্যে একটা আশার সঞ্চার হচ্ছিল। জানি না এর শেষটা কতটা আনন্দের হয়?

কেবিন ছেড়ে জাহাজের ডিকিতে দাঁড়িয়ে আছি আমরা সবাই। নাফ নদীর অদ্ভুত নীল পানির মাঝে যেন নিজের ছায়া খুঁজছি। কারো মুখে কোনো কথা নেই। এটা অবশ্য আমার জন্য নতুন কোনো অভিজ্ঞতা নয়। এরকম পরিবেশে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো কারনই নেই। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে অবগাহনটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। নাফ নদীর অপরূপ নীল মোহনীয়তা, দুই ধারে গাঢ় সবুজ পাহাড়, ছোট ছোট ডিঙি নৌকা কিংবা গুটিকয়েক পালতোলা নৌকা, প্রাণ চঞ্চল জেলেদের মাছ ধরা, নদীর কিনারা ঘেঁষে পাখিদের উড়ে যাওয়া, এই সব কিছুর সাথে নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা মিশে একাকার হয়ে গেছে।

আমাদের পাশে একটা অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদের একটা গ্রুপ। গীটার বাজিয়ে গান করছে। পরিবেশটা আরো অদ্ভুত সুন্দর মনে হচ্ছিল। ছেলেটা দু চোখ বন্ধ করে গান গাইছে।

তোমার কোনো বাধঁন নাই
তুমি ঘর ছাড়া কি তাই
এই আছ ভাঁটায় আবার এইতো দেখি জোয়ারে

সাথে একটা মেয়ে গলা মেলাচ্ছে। এরকম একটা না একটা গ্রুপ এধরনের যাত্রায় সব সময়ই দেখতে পাওয়া যায়। সেবার আমরাই ছিলাম সেই দলে। পুরো রাস্তা শুধু গান গেয়েছি। আমাদের দলে গান গাইতে পারে এমন গায়কী বিশেষ একটা ছিল না। সুরভী ছাড়া আর কারো গলা দিয়ে সুর বের হতো না। আর দীপকে পাশ মার্ক দেয়া যায়। তারপরো গান গাইবার সময় অনেকগুলো বেসুরো স্বরের মধ্য থেকে ওদেরটা খুজেঁ পাওয়া মুশকিল ছিল। জাহাজের ছাঁদে বসে আমাদের সেই উচ্ছ্বল সময়ের ছায়া দেখতে পাচ্ছিলাম। এদের মাঝেও নিশ্চয়ই রয়েছে একজন মৃদুল, মনোজ, সুব্রত, রঞ্জন কিংবা দীপ।

আমাদের ভাগ্যটা বেশ ভালোই বলতে হবে। আজ পূর্ণিমা; পুর্ণিমা রাতে সেন্টমার্টিনের পরিবেশটা একেবারে রহস্যময় মনে হয়। আমাদের চরিত্রের দৃঢ়তা, কাঠিন্য, গতিময়তা, চঞ্চলতা সব কিছু সেই রহস্যময়তার কাছে হার মেনে যায়। অবশিষ্ট থাকে শুধু দুর্বলতা। প্রকৃতি মানুষের মনকে দুর্বল করে দেবে এতে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। তাই আজো জানা হয়নি কেন সুমিত একা একা বসে অঝরে কেঁদেছিল। কিংবা কেন এত কাছে গিয়েও দীপ পারেনি তার মনের কথা সুরভীকে বলতে? কেনই বা সুরভী সব জেনে বুঝেও এতটুকু আশ্রয় চেয়েছিল দীপের কাছেই।

চাঁদের আলো যখন সমুদ্রের নোনা পানির উপর পড়ে, একটা অদ্ভুত আলো সৃষ্টি হয়। প্রতিটি ঢেউ বয়ে নিয়ে আসে সেই আলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে মনে হবে মিষ্টি একটা আলোর মিছিল। এর সাথে ঝির ঝির বাতাসের শব্দ আর সমুদ্রের স্বভাব সুলভ চাপা গর্জন। বিশালতার খুব কাছাকাছি এসে এই সৌন্দর্য অনুভব করতে হয়। সাথী হবে নিস্তব্দতা আর গাম্ভীর্য, সব মিলিয়ে এক অনুপম প্রদর্শনী।

মনোজঃ “মৃদুল”

“বল্‌”

মনোজঃ “তুই কি জানিস যে আগামীকাল নীতুর বিয়ে?”

“হম্‌ম। জানি।”

মনোজঃ “তোর কি এই ব্যাপার নিয়ে মন খারাপ?”

“এই ব্যাপার নিয়ে কি আমার মন খারাপ হবার কথা? ঠিক বুঝতে পারলাম না।”

মনোজঃ “নাহ্‌। আমার মনে হলো তোর বোধহয় এই ব্যাপার নিয়ে কিছুটা মন খারাপ। তাই জিজ্ঞেস করলাম। ক্ষ্যাপিস না প্লিজ।”

“নাহ্‌। শুধু শুধু ক্ষ্যাপতে যাব কেন? কিন্ত তোর এই কথা মনে হবার কারন জানতে পারি।”

মনোজঃ “তা জানি না। মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম। একটা প্রশ্ন করতে পারি?”

“কর।”

মনোজঃ “তুই কি নীতুকে পছন্দ করিস?”

“এই প্রশ্নের উত্তর একি সাথে হ্যাঁ এবং না। ‘হ্যাঁ’ টা আমার জন্য আর ‘না’ টা তোর জন্য। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না, জানতে চাইও না। আর কথা বাড়াস না। ওই দেখ কি ভয়ংকর সুন্দর প্রকৃতি। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের সঙীর অভাব কখনো হবে না। কেউ না থাকলে প্রকৃতি থাকবে। মোহনীয় সৌন্দর্য থাকবে। বেঁচে থাকার একটা না একটা পিছুটান রয়েই যাবে সবসময়। বার বার এর টানে ছুটে আসব এখানে, হয়তোবা অন্য কোথাও।”

মনোজ চুপ মেরে গেল। মনে হচ্ছে আমার চেয়ে ওরই বেশি মন খারাপ হয়ে গেছে। ওর এই ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগে। কিন্তু কখনো প্রকাশ করি না। শিশুসুলভ সরলতা, একেবারে নিষ্পাপ, এই প্রকৃতির মতন। রাত বাড়ছে। সাথে সাথে নিস্তব্দতাও বাড়ছে। রাতের অন্ধকার সবার মনকে আরো হাল্কা করে দিচ্ছে। কারো বলার প্রয়োজন নেই। আমি বুঝতে পারছি। আমার মাঝেও হাহাকার বাড়ছে। বুকের মাঝে কোথায় যেন একটা কষ্ট দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ইচ্ছে করছে এই বিশালতার মাঝে ডুবে যাই। তাকিয়ে দেখলাম, স্বগত আর মিলি সমুদ্রের কোল ঘেঁষে আনমনে হাঁটছে। আমরা যেখানে বসে আছি সেখানে আলো বলতে শুধু চাঁদের আলো। একটা বিশাল জায়গা জুড়ে ওই ছোট্ট চাঁদের আবছা আলোর মোহনীয়তা ছড়িয়ে পড়েছে সব কয়টা মুখে।

বিশালতা আর অসীম সৌন্দর্য। এই দুটোর খুব কাছাকাছি এলে নিজেকে বড় বেশি ক্ষুদ্র মনে হয়। অসহায় মনে হয়। নিঃসঙতা ছেঁকে ধরে। একধরনের অস্থিরতা, দুর্বলতা কাজ করে। মন শুধু একটা আশ্রয় খুঁজে ফেরে। যেই অনুভূতি দীপকে দিয়েছিল সুরভীর খুব কাছে আসার অকৃত্রিম সুযোগ। কোনো আশ্রয় খুঁজে না পেয়েই বোধহয় অবুঝ শিশুর মতন কাদঁছিল সুমিত। সেই অনুভূতিই বোধ করি হৃদয়কে পাথরের মূর্তি বানিয়ে দিয়েছিল। সেই একি অনুভূতি আমাকেও নাড়া দেয়। তবে আমি নিঃসঙ নই। এই সব অনুভূতি, সব স্মৃতিই আমার সঙী। সমুদ্র মানেই বিশালতার অসমাপ্ত গল্প, সৌন্দর্যের অফুরন্ত ভান্ডার। সমুদ্রের একটা অসাধারন ক্ষমতা আছে। সকলকে নিজের দিকে আকর্ষন করার অকৃত্রিম ক্ষমতা। বোধকরি নারীদের মাঝেও সেই একই ক্ষমতা রয়েছে। তাই এত সব কিছুর মাঝেও বার বার তোমার চেহারাটা মনে পড়ছে। তোমার হাত ধরে সমুদ্র তীরে ঘুরে বেড়ানোর দুঃসাহসিক স্বপ্ন আমি কখনো দেখিনি। কিংবা একটা পূর্ণিমা রাত তোমার চোখে চোখ রেখে পার করে দেয়া। হলো না, তবে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।

নীতু, তুমি ভালো থেকো, সুখে থেকো।

শেষ। (যন্ত্রণার শেষ। আমার মুক্তি সামুরও মুক্তি। :) । এত বড় একটা লেখার জন্য দুঃখিত। যারা সময় করে মাঝে মাঝে আমার লেখা পড়ে বিরক্ত হয়েছে, পড়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ আর বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। এই লেখার সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। কেউ যদি জীবিত-মৃত কারো সাথে কোনো চরিত্রের সর্ম্পক খুজেঁ পান তাহলে তার দায়দায়িত্ব আপনার, আমার নয়। )
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:১৬
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×