somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলসে দিন

২৫ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে সকাল বেলা ঘুম ভাংতেই মনে হয় আজ কোন কাজ করব না, আমার এই কাজ আর ভাল লাগেনা, বড়ই ঝামেলার। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে ব্যলকনিতে বসি। আলসে চোখে সামনের সবুজ লন টার দিকে তাকাই। চোখে পড়ে ৩/৪ জন লন মোয়ার ঘাস গুলোকে কেটে সমান করছে। সবুজ ঘাসের গন্ধে এলাকাটা ম ম করছে, ইচ্ছে করে বসে বসে ঘাস খাই...গন্ধটা এতই মিষ্টি লাগে।

মাথা মুখ মোড়ানো হাই বুট পড়া লন মোয়ার ম্যান গুলোকে অভিভুত হয়ে দেখতে থাকি, কি সুন্দর করে ঘাস গুলোকে সমান করে কেটে চলেছে ... ইচ্ছে করে লন মোয়ার ম্যান হয়ে যাই। মনে ছোট্টো একটা কষ্ট এসে দোলা দেয় "আহা আমি কেন লন মোয়ার ম্যান হলাম না।"

মনে দুঃখ এলে তার ব্যপারে সাথে সাথে একশন নেয়া দরকার। চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে নিচে নেমে গেলাম। সবুজ ঘাসে বহুদিন পা রাখিনি, স্লিপার খুলে রেখে আধো ভেজা ঘাসে পা রেখে হেটে গেলাম লন মোয়ার এর কাছে। বাতাসে তীব্র কাচা গাসে গন্ধে মাথায় ভোতা অনুভুতি...ঘাস খাবার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে ওঠে। আমাকে দেখে সে চোখ গোলগোল করে মেশিন বন্ধ করে তাকাল যেন আকাশ থেকে ভুত নেমে এসেছে ওর কাছে।

বললাম "আমি একটু ট্রাই করতে পারি তোমার কাজটা?"
সে হেসে ফেলল। বলল " ম্যাম এত তো সহজ নয় ব্যপারটা, তুমি পারবেনা, তার উপর তুমি খালি পায়ে।" উমম আমার মনে তখন লন মোয়ার হবার স্বপ্ন!!! "স্বপ্ন" একটা মনে এসেছে বলে কথা, আফসোস মনে রাখবার মানুষ আমি নই!!

বললাম "দাওইনা আমায় দেখি পারি কিনা।" হাতে নিলাম লম্বা পাইপের মত জিনিসটা মাথায় তার ছোট ছোটো ফ্যনের মত ব্লেড লাগান। তার সাথে কাধে ঝোলানি মেশিন। আমার জেদ দেখে সে খুলে দিল পুরো জিনিসটা আর আমকে পড়তে সাহায্য করল।

বোতাম টিপতেই বো বো করে ব্লেড গুলো ঘুরে পুরো লম্বা রডটা ইচ্ছে মত যাদিক সেদিক ছুটতে চাইল। আমার অবস্থা কাহিল ওটাকে বাগে আনতে, তার পর যখন ঘাসে ছোয়ালাম...সে আরেক ব্যপার এলোপাথাড়ি এবড়ো থেবড়ো কাটতে লাগল আর ধারাল ঘাস গুলো এসে আমার খোলা পায়ের চামড়া কেটে দিল। দুমিনিটেই বুঝলাম এ আমার কাজ নয়!! হা হা হা ব্যপারটা যত স্বপ্নময় মনে হয়েছিল সেটা ততটা স্বপ্নময় নয়। সব কাজের জন্যই যথা যোগ্য ট্রেনিং লাগে, আর কোন কাজই ছোট বা শহজ নয়।

বাসে করে যখন রোজ সকালে অফিসে যেতাম। দোতলা বাসের দোতলায় বসে দেখতাম ঝারুদার রাস্তা ঝারু দিচ্ছে! মনে হত কোন দুঃখে আমি গ্রাফিক ডিজাইন করি, আহা ওদের কাজটা কত সহজ আর মজার.... আমি কেন ঝারুদার নই। মনে পরল ছোট বেলায় পড়া বুদ্ধিবতী মাশার ঝারু দেবার গল্প!!!

কখনো কখনো মনে সাধ জাগত ঝরুদার দেখে ঝরুদার হতে, ইট ভাংগা দেখে ঐ কাজ করতে, বা ওয়েলডিং করে গ্রিল বা রডের তৈরি জিনিস যারা বানায় তাদের কাজ করতে। ইট ভাংতে গিয়ে রোদে আর গরমে পুরে কাল ভুত হয়ে অর্ধেক অসু্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছি। ওয়েলডিং করতে গিয়ে মজা পেয়েছি তবে বাড়ি ফিরেছি চোখে তীব্র জ্বালা নিয়ে। তিন দিন চোখ খুলতে পারিনি, চোখ ফুলে কদবেল হা হা হা। তবে আমার ঐ শখ বেশ কিছুদিন ছিল...নানান রকমের মজার মজার জিনিস বানাতাম যেমন মোম দানি, বা জুতোর র‌্াক। বা শো পিস। তবে দিন শেষে বুঝেছি আমি ঐ কাজের যোগ্য নই। হয়ত আমি গ্রাফিক ডিজাইনার হতে পারি বা ভাবতে পারি কত কষ্ট করে আজ আমি এই জায়গায় এসেছি, ওরাও কিন্তু তাই..ওরা যেমন আমার কাজ জানেনা আমিও তেমন ওদের কাজ জানিনা....দেখতে ওদের কাজ যত সহজই মনে হোকনা কেন আসলে কিন্তু তা নয়।

বুঝেছি বা জেনেছি ঐ সব কাজ যে মানুষ গুলো করে তারা অনেক বেশি পরিশ্রম করে আমাদের চাইতে...তার বিনিময়ে আমারা তাদের খুবই কম মুল্য দেই। কাজ গুলো সত্যিই সহজ নয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মানুষ গুলো সারাদিনে যা আয় করে তাতে তাদের চাহিদার খুব সামান্যই জোটে।

শ্লিপার পায়ে গলিয়ে বাড়ি ফিরে আসি আর কম্পিউটার খুলে কাজে মন দেই

বিঃদ্রঃ জীবনের কোন এক সময় ওয়েলডিং এর কাজ করে পড়ার খরচ চালিয়েছি, খাবার কিনেছি!! দ্বীর্ঘ এক বছর এই কাজ করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:৪০
৭৭টি মন্তব্য ৭৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×