somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহা পৃথিবী [উপন্যাস] - ৬

২৪ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব

তিন
----

'মহা পৃথিবী' ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের চুয়াল্লিশতম পর্বের প্রচার আজ৷ আজকের অনুষ্ঠানটা হবে অনঙ্গপুরের জমিদার বাড়িতে৷ রাত এগারোটায় শুরু হয়ে এক ঘণ্টা কোনো বিরতি ছাড়াই অনুষ্ঠানটা চলবে৷

আজকের পর্বটা অনুষ্ঠানটার অন্যান্য পর্ব থেকে অন্যরকম, আলাদা৷ আলাদা এই কারণে যে আজকের অনুষ্ঠানটা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে৷ আর সাধারণত যা দেখানো হয় অনুষ্ঠানটায় তার কিছুই আজকে দেখানো হবে না৷ এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানটার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না, এবং সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটা হবে শুধু অহনাকে ঘিরে, অন্য কেউ, অন্য কিছু থাকবে না৷ এই পর্বটা রায়হানের একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী পর্ব, যার মাধ্যমে সে মানুষকে একটা রহস্যময়, অতিপ্রাকৃত, অন্য জগতের স্বাদ দিতে চায়৷

এই পর্বটা উপলক্ষ্য করে প্রচার চালানো হয়েছে প্রচুর৷ রেডিও টিভি পত্রিকা এমন কোনো প্রচার মাধ্যম বাদ যায়নি যেখানে পর্বটা সম্পর্কে প্রচার চালানো হয়নি৷ কোনো প্রচারণাতেই অবশ্য বলা হয়নি পর্বটাতে কি থাকবে, কি দেখানো হবে৷ শুধু রহস্যপূর্ণভাবে বলা হয়েছে এটা একটা ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে৷ বলা হয়েছে, পর্বটা হতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ অন্যরকম, অতিপ্রাকৃত, রহস্যময়৷ এটা এমন একটা অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে, যা কেউ কখনো দেখেনি৷ এসব প্রচারণার ফলে মানুষের মধ্যে পর্বটাকে ঘিরে গভীর একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে৷ সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে ওরা কি দেখাবে তার জন্য৷ অবশ্য অহনা আর রায়হান এখন এত জনপ্রিয় যে এই দু'জন মিলে একটা কিছু করছে শুধু এটুকু জানাই টিভি সেটের সামনে কয়েক লক্ষ মানুষের বসে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট!

গাড়ি থেকে নেমে বড় হলঘরটায় প্রবেশ করলো রায়হান আর অহনা৷ ওদের টিমটার অন্য সদস্যরা আগেই চলে এসেছে৷ হল ঘরটায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলো সবাই৷ অহনা তার সহকর্মীদেরও ভীষণ প্রিয়৷ সে হলঘরে ঢুকতেই অন্যরা এগিয়ে এসে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করলো৷ অহনা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছার উত্তর জানাতে লাগলো৷

রায়হান সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছোটখাট বক্তৃতা দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো৷ দাঁড়িয়ে তার টিমের অন্য সবাইকে দেখছিলো সে৷ তার টিমের প্রায় সবাই বয়সে তার ছোট বা কাছাকাছি৷ সবাইকে সে তুমি করে বলে৷ আসলে সে টিম সাজিয়েছে নিজের মত করে৷ সে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে স্বভাবের মানুষ৷ তাকে সন্তুষ্ট করা বেশ কঠিন একটা কাজ৷ সবচেয়ে ভালোটা না পাওয়া পর্যন্ত সে সন্তুষ্ট হয় না৷ যতক্ষণ না কারো কাজ তার নিজের একদম মনের মত হচ্ছে ততক্ষণ সে কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারে না৷ কারো কাজ পছন্দ না হলে সে রেগে যায়, আর রাগ লুকানোর কোনো চেষ্টা সে করে না! এমনিতে রায়হান যেরকমই হোক না কেন, কাজের সময় সে অন্যরকম৷ কাজ মন মত না হলেই সে রেগে যায়৷ এসব কারণে প্রথম দিকে খ্যাতিমান অভিনেতা অভিনেত্রীরা তার সাথে কাজ করতে চাইতো না৷ রায়হান অবশ্য সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতো না৷ সে নিজের স্বভাব সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানে৷ জানে যে মাঝামাঝি কোনো কিছুতে তার তৃপ্তি নেই৷ সে সবচেয়ে ভালোটাই বের করে আনতে চায়৷ তাই সে আসলে খ্যাতিমানদের সাথে কাজ করার ব্যাপারে খুব আগ্রহী না, কারণ তাদের কাছ থেকে তার মন মতো জিনিস বের করে আনা বেশ কঠিন৷ তাই সে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিষ্ঠিত এবং নতুনদের নিয়েই কাজ করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী, যাদের সে গড়তে পারে নিজের মত করে, যাদের কাছ সামর্থ্যের সবটুকু সে বের করে আনতে পারে৷ তার নাটকের পাত্র পাত্রীদের বেলায়ও সেটা যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি তার টেকনিকাল টিমের ব্যাপারেও৷ তার এই টেকনিকাল টিমটাও সে সাজিয়েছে সেরকম তার পছন্দের ও নতুনদের নিয়েই৷

তবে এসবই অহনা আসার আগের কথা৷ অহনার সাথে পরিচয়ের পর থেকে রায়হান অনেক বেশি সংযত, অনেক বেশি পরিমিত, জানে কিভাবে রেগে না গিয়েও কাজ বের করে আনা যায়৷ অহনার সংস্পর্শ তার অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে৷
অহনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো শেষ হলে রায়হান শুরু করলো, “ওকে ওকে, সবাই একটু শান্ত প্লিজ৷”
হলঘরটায় নীরবতা নেমে এলো৷ সবাই ঘুরে রায়হানের দিকে মুখ করে দাঁড়ালো৷ রায়হান একবার চারদিক দেখে নিলো৷ তার সামনে একটা টেবিল৷ সে টেবিলে হাত দু'টো রেখে সামনে তাকিয়ে বলল, “আমার মনে হয় আমরা সবাই চলে এসেছি, নাকি? মিলন, তুমি একটু দেখে বলবে সবাই এসেছে কিনা?”

মিলন আগেই দেখে নিয়েছিলো, সে জানালো যে সবাই এসেছে৷ তখন রায়হান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার বলতে শুরু করল, “ঠিক আছে, তাহলে শুরু করি৷ আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি৷ আমরা আজকে যা করতে যাচ্ছি তা সম্পূর্ণ অন্য রকম একটা ব্যাপার৷ এটা আমাদের জন্য একটা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ, একটা বড় ঝুঁকি৷ ঝুঁকি এই কারণে যে আমরা জানি না যে শেষ পর্যন্ত আমরা মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারবো কিনা৷ এধরণের কোনো কিছু আমরা আগে কখনো করিনি, এবং অন্য কেউ কখনো করেছে কিনা সেটাও আমাদের জানা নেই৷”
রায়হান একটু থামলো৷ হেসে আবার বলতে শুরু করলো, “আমি জানি, আমি যখন প্রথম এই অনুষ্ঠানটা করার কথা বলি, তখন আমাদের মধ্যে অনেকেই এটাকে পাগলামি বলে উল্লেখ করেছিলো....”

হলঘরে উপস্থিত সবাই রায়হানের কথায় হেসে উঠলো৷ হাসি থামতে রায়হান আবার বলতে লাগলো, “আমি অনেক দিন ধরেই এই অনুষ্ঠানের কথা ভেবে এসেছি, যদিও তোমাদের বলেছি মাত্র কিছুদিন আগে৷ তবে আসলে সত্যি কথা হচ্ছে, এটা এক ধরণের পাগলামিই (এ কথায় সবাই আবার হেসে উঠলো)৷ আজকের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাব৷ আমাদের এক্সপেরিমেন্টটা নতুন হলেও, কনসেপ্টটা একেবারে নতুন না৷ ঠিক এরকম না হলেও, এবং এত ব্যাপক পরিসরে না হলেও, কাছাকাছি ধরনের এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে, আমাদের দেশে না হলেও অন্য দেশে হয়েছে৷ কিন্তু সেগুলোতে বলে নেয়া হয়েছে এক্সপেরিমেন্টটা সম্পর্কে, বলে নেয়া হয়েছে উদ্দেশ্য সম্পর্কে, কি আশা করা হচ্ছে সেটা৷ আমাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, আমরা কিছু বলছি না৷ মানুষ কিছুই জানে না আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে৷ আমাদের উদ্দেশ্যও তাই৷ মানুষ বুঝতে পারবে না যে এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট৷ আমরা তাদের কাছে আমাদের বক্তব্য এমনভাবে তুলে ধরব যেন সেটা সত্যি৷ আর আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ সেখানেই৷ আমাদের সমস্ত সফলতা নির্ভর করবে আমরা কতটা ভালোভাবে আমাদের গল্প তুলে ধরতে পারবো, কতটা ভালোভাবে আমাদের গল্প মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারবো, মানুষের কল্পনাকে জাগিয়ে তুলতে পারবো তার উপর৷”

হলঘরের কেউ কিছু বলল না৷ একটু বিরতি দিয়ে রায়হান আবার বলতে শুরু করলো, “সৌভাগ্যের বিষয়, আমাদের সাথে অহনা আছে, মানুষকে সম্মোহিত করার মত ক্ষমতা যার আছে৷ মানুষের কল্পনাকে জাগিয়ে তোলার শক্তি অহনার আছে৷ অহনার উপস্থাপনা মানুষকে ভাসিয়ে দিতে পারে৷ তাই আমাদের এক্সপেরিমেন্ট যদি ব্যর্থও হয়, মানে আমরা যে ফলাফল আশা করছি সেটা যদি নাও হয়, আসলে সেটা না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রায় ১০০ ভাগ (সবাই আবার হেসে উঠলো), অহনার উপস্থাপনার জোরেই আমরা উতরে যাব৷ আমাদের এক্সপেরিমেন্ট ব্যর্থ হলেও, অনুষ্ঠান সফল করার সব আয়োজন আমাদের তৈরি৷ তাই এটা খুবই উত্তেজনাকর, চমকপ্রদ এবং অসাধারণ একটা অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে৷ আমাদের আজকের অনুষ্ঠানের সম্মানে একটা বড় হাততালি....”

হলঘরটা হাততালিতে ফেটে পড়লো৷ একটা মুখর কোলাহলে ভরে উঠলো ঘরটা৷ এই অনুষ্ঠানটা নিয়ে সবাই কমবেশি উত্তেজিত হয়ে আছে, কেউই নিশ্চিত নয় শেষ পর্যন্ত কি ঘটবে৷ এই গুঞ্জনে তাদের উত্তেজনার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিলো৷

(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×