সুরভীর বাচ্চাটা বাঁচেনি। ফুটফুটে ছেলে-বাচ্চাটা মা'র কোলে যাওয়ার আগেই ঝরে গেল।
মুরুব্বিরা বলেন, "এই বাচ্চা তোমায় বেহেশ্তে নিয়ে যাবে"; "মন খারাপ কোরোনা, উনি যা করেন ভালোর জন্যই করেন"।
চকিতে মনে হয় বলি, "আপনি কী জানেন এই বেদনা কেন?
আপনি বুঝবেন-না। যার যায়, সে-ই বুঝে কী হারাল।"
অনন্যার যখন ডিভোর্স হলো, পাগলের মত অবস্থা তার। ১১ বছরের সংসার শত চেষ্টা করে-ও টিকাতে পারলোনা সে। কেউ কেউ বলে "ভালোই হয়েছে শেষ-পর্যন্ত। তুই তো একদিন নাহয় ওর হাতে খুন-ই হয়ে যেতি"। অনেকে বলে "তুমি দেখতে ভালো, বাচ্চা নাই, অনেক-টাকা বেতন, বয়স-ও অনেক অল্প। ভুলে যাও ওকে, আবার বিয়ে করে সংসার পাতো।" নানান কথার মাঝে এ-ও শুনতে হয় "খোরপোষ দাবী না-করাটা খুব বোকামি হয়েছে। টাকাটা সে ফেলে দিতো, কিন্তু এতগুলা টাকা এভাবে মাফ করে দেওয়াটা বাড়াবাড়ি..."
মনে মনে বলি "আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করার সময় কখনও ভেবেছিলেন, একসময় তাকে ছেড়ে দেবেন? মামলা করবেন? খোরপোষের দাবী করবেন??"
বিথী মাস্টার্স শেষ করেনি, ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। "কেন ছাড়লি, আমাকে একবার বল্লিনা ক্যান, আমরা চেষ্টা করে দেখতাম..." নানান কথার ফোয়ারার মাঝে গিয়ে তাকে পড়তে হলো।
ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিল ওদের বিজ্ঞ কর্ণকূহরে চিৎকার করে বলি "কই ছিলেন আপনারা যখন এই চাকরি-পড়াশোনা কে ইস্যু করে ওর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছিল? এই ৫ বছর কি চোখে পর্দা লাগিয়ে রেখেছিলেন?"
তবুও আমরা বলি, সব বুঝে-শুনে-ও বলি। আমি নিজে-ও অনেকবার অনেক-কে বলেছি। জানি বলে লাভ নেই, জানি কথাটা ১০০ভাগ ভুয়া সান্ত্বনাবাণী যাতে কষ্ট লাঘব হওয়ার পরিবর্তে আক্রোশ/যন্ত্রণা বাড়েই শুধু। নিজের উপর রাগ ধরে, ওপরে একজন আমাদের পুতুল বানিয়ে স্ট্র্যাটেজিক-গেইম খেলছেন মনে পড়লেই খুব অসহায় লাগে।
এর কোনও মানে হয়?