somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুক্রবার

২২ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়েই বিরক্ত হয়ে ওঠে সামান্থা। আগামীকাল শুক্রবার। এমন নয় যে সামান্থা জানত না যে কাল শুক্রবার, তবুও, সে হয়ত আশা করেছিল যে ক্যালেন্ডার তাকে অন্যকিছু জানাবে।

শুক্রবার দিনটাকে যে সামান্থা কী পরিমাণ ঘৃণা করে তা বলার মত না। এদিন স্কুল বন্ধ। বাবা-মা'র অফিস বন্ধ থাকায় এদিন দু'জনই বাড়িতে থাকেন। ফলে শুক্রবার দিনটা কাটে খুব খারাপ, খুব বেশি খারাপ। প্রায় প্রতিটা শুক্রবারই ঘরের মাঝে লঙ্কাকান্ড ঘটে। বাবা-মা'র চিৎকার- চেঁচামেচি, ঝগড়া... সব মিলিয়ে বাসাটা যেন নরক হয়ে ওঠে। শনিবার আসলেই সামান্থা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সেদিন বাবা-মার অফিস খোলা। আর রোববার থেকে তো স্কুলই শুরু হয়। সেই জীবনটাকেই সামান্থার স্বাভাবিক মনে হয়। বাড়ির বাইরে থাকলেই সামান্থার নিজেকে জীবিত মনে হয়। আর বাড়ির ভেতর-জীবন্মৃত।

মন-খারাপ-করা আরেকটা দিনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে নিতেই সামান্থা একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙ্গে মায়ের চিৎকারে। বিছানায় শুয়ে থেকেই ঘড়ির দিকে তাকায় ও। সাড়ে আটটা বাজে। সে বিছানা থেকে উঠে পড়ে। মা কেন চিৎকার করলেন জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ওর নেই। সকাল দেখেই সে বুঝে গিয়েছে যে বাকি দিনটাও আর-দশটা শুক্রবারের মতই হবে।

খাবার টেবিলে গিয়ে একটা পাউরুটিতে একটু জেলি মাখিয়ে নিয়েই সে নিজের রুমে ঢুকে পড়ে। খাওয়ার পর একটা বই খুলে পড়ার চেষ্টা করে; যদিও সে জানত যে আজ কিছুতেই পড়ায় মন বসবেনা। ওর পড়ার টেবিলের সামনেই জানালা। জানালা দিয়ে চারিদিকের দালানগুলোর ফাঁকে এক চিলতে আকাশ দেখা যায়। সেই জানালার দিকে তাকিয়েই সামান্থা আকাশ-কুসুম ভাবনায় মেতে ওঠে।

সামান্থার বয়স পনের কি ষোল। মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই একা-একা-বড়-হওয়া সামান্থা আর ওর বাবা-মা, এই তিনজন থাকে সামান্থাদের বাড়িতে। আধুনিক প্রযুক্তির উপহার ওয়াশিং মেশিন...কিংবা রাইস কুকার...এসমস্ত জিনিস থাকায় দিব্যি দিন চলে যায় ওদের। বাসায় শীর্ষেন্দুর নভেল আর অ্যাভ্রিল ল্যাভিনের গানের মাঝেই সামান্থার জগতটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। আর বাইরে বন্ধু-বান্ধবদের সাথেই নিজের জীবনটা উপভোগ করে ও। যতক্ষণ বাইরে থাকে ততক্ষণ ভালই থাকে সামান্থা। কিন্তু বাসায় ফিরলেই ও গুটিয়ে যায়। গুটিয়ে যায় নিজের ভেতর। ঘরটাকে আর ওর আপন মনে হয় না। আর ঘরের মানুষকে মনে হয় খুব অচেনা।
তা-ও ভাল ওর নিজের একটা রুম আছে। নাহলে যে ও কিভাবে বাসায় থাকত কে জানে! মা বলে, 'খোঁয়াড়'। হোক খোঁয়াড়, তবুও সামান্থার নিজের রুমটাকেই ভাল লাগে। বরং রুম থেকে বের হলেই নিজেকে খুব বেখাপ্পা মনে হয়। রোজকার অশান্তির মাঝে রুমটাই তো একমাত্র আশ্রয়।

আবার মা'র চিৎকার। সামান্থা দুর্ঘটনার আভাস পায়। আগে এসব খুব খারাপ লাগত ওর। কিন্তু এখন ও নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করে। বাসায় আগে যখন তুলকালাম কান্ড ঘটত, খুব খারাপ লাগত সামান্থার, ও অসুস্থ বোধ করত খুব। অথচ যারা তুলকালাম কান্ড ঘটাচ্ছেন তারা ঠিকই কিছুদিন পর স্বাভাবিক হয়ে যেতেন। কিংবা বলা উচিত স্বাভাবিক হবার ভান করতেন। সামান্থাই শুধু প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকত। আগে রাগ হত ওর, দুঃখ...খানিকটা অভিমানও। এখন যে কেমন লাগে সামান্থা নিজেও জানেনা। ও বোধহয় এখন কান্ত হয়ে গিয়েছে এসব দেখতে দেখতে। আবার মায়ের গলা শোনা গেল। তারপর বাবার। সামান্থা দরজাটা বন্ধ করে দেয়। আরেকটা টিপিক্যাল শুক্রবার।

বাইরের শব্দ আর নিজের ভেতরের শব্দ...সব মিলিয়ে খুব অস্থির লাগে সামান্থার। সে মেডিটেশন করার চেষ্টা করে। চোখ বন্ধ করে কাউন্টডাউন শুরু করে, ১৯, ১৮, ১৭,১৬..... ধীরে ধীরে ধ্যানমগ্ন হয়ে যাওয়াটাকে ও উপভোগ করে খুব।

হঠাৎ কাচ ভাঙ্গার শব্দ আর চিৎকার। রক্ত-জল-করা চিৎকার। ধ্যান ভেঙ্গে যায় সামান্থার। সে বিছানা থেকে নেমে দরজা খোলে। বাইরে তাকিয়ে দেখে বিক্ষিপ্ত ভাঙ্গা কাচের টুকরা। চাপা কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। সামান্থা দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর দরজাটা বন্ধ করে দেয়। আবার বিছানায় গিয়ে বসে। নির্লিপ্ত থাকার কায়দাটা বোধহয় ও অবশেষে শিখে গিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০৪
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×