somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছুতে না চাওয়া ভাল লাগা

২১ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক গুলো স্বৃতি এসে কড়া নাড়ে মাঝে মাঝে সে গুলো ভাল লাগার কিন্তু ধরে রাখবার মত নয়।

তেমনই অনেক মানুষ আসে আমাদের জীবনে যারা অনেক ভাল লাগা নিয়ে আসে কিন্তু তাদের চলে যেতে দেই আমরা আমাদের জীবন থেকে কারন তাদের গন্তব্য অন্য কোথাও।

ইন্দোসিনের বারের পাশে সবুজে নীল চোখের তাকে চোখে পড়ল..মোবাইলে কারো নাম্বারে ডায়াল করছে। বুঝলাম আমার নাম্বার..আমি তার সামনে দাড়িয়ে মাঝখানে হাটু অবধি ছোট্ট একটা দেয়াল। আমার ফোন বেজে উঠতেই সে আমার দিকে তাকাল। আমি ফোন না ধরে মুখ গম্ভীর করে হাসবনা ভেবেও হাসি চাপতে পারলাম না। সে জেনে গেল কোনটা আমি। আহঃ হোলোনা ব্যপারটা ঠিক মত মজার।

রোববারের দুপুর গুলো আমাদের সামারসেটের বাস স্টপের পাশে আইরিশ বারে বসে কাটত আমার ডিজাইন করা বাস দেখবার জন্য। বাসটা এলেই দুজন মিলে লফিয়ে উঠে নাচ শুরু করে দিতাম.... লোকজন আমাদের পাগল ভাবত আর তাতে থোড়াই কেয়ার করতাম আমরা !!

কখনো শনিবারে চলে যেতাম পুলা উবিন, সাইকেল ভারা করে চষে বেড়াতাম ছোট্টো দ্বীপটা সরাদিন। দিন শেষে খিদেয় যখন নাড়ি ভুড়ি হযম হবার জোগার তখন পাগলের মত ঝাপিয়ে পরতাম সি ফুডের কোন দোকানে। খাবার পেটে যাবার আগে কেউ কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলতে পারতাম না খিদেয়, এমনকি কি খাচ্ছি তাও অনেক সময় জানতাম না। খাবার শেষ করে দুজনে হেসে মরে যেতাম নিজেদের কাহিল অবস্থার কথা মনে করে।

পুল খেলতে গিয়ে আমি যখন গায়ের জোড়ে বল ফেলবার চেষ্টা করছি আর একটাও বল ফেলতে পারছিনা ও তখন আমাকে কায়দা শেখাবার চেষ্টায় ক্লান্ত হয়ে অবাক হয়ে সবুজ চোখে আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তকিয়ে ভাবছে আমি এত গাধা কেন...আর ওর ঐ তাকানো দেখে আমি হাসতে হাসতে মরি।

আমার চুলের প্রসংসা সে সবসময় করত!! একদিন তাকে ফোন করে বললাম আমি মাথা শেভ করে ফেলে বল্ডি হয়ে গেছি। সে যে কি এক্সাইটেড হয়ে গেল!! ভাবল সত্যি আমি তাই করেছি!! আমার বল্ড মাথা দেখবার জন্য পাগল হয়ে গেল। গাধাটাকে আমার বল্ড মাথা দেখাবের জন্য তো আর আমি আমার মাথা শেভ করতে পারিনা তাই পুরো পাকিস্তানি চুমকি দেয়া ঝকমারি ড্রেস পরে ওড়না দিয়ে মাথা মুখ ঢেকে হজির হলাম।

আমাকে দেখে সে এতই হতবাক যে কিছুক্ষন কথাই বলতে পারলনা। অনেক সময় লাগল তার নরমাল হতে। সেদিন গভীর রাতে সে ফোন করে জিঙ্গেস করল " আজ তুমি যেটা পড়লে সেটা কি জিনিস, ওটার নামটা কি, আমি জীবনে এত অবাক হইনি কোন কিছু দেখে, তোমার মাথা শেভের চাইতেও অবাক ব্যপার" জানতে চাইলাম "এই জানবার জন্য ফোন করলে?" বলল "হ্যা" হাসব না কাদব বুঝতে পারলাম না!!!

কখনো রাস্তা চলতে চলতে যদি গুন গুনিয়ে আমি "লেডি" গানটা গেয়ে উঠি ও হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরে নাচতে শুরু করে দেবে। ওকে নিয়ে গেলাম আমার নাচের ক্লাসে। সবুজ চোখে পলক না ফেলে অবাক হয়ে দেখতে থাকল আমাদের নাচ। যেন মহা সিরিয়াস একটা ব্যপার সে দেখছে!!

ফ্রাইডে নাইটে আমাদের সময় কাটতো ক্লার্কি, বোটকি আর আরব স্ট্রিটের মানুষ আর এরাবিয়ান নাচ দেখে। এরাবিয়ান বেলি ডান্স দেখে তার সবুজ চোখ ঘোলা করে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিঙ্গেস করল "এটা আবার কি" আর আমি আমার সাধ্য মাত বাদড়ামী মার্কা জবাব দিতাম।

তাকে হিন্দু টেম্পলে নিয়ে গেলাম। সে এতই অবাক হলো যে আধা ঘন্টা কোন কথা বলতে পারল না। এর পর শুরু হলে তার প্রশ্নের পর প্রশ্ন। আমি আমার ফুফুর কাছে শোনা সব মহাভারতে গল্প গুলো বলতে থাকলাম ভুল শুদ্ধ ভাবে...সে আমার জানার পরিধি দেখে সবুজ চোখ ঘোলা করে অবাক হয়ে তাকাত। খুব মায়া হতে তা দেখে।

একদিন ঠিক করলাম ওর সাথে আর দেখা করব না। ওকে এস এম এস করে তা জানালাম। সে ভিষন অবাক হলে, কিন্তু কিছু বলল না।

অনেক সময় আমারা জানি অনেক ভাল লাগা ভাল লাগতে নেই! অনেক কিছু ছুতে ইচ্ছে করলেও ছুতে নেই। দুর থেকে তাকে দেখা ভাল। কিছু মানুষকে শুধু বন্ধুত্বের ভেতরই রাখতে হয় সুন্দর স্বৃতি গুলোকে সুন্দর রাখবার জন্য।

আমরা দুজন একই শহরে বাস করি। তার বাড়ির উপর দিয়ে আমার প্রায়ই যাওয়া হয়। তবু কেউ কাউকে দেখিনা। ভাল লাগা স্বৃতি গুলো মাঝে মাঝে মনে ভির করে, নিজের মনেই হাসি ভাল লাগায় তবু তা ছুতে চাইনা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৯:৫৪
৩৪টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×