somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধে কারা জিতেছিল? কারা হেরেছিল? অথবা জীবন কেন পালিয়ে বেড়ায়

২০ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি প্রায়ই অবাক হয়ে ভাবি, একাত্তুরে মুক্তিযোদ্ধারা যদি হেরে যেতেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র কি তাদের ক্ষমা করত?
সম্ভবত না।
কিন্তু মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের পর তারা কেন ক্ষমা পেয়েছিল? পেটের দায়ে, ভয়ভীতি বা এ জাতীয় কোন কারণে যারা সাধারণ সহযোগিতা করেছিল, তাদের কথা নয়। বলছি ঘাতকরা, তাদের পরিকল্পক কিংবা সংগঠকদের কথা। এই বোধহয় আমাদের রাষ্ট্রের আদিপাপ। যে পাপের বিচার না হওয়া শেষ পর্যন্ত আরও বহু


কিন্তু ঘাতকদের বিচার কেন হয়নি? একটাই উত্তর দেয়া সম্ভব: যারা জিতেছিল, আর যারা পরাজিত হয়েছিল, তারা উভয়েই ছিল একই শ্রেণীস্বার্থের মানুষ। মরণপণ লড়াইয়ের র্পও তাদের এই ঐক্য সম্ভব হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে যে স্বপ্ন জেগে উঠেছিল, তাদের যে সংগ্রামী সংগঠন ও ঐক্য গড়ে উঠেছিলÑ তাকে রুখতে।

তাই ৭১-৭৫ সালের মাঝে নিকেশ হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধাদের বেসামরিক অংশ। নতুন রাষ্ট্রে কর্ণধারদের তৎপরতায় যাদের স্বপ্ন দ্রুত চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, তাদের বিরোধিতা সহ্য হয়নি রাষ্ট্রের। জাসদ, সর্বহারা কিংবা নক্সাল নাম দিয়ে তাদের দ্রুত খতম করা হয়।
৭৫-৮২ সালের মাঝে স্বপ্নবান মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক অংশও খতম হল অনেকগুলো প্রহসনমূলক বিচারে।

বাকিরা হতোদ্যম, হতাশ, নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেন, বিচ্ছিন্ন হয়ে রইলেন। কেউ কেউ হয়তো ভিড়েও গেলেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাণিজ্যে।

জন্মের পরের এক দশকের রাষ্ট্রের সহিংসতা আমাদের গোটা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সেরা অংশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষকে করেছে হতাশ আর নৈরাশ্যবাদী।

বড় গলায় লড়াইয়ের গল্প করছে এমন একটা অংশকে আমরা যদি দেখি এত বছরের লুটপাটের নাযক, তবে তার লড়াই থেকে কেন উদ্ধুদ্ধ হব!
আর পত্রিকার কোনায় কোনায় যদি দেখি বিপুল-বিশাল সংখ্যক লড়াকুর ভিক্ষাবৃত্তি, মোটটানা আর অসহায় জীবন সংগ্রামের কাহিনী কি আশা তা আর জাগায়!
যেনবা শহীদুল জহিরের সেই জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মত, যেখানে পুরান ঢাকা ছেড়ে না পালিয়ে গিয়ে আর কোন উপায় থাকল না, কেননা রাজনৈতিক বাস্তবতা তো স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষকে এক করে দিয়েছে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে! জীবনই তাই পিছু হটে, পালিয়ে বেড়ায়, আতঙ্কিত হয়, সুযোগ পেলেই আত্মকেন্দ্রীকও হয়ে ওঠে।

নব্বইয়ের গণঅভ্যুানে এত এত গণমানুষের রক্তদান সত্বেওনব্বই পরবর্তী সবগুলো সরকার কি প্রমাণ করেনি যে মহাচোর এরশাদের বিরুদ্ধবাদীরাও চোরই ছিল, সামান্য ঘুষের লোভে বিদেশীদের কাছে দেশকে যারা বন্ধক দিয়েছে, দেশের উৎপাদিকা শক্তির ধ্বংস করে এদেশকে যারা কেবল সস্তা মজুরের দেশে পরিনত করেছে?

৯০ পরবর্তীতে সক্রিয় রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের অনীহার কারণও এটাই। স্বপ্নভঙ্গ।

পুরো নব্বইয়ের দশক জুড়ে তাই দেখতে পাই আত্মকেন্দ্রীক, ব্যক্তিগত লাভালাভের স্বপ্ন। সমাজকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই। তাইতো লীগ-বিএনপি-শিবির মাস্তানদের হাত থেকে নিরাপত্তার আশায় প্রায়ই উচ্চমধ্যবিত্তের বিকারগ্রস্তের মত আত্মসমর্পণ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে।

হতাশা আর গ্লানির এই রাজত্ব কতকাল চলবে!

হয়তো এর অবসানের কিছু লক্ষণও আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আদি পাপের ফয়সালা না করে কোন সমাধানই হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×