somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখ দুখের অনুভূতি :: হৃদরোগ ইনস্টিটিউট

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে'র Click This Link এই পোষ্টটা পড়ে মনে পড়ল বেশ ক'বছর আগের হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একটা ঘটনার।

আমার হসপিটাল ভীতি আছে অতিমাত্রায়, সেখানে যাওয়া যতটা পারি এড়িয়ে যাই আর থাকাতো দূরের কথা। কিন্তু সেবার যখন রাতদুপুরে হার্টএ্যাটাকের জন্য মাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট নেয়া হলো, দিনের বেশির ভাগ সময় কাটতে লাগল ওখানে। প্রথমরাত আর দিন কিভাবে গেলো বুঝেই উঠিনি আতংকে। পরে এন্জিওগ্রাম করানো হবে বলে অবজার্ভেশনে রাখা হলো সি.সি.ইউ'তে। কি কি সব ইন্জেকশন চলছে একের পর এক, নানান ঔষধের ঘোরে বেশির ভাগ সময় মা থাকেন আধোঘুমের ঘোরে। এসময় পালা করে একজন দিনে অন্যজন্য রাতে এভাবে থাকতে লাগলাম আমরা দু'বোন, যদিও রাতে সি.সি.ইউ'তে এ্যটেন্ডেন্ট এ্যালাও না।

সি. সি. ইউ রোগী আটজনের বেড, টানা বারান্দা, সাথের ওয়াশরুমে - বাথরুম, চার টয়লেট, ওযুর স্হান, সরকারী হসপিটাল হিসেবে ভালোই ব্যবস্হা। মা'র পাশে বসে থেকে আস্তে আস্তে খেয়াল করতে লাগলাম রোগী আর তাদের কাছে আসা লোকজন আর আশপাশের কর্মকান্ড। নানা জনের নানান সুখ-দু:খের আলাপন শুনি। ভিড়ভাট্টা লেগেই থাকে সারাক্ষন. যদিও এটা সি.সি.ইউ! তবে দুপুরবেলাটা নিস্তব্ধ থাকে তুলানামূলক ভাবে। রোগীরা ঘুমায়, আত্নীয়স্বজনরা থাকে না তেমন।



এমনি একদুপুরবেলার ঘটনা, নার্সদের আনাগোনা নেই বললেই চলে, ওয়ার্ডে রোগীর এ্যটেন্ডেন্ট বলতে আমি আর অন্যএকজন।মা'র কাছে বসে গল্পের বই পড়ছি। হুট করে একটা মেশিন ঠেলতে ঠেলতে ঢুকলো একলোক। ওয়ার্ডের সামনের দিকের রোগীর কাছে গিয়ে কি যেন করছে, মেশিনের তার টার টানাটানি। তার কাজ সে করুক, মাথা নামিয়ে আমার বইয়ে মনোযোগ দেই। কিছু পরে কানে এলো, "সরেন এখান থেকে ইসিজি করা হবে"। তাকাতেই দেখি ঘুমের ঘোরে থাকা দুই বয়স্ক মহিলার কাছ থেকে ঘুরে এসে আমাদের তিনবেড পরের ২৩/২৪ বছরের মেয়েটার শ্বাশুড়িকে বলছে লোকটা। মেয়েটার হার্টের ভাল্ব লাগানো হয়েছিলো বেশ আগে, সেটা এখন কাজ করছে না, আবার অপরেশন করা হবে। ছেলের বৌয়ের জন্য দিনমান একঠায় অনেক কষ্ট করছিলেন ওই শ্বাশুড়ি। অপগন্ড আমি জানতামও না ইসিজি মেশিন কেমন দেখতে কিবা কেমন করে ইসিজি করা হয়, তাই আগ্রহ নিয়ে দেখতে লাগলাম । কিছু বুঝে উঠার আগেই এক জঘন্য ব্যাপার দেখলাম। মেয়েটার গায়ে ইসিজি মেশিনের যন্ত্রপাতির চেয়ে ওই লোকটার হাত চলতে লাগল কি নিপুনতায়!

কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি কি করছি বুঝে উঠার আগেই দৌড়ে ওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে চিৎকার দিতে লাগলাম - "সিস্টার, সিস্টার এটা কি হচ্ছে? হচ্ছেটা কি এখানে?" আমার মাথায় তখন ছিলো. এই লোক আর ক'টা বেড ঘুরেই আসবে আমার মা'র কাছে। এরপর ঘুরে লোকটার দিকে তাকিয়ে চিৎকার শুরু করলাম আবার। এবার ২/৪ জন নার্সের দেখা মিলল, তাদের জিজ্ঞেস করতেই তারা আমতা আমতা করে ওই লোককে বলতে লাগল "কি মিয়া, তোমারে তো শুধু মেশিনই আনতে বলছিলাম, কাজ শুরু করতে কে বলছে? বের হও জলদি।" এরপর আমার কাছে এসে বলে, "কই থেকে যে এই সব উটকো বদলোক আসে, বাদ দেন, ঝামেলা করলেই ঝামেলা আরো বাড়বে"। যেন প্রচ্ছন্ন শাসানি। ভাই ভাবী আসার পর বিকেলেই শুরু করলাম আম্মাকে কেবিনে নেবার তোড়জোর, তাও কতো তদবিরের একদিন পর পেয়েছিলাম তা।



এই ছয়দিন সি.সি.ইউ তে থাকাকালীন ওই জানোয়ারের জঘন্য আচরন যেমন দেখেছি তেমনি অভিজ্ঞতা হয়েছে মায়ের সেবায় রত আন্তরিকতা দেখার। আমাদের সামনাসামনি বেডে থাকত ওই মা-ছেলে। ঢাকায় আত্নীয়স্বজন নেই, বাবা আসতে পারেন নি, কোন বোন নেই, তাই ফাষ্ট ইয়ারে পড়া ছেলেটিই মায়ের দেখভাল করছে। ঢাকায় ওর থাকার জায়গা যেমন নাই তেমনি নাই হোটেল ভাড়া করার সঙ্গতিও। রাতে মহিলা ওয়ার্ডে ছেলেরা এ্যালাউড না, তবুও জনে জনের কাছে বলে তাদের আপত্তি নাই এটা নার্সদের জানিয়ে রাতে ওর মায়ের বেডের পাশের ফুট দু'য়েক জায়গায় ঘুমানোর ব্যবস্হা করে নিয়েছে। যদিও ডাক্তার আসলে সে লাপাত্তা হয়ে থাকে। এমনিতেই অস্বস্হিকর পরিবেশ তার উপর হসপিটাল, আধো অন্ধকারে মায়ের পাশে শুয়ে জেগে অপেক্ষায় থাকতাম কখন ভোর হবে আপু এলে বাড়ি যাবো। তো সেই ছেলে দেখতাম ভোরে আযানের আগে উঠে বাথরুম, ওযুর জায়গা ধুয়ে (সারাদিন ওয়ার্ডের লোকজন ছাড়াও কতজন যে আসতো, এমন কি মহিলা টয়লেট জেনেও ছেলেরাও ঢুকে পড়ত!!!), মায়ের কাপড় কেচেঁ বারান্দায় মেলে সব বেডের বালতি ভরে এনে রাখত(নির্দিষ্ট সময় ছাড়া পানি থাকত না বাথরুমে, যদিও ওটা সি.সি.ইউ!!)। সারাদিনের মায়ের ঔষধ আনা, নানান কাজের পরও মা-ছেলের টুকটুক কথা চলতো হাসি মুখে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:২৫
২৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×