somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাথাসপ্তশতী: সতের ’শ বছর আগেকার প্রেম ও অপ্রেম

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাচীন ভারতে একটি উল্লেখযোগ্য রাজবংশ ছিল সাতবাহন । সময়কাল: খ্রিস্টীয় প্রথম শতক থেকে তৃতীয় শতক। উত্তর ভারতে নয়- সাতবাহন রাজ্য গড়ে উঠেছিল দক্ষিণভারতে। রাজ্যটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন: সিমুক। সাতবাহন বংশের রাজধানী ছিল দক্ষিণ ভারতের প্রতিষ্ঠানপুর । হাল ছিলেন সংস্কৃতমনা একজন সাতবাহন রাজা। ইনি কেবল রাজ্যই শাসন করেননি- প্রাকৃতভাষায় লেখা কবিতার একটি সঙ্কলন গ্রন্থনা করেছিলেন। প্রাকৃতভাষা মানে প্রাচীন ভারতের সাধারণ জনগনের ভাষা- অর্থাৎ উচ্চকোটির সংস্কৃত ভাষা নয়। রাজা হাল কর্তৃক সঙ্কলিত কবিতার সঙ্কলনটির নাম: ‘গাথাসপ্তশতী।’ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবির লেখা প্রায় সাতশ স্তবক রয়েছে গাথাসপ্তশতীতে-বিস্ময়করভাবে যা ধর্মনিরেপেক্ষ-শুধু ধর্মনিরেপেক্ষই নয়- গাথাসপ্তশতীর স্তবকগুলো রীতিমতো যৌনতায় আচ্ছন্ন। যেমন:

ভেজানো দরজার কাছে দাঁড়ানো ও মেয়ে।
কাকে খুঁজছ তুমি?
উষ্ণ চোখ, বাদামি বৃন্ত-
রাস্তার দিকে চেয়ে রয়েছে।

এই চরণগুলোয় ভারতবর্ষের বৈদিক ধর্ম কোথায়? মেয়েটির দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে, তার কাতরতায় কিশোরীর চিরকালীন ছবিটি মূর্ত হয়ে আছে কি না? ছবিটি দেখে কে বলবে ভারতবর্ষ কেবলি ধর্মের দেশ! যজ্ঞপার্বণের দেশ! গাথাসপ্তশতীর কবিতার চরণে চরণে প্রেমকাতর মানবমানবীর মনোদৈহিক ক্ষুধা এমনই তীব্র ভাবে ফুটে উঠেছে যে- মনে হয়- এই যেন ভারতবর্ষের প্রকৃত মানুষে প্রতিচ্ছবি। গাথাসপ্তশতীর কবিতাগুলি পড়ে কে বলবে যে কবিতাগুলি সঙ্কলনের পর প্রায় সতের শ বছর কেটে গিয়েছে!

গাথাসপ্তশতী থেকে ক’টি নির্বাচিত স্তবকের অনুবাদ;



ও (মেয়েটি) খুবই দ্রুত ভাবতে পারে।
কিন্তু, আজ ও নিজেকে নিল সামলে।
বলল,‘সে তোমাকে দেখতে এসেছে।’
বলে প্রেমিককে দিল স্বামীর দিকে ঠেলে!



সে দিনভর কাজ করে ।
লাঙ্গল চষে জলাভুমির কাছে।
সেই রাতে তার বউ শুয়েছিল। ভারি অস্থির।
চোখ খোলা। বৃষ্টির ফোঁটা গুনছে।



মেয়েটির দরজায় সে দাঁড়িয়ে।
সে কেবলি তরমুজ বিক্রি করতে চায় না।
কিন্তু, সে তো আর ছল জানে না।
যে নারকেল নিয়ে এসেছে সে যে বেশি চতুর!



নারী যখন উর্ধ্বে -তখন তার চুল
পর্দার মতো মনে হয়। দুলছে।
কানের দুলের রিনরিন গলার হারের ঝঙ্কার।
পদ্মের ওপর মৌমাছির মতো ও ব্যস্ত।



তারা যখন থামে
মেয়েটি গলার হার দেখে লজ্জ্বা পায়।
কিন্তু যেহেতু মেয়েটি কাপড়ের কাছে পৌঁছতে পারে না-
পুরুষটিকে আবার তুলে নেয়।



ভেজানো দরজার কাছে দাঁড়ানো ও মেয়ে
কাকে খুঁজছ তুমি?
উষ্ণ চোখ, বাদামি বৃন্ত
রাস্তার দিকে চেয়ে রয়েছে।



ও চন্দ্রমূখী নারী,
তোমার আয়ত চোখের কারণে-
রাতও গিয়েছে বেড়ে-
আর আমিও সদ্ব্যবহার করি প্রহরের!



আঙুলের ফাঁকে গলে যাচ্ছে প্রেম।
হায়, হারিয়ে যাচ্ছে সবই।
মুঠো করো হাত।
মুখে মধুর স্তন।
একটি ফোঁটাও যেন মাটিতে না পড়ে।



ঈশ্বর ওকে গড়েছে।
ওর সৌন্দর্য আমার মন কেড়েছে।
ওর কথা আমার কানে, ওর হৃদয়ে
আমার হৃদয়; ওর অঙ্গে অঙ্গ
আমার।

১০

আমার মনে আছে-
ও আমার পায়ের কাছে বসে।
নিশ্চুপ।
ওর চুল নিয়ে খেলছিল আমার পায়ের পাতা।

১১

যে নারী জানে- কী করে ভালোবাসতে হয় নিজেকে-
জানে কী করে প্রশমিত করতে হয় ক্রোধ
যখন সে একই সঙ্গে শূন্য ও পূর্ন।

১২

আমি দেখছি নর্তকীদের
কী যে ভালো লাগছে।
চুলের সুগন্ধী
তুমি আমায় পা দিয়েছিলে।

১৩

মেয়েটি বলেছিল আমায় কী করতে হবে।
অথচ সকালে ও কাপড় পড়ল
বাঁশের বেড়ার ওপাশে!

১৪

ছোট ঘটনা। তবু মনে আছে।
মা রান্না করছিল। বাবা কী বলল।
মা হাসল। তারপর ছুঁলো নিজের ফ্যাকাশে মুখ।
চাঁদের কলঙ্কের মতন মায়ের চাঁদমুখ।

১৫

এইসব নীতিবাগীশরা কেন প্রাকৃত কবিতা এড়িয়ে চলে?
এড়িয়ে চলে আমাদের গান, আমাদের প্রেম ও অপ্রেম।
ওরাও তো আমাদের গান ও কবিতার নির্যাস চায় জানি
তবে কেন তারা আমাদের প্রেমকে বলে ছাই?

সূত্র:

১) সুনীল চট্টোপাধ্যায়: প্রাচীন ভারতের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)
২) Willis Barnstone এবং Tony Barnstone সম্পাদিত Literatures of Asia, Africa, and Latin America. (From Antiquity to the Present)



সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৫০
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×