somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পারমানবিক অস্ত্র কিভাবে কাজ করে? - ১

১৭ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পারমানবিক অস্ত্র এ যুগের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় গুলোর মধ্যে একটি যার ভয়াবহতা ও ধ্বংশযজ্ঞ সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই অবগত। কিন্তু এই পারমানবিক অস্ত্র কিভাবে এত বিশাল ধ্বংশযজ্ঞ ঘটায়, সে সম্পর্কে কি আমাদের ধারনা আছে? হ্যাঁ, এখানে মূলত পারমানবিক অস্ত্রের গঠন ও কার্যপ্রণালী সম্পর্ক আলোকপাত করব, কেননা এর তত্ত্বীয় বিষয় গুলো আমাদের প্রায় সকলেরই জানা।
পারমানবিক অস্ত্র সমুহ মূলত দুই ধরনের, ফিশান ও ফিউশন টাইপ। ফিউশন শব্দের অর্থ গলন। অর্থাৎ, দুটি হালকা ভরের ডিউটেরিয়াম বা ট্রিটিয়াম (হাইড্রোজেনের আইসোটোপ) পরমানুর দ্রুত গতিতে মিথস্ক্রিয়ার ফলে তুলনামুলক একটি ভারী পরমানু (হিলিয়াম) ও বিপুল পরিমানে শক্তি উৎপন্ন হয়, একে ফিউশন বিক্রিয়া বলা হয়। আমাদের অতি পরিচিত সূর্য এর উৎকৃষ্ট উদাহরন, যেখানে অনবরত ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম থেকে হিলিয়াম ও শক্তি উৎপন্ন হয়। এই ফিউশন বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে যে অস্ত্র উৎপন্ন করা হয় তাকে বলা হয় থার্মোনিউক্লিয়ার বম্ব, যা হাইড্রোজেন বম্ব(H-Bomb) হিসেবে সুপরিচিত। ১৯৫২ সালে হাংগেরীয় এক কেমিকৌশলী এডোয়ার্ড টেলর সর্বপ্রথম হাইড্রোজেন বোমা আবিস্কার করেন। অন্যদিকে, ফিশানের শাব্দিক অর্থ বিভাজন; অর্থাৎ একটি ভারী পরমানুকে দ্রুতগামী নিউট্রন দ্বারা ভেঙ্গে হালকা ভরের একাধিক পরমানু ও শক্তি উৎপন্ন করার কৌশলই হল ফিশান বিক্রিয়া। জার্মান বিজ্ঞানী অটোহ্যান ও স্ট্র্যাসম্যান এর মূল তত্ত্ব আবিস্কার করেন। পারমানবিক অস্ত্র সমুহের মধ্যে ফিশানই বহুল পরিচিত। যে সকল তেজস্ক্রিয় পদার্থ এই ফিশান ক্রিয়ায় অংশ নেয় তাদের ফিসাইল পদার্থ বা পারমানবিক বিক্রিয়ার জ্বালানী বলা হয়, যেমন ইউরেনিয়াম - ২৩৫ আইসোটোপ অথবা প্লুটোনিয়াম - ২৩৯ আইসোটোপ সমুহ। একটি দ্রুতগামী নিউট্রন ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম পরমানুকে আঘাত করে কিছু নতুন পরমানু, দুটি নিউট্রন ও প্রচুর পরিমানে শক্তি উৎপন্ন হয়, উৎপন্ন হওয়া পরমানু গুলো আবার নতুন পরমানুকে আঘাত করে বিক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষন না পর্যন্ত জ্বালানী শেষ হয়। তাই একে চেইন বিক্রিয়া বলা হয়। চেইন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তির পরিমান আইনস্টাইনের (নাকি হেনরী পয়েনকারের!) বিখ্যাত ভর-শক্তি সমীকরন (E=mc^2) দ্বারা বের করা যায় যেখানে E হচ্ছে উৎপন্ন শক্তি, m হচ্ছে ভর ও c হল শুণ্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ।
পারমানবিক অস্ত্র উৎপাদনের মূল প্রতিবন্ধকতা হল প্রকৃতিতে প্রাপ্ত তেজস্ক্রিয় মৌলের স্বল্পতা। প্রকৃতিতে ঠিক যে পরিমান ইউরেনিয়াম মজুদ তার ৯৯.২৯ শতাংশ হল ইউরেনিয়াম - ২৩৮ আইসোটোপ, যা দিয়ে পারমানবিক অস্ত্র তৈরী সম্ভব নয় কারন ইউরেনিয়াম -২৩৮ স্বতস্ফুর্ত ভাবে নিউট্রন কণিকা নির্গমন করে ভেঙ্গে যায়। তাই বাকি মাত্র ০.৭৯ শতাংশ প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ইউরেনিয়ামকে পৃথক করে বিশুদ্ধ করতেই মূল বাজেটের প্রায় ৯০ শতাংশ খরচ হয়ে যায়। এই পৃথকীকরনের কাজে যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তার নাম সেন্ট্রিফিউজ, আবার এই যন্ত্র দিয়ে ইউরেনিয়াম -২৩৮ কে প্লুটোনিয়াম-২৩৯ আইসোটোপে পরিনত করা সম্ভব যা ফিসাইল যোগ্য। ২০% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম -২৩৫ আইসোটোপকে বলা হয় হাইলি এনরিচড ইউরেনিয়াম বা (HEU) এবং ৮০% বা তার অধিক বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম -২৩৫ কে বলা হয় উইপন্স গ্রেডেড ইউরেনিয়াম।
এখন প্রশ্ন থেকে যায়, একটি পারমানবিক অস্ত্র বানাতে কতটুকু ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম লাগবে? প্রতিটি পারমানবিক অস্ত্র তৈরীতে সর্বনিম্ন যে পরিমান ফিসাইল পদার্থের প্রয়োজন হয় তাকে সংকট ভর বা ক্রিটিক্যাল মাস বলা হয়। অর্থাৎ, এর কম পরিমান ফিসাইল পদার্থ থাকলে নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া শুরু হয়না। এই সংকট ভর ফিসাইল পদার্থের ঘনত্ব, আকৃতি, বিশুদ্ধতা এবং পদার্থটিকে ঢেকে রাখার জন্য যে বহিরাবনের ধাতব আবরন বা শেল ব্যবহৃত হয় তার ওপর নির্ভর করে। এখানে বলে রাখা ভাল, ফিসাইল পদার্থ তেজষ্কৃয় বলে তারা সর্বদা স্বতস্ফুর্ত ভাবে নিউট্রন কণিকা নিঃসরন করে। তাই জ্বালানীর বহিরাবনটি যদি এমন পদার্থের নির্মিত হয় যা উক্ত নিউট্রন কণিকা সমুহকে কোন উপায়ে প্রতিফলিত করতে পারে, তবে জ্বালানীতে নিউট্রন কণিকার ঘনত্ব বেড়ে যাবে ফলে নিউট্রনের সাথে পরমানুর সংঘর্ষের প্রবনতা বৃদ্ধি পাবে। তাই এই বহিরাবনকে রিফ্লেক্টর টেম্পার বলে যা বেরিলিয়াম ধাতুর তৈরী।
সংকট ভরের চেয়ে কম পরিমান ফিসাইল পদার্থকে সাব ক্রিটিক্যাল মাস বা অসংকট ভর এবং সংকট ভরের চেয়ে বেশী পরিমান ফিসাইল পদার্থকে সুপার ক্রিটিক্যাল মাস বা অতিসংকট ভর বলে। বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের সংকট ভর ৫৬ কিলোগ্রাম ও প্লুটোনিয়ামের বেশ কম, মাত্র ১০ কিলোগ্রাম। অর্থাৎ, একটি পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করতে কমপক্ষে ৫৬ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম অথবা ১০ কিলোগ্রাম প্লুটোনিয়াম লাগবে। এখন অবশ্য মাত্র ৫ কিলোগ্রাম প্লুটোনিয়াম দিয়ে স্যুটকেইস আকারের পারমানবিক বোমা প্রস্তুতি সম্ভব, কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্লুটোনিয়ামের বিশুদ্ধতা অত্যন্ত বেশি। ... (চলবে)

পারমানবিক অস্ত্র কিভাবে কাজ করে? - ২
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:৫০
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×