somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসুন্ধরা অগ্নিকান্ড ও আমাদের সচেতনতা

১৩ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুপুর থেকেই দেখানো হচ্ছিল সব চ্যানেলে। বিকেলের দিকে মনে হলো আগুনটা তার সর্বোচ্চ বিস্তৃতি পেয়েছে। এর ভেতরে ভবনের মূল স্থপতির একজন- ফয়েজ ভাই এর মন্তব্যও শুনলাম দুইটি চ্যানেলে। সাংবাদিকদের নানান মন্তব্যে মনে হলো কিছু বিভ্রান্তির অবকাশ থেকে গেছে।
বসুন্ধরা কমপ্লেক্সে বা যে কোন অনুমোদিত বহুতল ভবনে যে কয়টি অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নেয়া হয়, তার মধ্যে থাকতে হয়-
১। ফায়ার ডিটেকশন এলার্ম ইভ্যাকুয়েশন এলার্ম,
২। ফায়ার হাইড্রেন্ট প্রতিটি ফ্লোরের জন্য, এবং এর আলাদা ওভারহেড ট্যাংক ও আলাদা মোটর, যেখানে সবকটি নল পানিতে পূর্ণ থাকতে হবে সবসময়।
৩। সব লবিতে ফায়ার একস্টিংগুইশার- co2 ও পাউডার বেইজড ।
৪। মনিটরিং সিস্টেম ( এটা বাধ্যতামুলক নয়)
৫। ওয়াটার স্প্রিংলার সিস্টেম । যেটা এলার্মের সাথে সাথে নিজ থেকে পানি ছিটানো শুরু করবে (এটাও বাধ্যতামুলক নয়)
৬। ফায়ার এক্সিট সিড়ি; যেটা ফ্লোরে আগুন ধরলেও ব্যবহার যোগ্য থাকবে।
৭। ফায়ারম্যান লিফ্ট, যেটা আগুন নিভানোর কাজে অগ্নি নির্বাপক কর্মিরা ব্যবহার করবেন। (এটাও বাধ্যতামুলক নয়)
বসুন্ধরায় ১,২,৩,৪, ৬, ৭ এই সব কয়টি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। ৫নং টা জানা যায়নি।
কিন্তু সমস্যা বড় হয়ে দেখা দেয় যখন ডিটেকশন এর পর, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেয়ার মাঝখানের সময়টা - কত টুকু পাওয়া যাচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রে, প্রশিক্ষণ এর অভাব আমাদের জন্য খুব বড় সমস্যা হয়ে বার বার দেখা দিচ্ছে। কারণ আগুন ছড়িয়ে পড়তে এক দেড় মিনিটের বেশী না ও লাগতে পারে। একটু অবহেলাও অনেক প্রাণঘাতী হতে পারে।
তাই বসুন্ধরা ভবনে, ১০ তালায় অবস্থিত মনিটরিং সিস্টেম থেকে দেখে, ১৮ তালায় পৌঁছানো কতটুকু বাস্তবতা সম্পন্ন- প্রশ্ন থেকেই যায়।
আগুন না ছড়ানোর আরেকটা প্রসেস হচ্ছে 'কম্পার্টমেন্ট করে ফেলা। এতে কোন ফ্লোরে আগুন লাগলে তা যেন পরের ফ্লোরে না যায়, সেই ভাবে ডিজাইন করা হয়। বসুন্ধরা ভবনে এই ব্যাপারটি কিছুটা ছিল। কিন্তু বাহ্যিক সৌন্দর্যের খাতিরে এলুমিনিয়াম ক্ল্যাডিং বা আবরণ যেটা করা হয়েছিল; সেটা আগুনটাকে -পরের ফ্লোরগুলিতেও ছড়াতে সাহায্য করলো।
যেটা হয়তো আগে আমলে নেয়া হয়নি।
যাই হোক, এ ধরণের পরিস্থিতিতে আমাদের করনীয় আসলে নিম্নরূপ-
১। ফায়ার কোড মেনে বিল্ডিং ডিজাইন ও তার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ।
২। ফায়ার এলার্মের সাথে সাথে কেবল মাত্র ফায়ার এক্সিট সিড়ি ব্যবহার করে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে।
৩। কোনভাবেই তাড়াহুড়া বা শৃংখলা ভঙ্গ করা যাবেনা।
৪। অফিসের সবাইকে জানতে হবে অগ্নি নির্বাপনের কোন সুবিধাটা রাখা হয়েছে এবং কোথায় আছে, এর ব্যবহারই বা কিভাবে করতে হবে।
৫। নিয়মিত ফায়ার ড্রিল এ অংশ নেয়া এবং এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষকে সচেতন রাখা।
৬। আগুনে পুড়ে মারা যাবার চাইতে বিষাক্ত গ্যাসে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। তাই যদি কোন রুমে ধোঁয়া দেখতে পান মাথাটা ফ্লোরের ২/ থেকে ২ ১/২ ফিটের ভেতর রাখার চেষ্টা করুন ও সেভাবে দ্রুত চলে বের হয়ে যান। কারণ বিষাক্ত গ্যাস হয় ভারী নয় হালকা হয় তাই শুয়ে পড়লে বা দাড়িয়ে থকলে ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
৭। আগুন লাগা ভবনের যে কোন রুমের দরজা খোলার আগে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখুন উত্তপ্ত কিনা, অথবা নীচ দিয়ে ধূয়া বের হচ্ছে কিনা লক্ষ্য রাখুন, প্রয়োজনে সেই দরজা এড়িয়ে চলুন।
৮। আগুন নিভে যাওয়ার লক্ষন- অল্প সময়ে না দেখলে, দ্রুত বেড়িয়ে পড়ুন। পানি কিংবা ফায়ার একস্টিংগুইসার সব সময়ে পর্যাপ্ত নাও হতে পারে; অযথা ঝুঁকি নিবেন না

ঢাকা শহরে ফায়ার ফাইটিং এর জন্য দুটি যান্ত্রিক সিড়ি আছে- একটি ১০০ ও অপরটি ১৫০ ফিট, যা ১৪/১৫ তলার উপরে কাজ করবে না। এটা নিয়েও সরকারকে ভাবতে হবে, আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় কিনা। আগুনের দূর্ঘটনা উন্নত বিশ্বেও হয়ে থাকে, সেখানেও অনেক জটিলটা সৃষ্টি হয়। তবে সচেতন থাকাটাই দূর্ঘটনা এড়ানোর সবচেয়ে বড় উপায়।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৯:৩৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×