somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানা-ষড়যন্ত্র: সাত সতের না বুঝিয়ে তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করুন

১২ ই মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করার পর আজ ৯দিন। গত ৩ মার্চ তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে, সাতদিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট পেশ করবেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এখন বলা হচ্ছে ১৯ মার্চ-এর মধ্যে তদন্ত শেষ হবে। তারপর আমরা পেশকৃত রিপোর্ট-এ জানতে পারবো অভিযুক্ত কারা, সেদিন কি হয়েছিলো, কেন হয়েছিল! সরকার যখন আবেগ আপ্লুত হয়ে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার অতি আত্মবিশ্বাসী সিদ্ধান্ত সবাইকে জানালেন, তখনই বুঝেছিলাম সরকারের তদন্ত নিয়ে পরিস্কার কোনো প্ল্যান নেই। কোনো একটা পক্ষকে স্বস্তি দিতে কিছু একটা বলতে হবে তাই বলা। পরে কিন্তু বিভিন্ন বিশ্লেষনে আলোচকরা বলেছেন, এই ধরনের একটি তদন্ত ৭ দিন সময় বেধে দিয়ে হবেনা। এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বললেন," এটাতো মধুর ক্যান্টিনের ঝামেলা নয়, যে একটা তদন্ত কমিটি করে ৭দিনের মাথায় রিপোর্ট দিয়ে দিবে।"

১৯ মার্চ মানে সরকার ৭দিন থেকে ১৭দিন হাতে নিলেন। আর এই সাত-সতেরোর মধ্যে সরকারের তদন্ত কমিটিকে সহায়তা করতে ঢাকায় এসেছে আমেরিকার এফ বি আই ( ফাও বইসা ইনভেস্টিগেশান) ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড । যেখানে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ ঘটনার আগে ও পরে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সেখানে তাদের কোন তথ্যের ভিত্তিতে বা সূত্রের ভিত্তিতে এফ বি আই ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সহায়তা করবে? আর এফ বি আই -এর প্রফেশনালিজমের কথা আমরা জানি। আসলে সবকিছুতো হলিউডের ফিল্মনা যে সেখানে একজন টমক্রজ থাকবে, মিশন ইম্পসিবল পসিবল হয়ে যাবে!!!

ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ফ্রন্ট দেশের আভ্যন্তরীণ ও সেনসেটিভ ইস্যুতে বাইরের গোয়েন্দার প্রবেশে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। আইনমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী যদি আর্মি এ্যাক্ট অনুযায়ী হত্যাকারীদের বিচার হয় তাহলে এর তদন্ত আর্মিদের হাতে ছেড়ে দেয়াই ভালো ছিলো। বাইরের হাইপ্রোফাইল ও এক্সপেন্সিভ তদন্ত সহায়ক প্রতিষ্ঠান এখানে কি করবে? আর এরা বিগত দিনগুলোতে দেশের ঘটে যাওয়া বিশেষ ঘটনায় অন্তর্ভুক্তির পর কি রিপোর্ট দিয়েছে? কোনো কার্যকারিতা আমরা পেয়েছি এদের কাছ থেকে? সবকিছুই রাজনৈতিক শাক-সবজির আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে, প্রতিটি নির্বাচিত সরকার এসব হাইপ্রোফাইল প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। এরাও দায়সারা গোছের দায়িত্বপালন করে, জনগণের ট্যাক্সপালিত সরকারের কাছ থেকে সম্মানী নিয়ে চলে গেছে। এবারও হয়তো সেটাই হবে।

আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। এটা মনে হয় আমাদের পঁচা রাজনীতির সবচেয়ে ব্যবহৃত অপসংস্কৃতি- তদন্ত চলাকালীন সময়ে বা তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে অন্যকে দোষারোপ করা। মিডিয়া আবার এগুলো নিয়ে বিশেষ মাতামাতি করে থাকে। লেজুড়বৃত্তি প্রিয় কিছু বিশেষ ঘরানার বুদ্ধিজীবিরা বিভিন্ন সেমিনারে, গোলটেবিল বৈঠকে বলে দেন অপরাধী কারা, এদের গুয়ের কালার কি...ইত্যাদি!!! এইতো কিছুদিন আগে আওয়ামী-ফ্রীক বুদ্ধিজীবি আবদুল গাফফার চৌধুরি বললেন, "খালেদা জিয়া ও সাকাচৌকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেই সব বের হয়ে যাবে।" কথাটা তিনি কেন বললেন, কোন সময়ে বললেন , তার কোনো ইয়ত্তা নেই কিন্তু কিছু একটা বলে দলকে খুশি রাখতে হবে ব্যস...তাই বলা। দেশে ঘটে যাওয়া একটা সিরিয়াস মেসাকার নিয়ে যেখানে তদন্ত হচ্ছে সেখানে মুর্খের মতো কাদা ছোড়া ছুড়ি করা কিসের লক্ষণ? এখানে সরকার-বিরোধীদল ও সশ্লিষ্টরা কতোটা সিরিয়াস?

প্রথমে বিডিআর বিদ্রোহ মনে হলেও এখন বিভিন্ন আলামত পাওয়ার পর মনে হচ্ছে এটা ষড়যন্ত্র। কিন্তু কেন ষড়যন্ত্র, কাদের ঘড়যন্ত্র, কার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পক্ষ-বিপক্ষের অবস্থান, এর গভীরতা, উদ্দেশ্য ইত্যাদি খুব পরিস্কার ভাবেই তদন্ত করে সামনে নিয়ে আসতে হবে। এখানে আর্মি অফিসারদের পাশাপাশি বিডিআর জাওয়ানরাও মারা গিয়েছে। তাই ক্ষতিগ্রস্থ উভয়পক্ষের সাথেই তদন্তকারীর কথা বলতে হবে। সরকার পারবে কিনা জানিনা, তদন্ত কমিটিকে পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। যদি প্রয়োজনে রাজনীতিবিদদেরও ঘাটাঘাটি করতে হয়, তদন্ত কমিটি করবে, বিব্রতবোধ করলে চলবেনা। জনগণ একটা বিশ্বাসযোগ্য , গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও বাস্তবসম্মত তদন্তে সবসময়ই সহায়তা করতে চাইবে এবং গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশে ইউটিউব বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিলো। এর আইপি ব্লক করে দেয়া হয়েছিল। কেন, তার কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে শোনা গেছে বিভিন্ন কথা। যা ছিল অবিশ্বাস্য ও অভাবনীয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মানুষগুলোকে আগে তীক্ষ্ণ ধীসম্পন্ন ও ভবিষ্যৎ দেখতে জানতে হবে। বলদরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পারেনা। পারলেও সেটা এনালগ বা ডিজিটাল কিছুই হয়না, হয়- টালমাটাল বাংলাদেশ।

দেশের ভালো হলে ব্যক্তিস্বার্থ আর মন্দ হলে স্বার্থপরতা -এই নীতি বর্জন করতে হবে। দেশপ্রেমের রাজনীতি আর রাজনৈতিক দেশপ্রেমের মধ্যে জনগণ এবার ঠিকই সীমারেখা টানতে সক্ষম হবে। কারণ, আমরা কারো বিরুদ্ধে কোনো দিন ষড়যন্ত্র করিনি আর আমাদের বিরুদ্ধে কারো অহেতুক ষড়যন্ত্র প্রত্যাশাও করিনা। আর যাই হোক, ষড়যন্ত্রের মধ্যে অন্তত শান্তিময়, সুন্দর ও সভ্যদেশ গড়া যায়না।

(রিপোস্ট )
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×