somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংখ্যামিত্র 'পাই’, অর্পিত ‘পাইদিবস’, অত:পর আমার ‘পাই মানব’ হয়ে উঠা

১২ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই পর্বে পাই এবং পাই দিবস সংক্রান্ত আলোচনা হবে। ‘পাই মানব’ হওয়ার কাহিনী পরের পর্বে। আজই পোস্ট করব ইনশাল্লাহ)

পাইকে ধরা হয় সবচেয়ে সুন্দর সংখ্যা, আবার কোন কোন গণিতবিদ একে ‘নি:সঙ্গ সংখ্যা’(loneliest number) বলে থাকেন।অবশ্য কেউ কেউ একে সংখ্যার বদলে ‘আনুপাতিক ধারণা’ হিসেবেও বিবেচনা করে থাকেন।
ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি অনুসারে ‘কোন বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত সর্বদা একটি ধ্রুবসংখ্যা হয়”-এই সংখ্যাটিকেই গ্রীক বর্ণ ‘পাই’ য়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। বৃত্তীয় ধারণা প্রয়োগ করেই পাইয়ের আরেকটি পরিচয় এমন: বৃত্তের ক্ষেত্রফল ও ব্যাসার্ধের বর্গের অনুপাত। ত্রিকোণমিতির ধারণা থেকেও ‘পাই’ কে সংজ্ঞায়িত করা যায়, cos(x)=0 শর্তাধীনে x এর সর্বনিম্ন মানকে দ্বিগুণ করলে প্রাপ্ত মান হিসেবে।

পাই যেহেতু অন্তহীন অমূলদ সংখ্যা, তাই এর মান নির্নয়ে বহুকাল থেকেই গণিতবিদ-বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। আর্কিমিডিসের প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে ; বহুভুজ ও অন্তর্লিখিত বৃত্তের তত্ত্ব প্রয়োগ করে তিনি নিশ্চিত করেন যে পাইয়ের মান ২২৩/৭১ থেকে ২২/৭ এর সাংখ্যিকমানের মধ্যে অবস্থান করবে।গণিতবিদ লিবনিজের অবদানও পাইয়ের মান নির্ণয়ে উল্লেখযোগ্য। তিনি একটি ধারা আবিষ্কারকরেন যার মাধ্যমে একটি দশমিকের পর একটি নির্দিষ্ট ঘর পর্যন্ত পাইয়ের সঠিক মান পাওয়া যায়।তার প্রস্তাবিত ধারাটি:
Pi=4/1-4/1+4/3-4/5+4/7-4/9+……….
গণিতবিদ লি হুই একটি এলগারিদম প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে পাইয়ের আসন্ন মান নির্ণীত হয় ৩.১৪১৬; পরবর্তীতে চীনা গণিতবিদ জু চোংঝি তার এলগারিদম ব্যবহার করে পাইয়ের মান নির্ণয় করেন ৩.১৪১৫৯২৬ পর্যন্ত যা দীর্ঘদিন নির্ভুল মান হিসেবে পরিচিত ছিল।

ক্যালকুলাস ও অসীমতক ধারার আবিষ্কার পাইয়ের মান নির্ণয়ের প্রচেষ্টাকে আরোও বেগবান করে। এসময় মাধব নাম্নী এক গণিতবিদ দশমিকের পর ১১ ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান নির্ণয়ে সক্ষম হন।
পাইয়ের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আর্কিমডিসের অনেক পরে আরেকজন ইউরোপীয় গণিতবিদের অবদান লক্ষ্য করা যায়। এই গণিতবিদের নাম লুডলফ স্যিলন, যিনি জ্যামিতিক পদ্ধতিতে ৩৫ দশমিক স্থান পর্যন্ত পাইয়ের মান নির্ণয় করেন, এমনকি স্যার আইজাক নিউটনও ১৫ দশমিক স্থান পর্যন্ত পাইয়ের মান নির্ণয়ে সমর্থ হয়েছিলেন।তবে, ১৭০৬ সালে জন ম্যাকিনই সর্বপ্রথম পাইয়ের মান নির্ভুণভাবে দশমিকের পর ১০০ ঘর পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারেন। উনিশ শতকের শেষের দিকে উইলিয়াম শ্যাকস নামের অন্য এক গণিতবিদ ৫২৭ দশমিক স্থান পর্যন্ত মান নির্ণয় করেন।তবে, পাই প্রসঙ্গে বললেই যার কীর্তি উল্লেখ করতেই হবে তিনি উপমহাদেশের বিস্ময়কর গণিত-প্রতিভা শ্রীনিবাস রামানুজন।তিনি বেশ কয়েকটি মৌলিক সূত্র উদ্ভাবন করেন পাইয়ের মান নির্ণয় করতে, তন্মধ্যে দুটি সিরিজ বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কম্পিউটার যুগে পাইয়ের মান নির্ণয় করাটা অনেক সহজসাধ্য হয়ে পড়লেও এখনো অনেকেই পাইয়ের মান নির্ণয়ের পদাধতি উদ্ভাবনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে , প্রথম আলো মারফত জানতে পারলাম ‘সৌমিত্র’ নামের এক বাংলাদেশী তরুণ পাইয়ের মান নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে, যেটি ‘সৌমিত্র স্বাক্ষর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই পদ্ধতিতে নির্ণীত পাইয়ের মান মূল মানের সঙ্গে অনেকটাই সঙ্গিতপূর্ণ বলে সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

এবার ‘পাইদিবস’ প্রসঙ্গে আসি। ‘পাই দিবস’ কনসেপ্টটা ব্যক্তিগতভাবে আমি অপছন্দ করি, তবে সেই অপছন্দটা কোনক্রমেই ভালোবাসা দিবস, বন্ধু দিবস, কিংবা পাপী দিবসের মত নয়, বরং একজন অকৃত্রিম সংখ্যাপ্রেমী হিসেবে এই দিবসে আরও কয়েকজন সংখ্যাপ্রেমীর নির্মল আনন্দ দেখতে ভালই লাগে।
১৪ই মার্চ দিনটি পাইদিবস হিসেবে পালিত হয় পাইয়ের প্রথম ৩ ডিজিট ৩.১৪ এর অনুসারে। উল্লেখ্য মহামতি আইনস্টাইনের জন্মদিনও ১৪ই মার্চ।১৯৮৮ সালে সানফ্রান্সিসকোতে প্রথমবারের মত পাইদিবস পালিত হয়। ল্যারি শো নামের একজন প্রবীণ পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন এ দিবসের প্রধান উদ্যোক্তা।
১৪ই মার্চ দুপুর ১টা ৫৯মিনটিকে পালন করা হয় ‘পাই মিনিট’ হিসেবে (৩/১৪;১:৫৯ অনুসারে), এছাড়া পাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘ঢ়i approximation day’ নামে যেসব দিবস পালিত হয়, সেগুলো নিম্নরূপ:
=২২শে জুলাই -‘, যেহেতু পাইয়ের মানকে একসময় ২২/৭ এর সমান ধরা হত।
=১০ই নভেম্বর_ বছরের ৩১৪তম দিন (৩.১৪ অনুসারে)
=২১ডিসেম্বর, দুপুর ১টা ১৩মিনটি , এটি বছরের ৩৫৫তম দিন ( চৈনিক হিসাবানুযায়ী পাইয়ের মান ৩৫৫/১১৩ এর সমান).......

[ এই পোস্টটি দেয়ার পরিকল্পনা ছিল ১৪ই মার্চ, কিন্তু কাল বাসায় যাচ্ছি ২দিনের জন্য। ফিরতে ফিরতে ১৪ তারিখ চলে যাবে। তাই আগেই দিলাম। সবাইকে পাইদিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই]


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:১৪
২৩টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×