somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ আমারে মফিজ বানায়া দাও

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটা প্রথম যেদিন ঢাকায় আসল। হাতে একটা চটের ব্যাগ। পাটের বলা চলে। যে ব্যাগ দিয়ে কর্তারা বাজার সদাই করে। অথবা গেরামের যে নতুন বউটা কাপড় ভর্তি করে শ্বশুর বাড়ি থেকে প্রথম বাপের বাড়ি আসে। ঠিক সেই রকমের একটা ব্যাগ ভর্তি কলেজ আর স্কুলে পাঠ চুকানো বই নিয়ে। বইয়ের ভিড়ে প্রয়োজনীয় জামা-কাপড়ের ঠাঁই হয়নি যে ব্যাগে। কুলিরা যেভাবে বস্তা কাঁধে নেয়, ঠিক সেই ভাবে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে সোজা ফকিরাপুল। পরবর্তি গন্তব্য জিগাতলা, ধানমন্ডি। জিগাতলা হাজি আব্দুল হাই রোড। এর মধ্যে ‘এইখানে দেশ-বিদেশে ফোন করা যায়’ দোকান থেকে পূর্ব পরিচিত বড় ভাইকে ফোন করে কীভাবে যেতে হবে তার ফিরিস্তি নেওয়া হয়ে গেছে। মেসে পৌঁছানোর পর ছেলেটাকে দ্যাখে মেসের সবাই কোন এক ইংরেজি সিনেমায় দেখা এক সামুদ্রিক আজব প্রাণী যার চেহারা অনেকটা ঘোড়ার মতন বা আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ভারতীয় সিনেমা অভিনেতা ঋতিক রোশনের (নিশ্চয় শ্রদ্ধা রেখেই এই তুলনাটা দেয়া হল) চেহারার মতন প্রাণীটা দ্যাখে যেভাবে অভিনেতারা তার সাথে তাবৎ দর্শকেরা চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে ছিল, সেই দৃশ্যটাই সেদিন ছেলেটা দ্যাখে ছিল। তাতে অবশ্য ছেলেটার সেদিন কিছুই আসে যায়নি। গেরামের ছেলে। মফিজ। মফিজ মার্কা চেহারা। মফিজি হাব-ভাব।
মেসের বড় ভায়ের বন্ধুঃ ইস ছেলেটাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া তো মাইরি বিপদের। আজব। কইত্থে আসে এইসব চেংরা। এরে মানুষ করা লাগব। তা না হলে তো মান-সম্মানের চাকা পাঙ্কচার হয়া যাবে।
তালিম-১ঃ বাইরে গেলে উঁচা উঁচা ফ্ল্যাট দেইখা হা করে তাকায়ে থাকবা না। রাস্তা পার হবার সময় নিঃশ্বাস বন্ধ করে দৌড় মারবা না।
সবক-২ঃ স্মার্ট মেয়ে মানুষ (আসলে নগ্ন) দেইখা ফ্যাল ফ্যাল কইরা তাকায়ে থাকবা না। রাস্তায় বুড়ো মানুষ দ্যাখলে যেমনে কইরা সালাম দাও, অমনে সালাম দিবা না।
মেসে ফিরে এসে।
টিচিং নং-৩ঃ মেসে যত বড় ভাই আছে এরা তোমার সিনিয়র। এদের সালাম দিবা। ভদ্রভাবে কথা বলবা। আর শোন। যেমনে কইরা আসসালামু আলাইকুম দেও, অমনে না মিয়া। একটু স্মার্ট হও। স্লামালাইকুম বলবা। বুঝছ? জ্বী ভাইজান। আরে শালার আজব তো। কত্তবার কইছি, ভাইজান বলবা না। ভাইয়া বলবা। আর অই যে আমাদের বাবা আসলে যেমনে চাচা কও, অইসব বলবা না। বাবা ভাববে কোন আজব চিড়িয়া আনস্মার্ট পোলাপাইনের লগে থাহি। আঙ্কেল বলবা।

কিছুদিন পর।
গেরামের ছেলেটা। হেই ব্রু। কী অবস্থা? কেমন চলছে ম্যান? চলেন চা-সিগ্রেট খাইয়া আসি। চল্‌। খাওয়া শেষ। এই মামা বিল পরে দিমু। লিইখা রাইখো। ভাই আপনার গার্লফ্রেন্ডটা...... কোনডার কথা কস। নর্দানেরটা। কী অইছে? উনি ভাই হেব্বি। তাই? হ। থাঙ্কু।
হাই, নিশি। দোস্ত তোকে আজ খুব সেক্সি লাগছে। অ ডার্লিং ইউ নো আম সবসময় লাইক দ্যাট। থ্যাঙ্কু বেবি।
বাবাকে ফোনেঃ বাবা, আমার একটা টি-স্কেল কিনতে হবে। তুমি আট হাজার টাকা পাঠিও তো আজই। এখন রাখি, আমি বিজি। ক্লাস আছে।
বাবাঃ বাবা, তোমার কী রাতেও ক্লাস হয়? কী স্কেল না কইলি। অইটা কী জিনিস বাবা? খুব দরকার কী? তোমার মা’র কানের দুলডা বিক্রি করে পাডান লাগব। বাবা, তুমি বুঝবা না। ইউ টক মাচ। তুমি যেমনে পারো পাঠাও তো। খুব দরকার।

চার বছর পর।
কী হইল জীবনে? হায়। ইস। গেরামের সেই মফিজ ছেলেটাই তো ভাল আছিল। আমি মফিজ হইয়া যাইতে চাই। আল্লাহ আমারে মফিজ বানায়া দাও।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×