somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু স্মৃতি ... ... তিক্ত স্মৃতি

১১ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কাছে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু সময়ের মাঝে অন্যতম হল আমার হোস্টেল(রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ) জীবনের স্মৃতি।কিন্তু তার মাঝেও কিছু তিক্ত স্মৃতি আছে। তার মাঝে হোস্টেল জীবনের প্রথম বছরের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিঃ

হোস্টেল আমাদের খুব নিয়ন্ত্রিত এবং খুব ডিসিপ্লিন্ড জীবনযাপন করতে হত। আমি বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ার পরও আমার বাবা মা আমাকে ক্লাস ফোর এ থাকতে আমাকে হোস্টেলে দিয়ে দেন। অনেক আদরের ছেলে ছিলাম। হোস্টেলে এসে প্রচন্ড কষ্ট হত।প্রথম দিনের স্মৃতি এখনো মনে আছে। আমি কাঁদব না কাঁদব না ভেবেও কেঁদে দিয়েছিলাম:((। আমার কান্না দেখে আম্মুও কেঁদে দিয়েছিল। সবাই তখন স্বান্তনা দিচ্ছিল যে এখানে অনেক বন্ধু হবে। সবার সাথে থাকতে কষ্ট হবে না। কিন্তু প্রথম কয়েকদিন কেউ আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বলত না। তারমাঝে আমি ক্লাস শুরু হওয়ার তিন মাস পরে ভর্তি হওয়ায় সবাই আমার থেকে দূরে দূরে থাকত। পরে অবশ্য সবার সাথেই ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আমি হোস্টলে যাওয়ার আগে নিজের হাতে খুব কম খেয়েছি। তাই সবচেয়ে বড় প্রবলেম ছিল হাত দিয়ে খাওয়া। ঠিক মত খেতে না পারার কারনে অন্য সবাই খুব হাসাহাসি করত(করারই কথা)। আর আমি যে ঠিক মত খতে পারতাম না তার সাক্ষী ছিল আমার শার্ট। সব ঝোল লেগে থাকত। কাপড় ধুতে গিয়ে খবর হয়ে যেত। আরো একটা বড় সমস্যা ছিল আমি মাছ খেতে পারতাম না। আমাদের কলেজে প্রতিদিন নিয়ম করে দুপুরে মাছ দিত। আর রাতে মাংস। মাছের সাথে ডাল দিত। ডাল এ আবার লবন কম হত। দুপুরে প্রায় খেতে পারতামই না। এই ডাল দিয়েই কোনমতে খেতাম। আমার টেবিলের সিনিয়র ভাইয়ারা যখন টের পেলেন আমি মাছ খাইনা। আমাকে জোর করে মাছ খাওয়াতেন। কিন্তু আমি মাছ এর গন্ধই সহ্য করতে পারতাম না(এখনো পারি না)। আর পাঙ্গাস মাছগুলা এমন তেলতেলে ছিল যে ওইটা প্লেট এ রাখলে আমার বমি আসত। পাঙ্গাস ছাড়াও রুই মাছ দিত। সেটাও খেতে পারতাম না। তখন মাছ না খাওয়ার জন্য কাঁটার সাথে মাছের অনেক্টুকু অংশ ফেলে দিতাম। বড় ভাইরা এটাও খেয়াল করে বলেছিলেন আর যদি কখনো এইরকম করি তাহলে বনপ্লেট থেকে তুলে মাছ খাওয়াবেনX(। পরের থেকে অন্য বুদ্ধি আঁটলাম সারাটা সময় খাচ্ছি এই ভান করে যেতাম। ডাইনিং সবার শেষ পর্যন্ত বসে থাকতাম। পরে সবাই চলে গেলে মাছ ফেলে দিতাম। কিন্তু তারপরও আমাকে মাছ খেতে হয়েছিল। বেশ কয়েকবার। পরের বছরের বড় ভাইরা অনেক ভালো ছিলেন। কেউ জোর করতেন না।

আমাদের ভোর পাঁচটায় উঠতে হত। পাঁচটায় উঠে ৬টায় পিটি করতে যেতে হত। এত সকালে ঘুম থেকে উঠতে খুব কষ্ট হত। কিন্তু যারা দেরী করত তাদেরকে স্যাররা মাইর দিত। মাইরের ভয়ে উঠে যেতাম। ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। সকালে পিটিটা খুব কষ্টকর ছিল। অনেকটুকু রাস্তা দৌড়াতে হত। মাঝে মাঝে সুযোগ পেলেই হাটতাম। আবার স্যাররা বাঁশি দিলে দৌড়াতে হত। পিটি শেষ করে যখন হোস্টেলে ফিরে আসতাম তখন যে কি শান্তি লাগত। পুরো হোস্টেল জীবনেই আমার কাছে পিটিটা অসহ্য লাগত। বিকালে ছিল আমাদের খেলার সময়। আমরা প্রায় ৪০ জন মিলে খেলতে হত। ফুটবল আর ক্রিকেট খেলা হত। এখন এতজন মানুষ মিলে খেললে আমি প্রায় খেলায় সুযোগ পেতাম না বললেই চলে। আমি খুব ভালো খেলোয়াড় ছিলাম না। তাই পুরো ১ ঘন্টা সময়ের মাঝে ফুটবলে পা ছোয়াতাম গড়ে দুই থেকে তিনবার। তাও আন্দাজে। আর ক্রিকেট এ ব্যাটিং পাওয়ার জন্য দুই থেকে তিনদিন বসে থাকতে হত। তাও সুযোগ পেতাম না মাঝে মাঝে। আর ফিল্ডিং এ হাতে গোনা ২ থেকে তিনবার বল হাতের কাছে আসত। রাতে আমাদের পড়া তৈরী করার জন্য নাইটক্লাস হত। তাতে স্যাররা তদারকি করতেন নিয়মিত। সেই সময়ে প্রচন্ড ঘুম পেত। আমদের ঘুম কাটানোর জন্য স্যাররা দাড় করিয়ে রাখতেন। আমরা দাঁড়িয়ে থেকে ঘুমাতাম। তখন ২ ঘন্টা সময়কে মনে হত অনন্তকাল। আর পরীক্ষার আগে এই সময়টুকুকেই মনে হত কত অল্প।

এখন যেসব তিক্ত স্মৃতির কথা বলব তা সম্পুর্ণ নিজের কারনে। ছোট ছিলাম প্রথম প্রথম নতুন আসার পরে যখন কেউ পাত্তা দিতনা তখন অনেক চাপাবাজি করতাম। ফাঁক দিয়ে চাপা মেরে দিতাম সবার কাছে পাত্তা পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি চাপা মারতে গিয়ে এমন সব চাপা মারতাম যাতে সবাই বুঝে যেত আমি চাপা মারতেছি। এবং এই চাপাবাজির প্রভাব আমার হোস্টেল জীবনের অনেকটা সময় জুড়েই ছিল। অনেকদিন এই চাপাবাজির কারনে আমাকে পচানি খেতে হয়েছে। তার কয়েকটা নমুনা শুনুনঃ
প্রথমদিন সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি খেলাধুলা কেমন পারি। আমার জবাব ছিল আমি নরসিংদী স্টেডিয়ামে সিক্স মেরেছি(তখন আমার বয়স ১০। ফোর এ পড়তাম)। আমাদের ক্লাসে সবার মাঝে হইচই পড়ে গেল মারাত্মক খেলোয়াড় এসেছে। পরেরদিন ম্যাচ এ আমার প্রতিভার প্রমানস্বরূপ ২টা ক্যাচ মিস করলাম। এবং ব্যাটিং পাওয়ার আগেই ক্রিকেট সীজন শেষ হয়ে গেল। পরে প্রায় পাঁচ মাস পড়ে যখন ক্রিকেট সীজন আসল। আমি আবারো প্রতিভার প্রমান দিয়ে ২ রানে আউট। ততদিনে অবশ্য সবাই বুঝে গেছে যে আমি একটা চাপাবাজ। তবে অনেকদিন আমি ব্যাটিং নামলেই আমাকে সেই খোঁচাটা দেয়া হত। পাশ থেকে বলা হতঃ “নরসিংদীর ক্যাপ্টেন নামছে”।

মাঝে একবার ছুটিতে বাসার পাশের রেললাইনে একটা সুন্দর পাথর দেখতে পেয়েছিলাম। হল এ এসে সেটাকে চাপা মেরে বললাম আমাদের বাসার পাশের রেললাইনে একটা হীরা পেয়েছি। পরে হীরাটা আবার নদীতে ফেলে দিয়েছি। ভেবেছিলাম সবাই আমার নির্লোভ আচরণ দেখে মুগ্ধ হবে। কিন্তু যাকে প্রথমে বললাম সে বিশ্বাস করল। তাই সাহস বেড়ে গেল। পরে চালাক একজনকে বললাম। সে চোখ ছোট করে বলল হীরার সাইজ কতটুকু ছিল। আমি দুই হাত মুঠো করে দেখালাম এত বড়। আমি যেই সাইজ দেখিয়েছিলাম তাতে সেটা কোহিনূর হীরার চেয়েও বড় হয়ে গিয়েছিল ।(তখনো আমি বুঝতাম না হীরার সাইজ আসলে কতটুকু)। ফলাফল সে আমার চাপা ধরে ফেলল। এবং সবার কাছে বলে দিল। এই নিয়ে কত যে পঁচানি খেয়েছি।


সবচেয়ে বেশী পঁচানি খেয়ছি যেটার কারনে তা হল আমাকে এক বন্ধুকে এম্নিতেই কথাচ্ছলে চাপা মেরেছিলাম আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি। মেয়েটা তো আমার জন্য পাগল। তখনো এসব বিষয় বুঝতাম না। কিন্তু ভেবেছিলাম এইটা বললে আমাকে সবাই নায়ক মনে করবে। কিন্তু হল উল্টাটা সবাই আমার কানের কাছে এসে সেই মেয়েটার নাম বলে বলে খেপাত। আমার বই খাতায় ঐ মেয়েটার নাম লিখে রাখত। পরে এইটা স্যারের কান পর্যন্ত গেল এবং স্যার আমাকে রামধোলাই দিয়েছলেন। এইসব ঘটনাইয় আমার এমন শিক্ষা হয়ে গিয়েছিল যে আমি আর কখনো অন্তত ওদের সামনে চাপা মারি নি।


হোস্টেল লাইফের প্রথম বছর একটু তিক্ত কাটলেও পরে এই হোস্টেলেই আমার জীবনের অন্যতম সেরা সময় কাটিয়েছি। আমরা বন্ধুরা এখনো একত্রিত হলে এখনো সেই পুরোনো স্মৃতি মনে করি। এখনো আমাদের সেই দিনগুলো মিস করি। আর আমার নিজের বোকামিগুলোর কথা মনে করে এখনো নিজের মনেই হাসি।
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×