somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন আইরিশ ভদ্রলোক এবং আমি

১১ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিফির বুকে সূর্যাস্ত - ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।

এ ঘটনার একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। ২০০৭ সনে যখন আমি আয়ারল্যান্ড আসি তখন বঙ্গবাজার থেকে তিনটা ওভারকোট কিনেছিলাম। তার মাঝে একটা ছিল তুলনামূলক পাতলা কিন্তু দেখতে বেশ ভালো। ওভারকোটটার বুকের কাছে কিছু কাঠের পাত বসানো ছিল যা বঙ্গবাজারের লোকেরা খুলে ফেলেছিল। আমাকে পাত সহটাও দেখিয়েছিল, তবে আমার পাত খোলা অবস্থাতেই ভালো লাগায় সেটা কিনে নিয়েছিলাম। আয়ারল্যান্ড আসার পর একদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি বাসে এক ভদ্রলোক আমার ওভারকোটটার মতই একটা পরে আছে। কাঠের পাতগুলোও ছিল তাতে। দেখে বেশ মজা লেগেছিল। এরা যে জিনিস ডাবলিনে পরছে, সেটা আমি বঙ্গ দেশের বঙ্গবাজার থেকে কিনেছি!

যাইহোক, এখানে আসার পর মাস ছয়েক ওটা পরেছিলাম। তারপর পেনিস/প্রাইমার্ক (একটা জনপ্রিয় আইরিশ ব্র্যান্ড) থেকে আরেকটা কিনে নিলে আর দেশের গুলো পরা হতো না। গত কয়েকদিন হঠাৎ হঠাৎ আসা বৃষ্টিটা জ্বালাচ্ছে খুব। আমার নুতন কেনা ওভারকোটটায় হুড ছিলনা। তাছাড়া ছাতাও আমার চোখের বিষ। তাই পুরানোটা (ওটায় হুড রয়েছে) বের করে ব্যাবহার করছিলাম সপ্তাহখানেক ধরে।

আজ সন্ধ্যায় নাফিস এবং ধ্রুবর সাথে সিনেওয়ার্ল্ড গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি আমার না দেখা ছবি আর নাই। এমন কি কিছু ছবি তিনবারও দেখা হয়েছে। তাই আর ভালো লাগছিল না। ওদের ছবি দেখতে লাগিয়ে দিয়ে আমি বের হয়ে আসি। বার্গার কিং থেকে একটু খেয়ে এলোমেলো হাটতে হাটতে ও'কনেল স্ট্রিটের প্রান্তে এসে সিগনালে দাড়াই। উদ্দেশ্য রাস্তা পার হওয়া।

হঠাৎ এক ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞেস করলেন, "হ্যোয়ার ডিড ইউ গেট দিস ওভারকোট? ইটস লাভলী।" ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম ভদ্রলোককে। মধ্যবয়সী। উচ্চারন শুনেই বোঝা যায় আইরিশ। সাথে স্ত্রীও দাড়িয়ে আছেন। হেসে বললাম, "আই পার্চেইস্ড ইট ফ্রম মাই হোম কান্ট্রি।" ভদ্রলোক কৌতুকের স্বরে বললেন, "ইউ আর রেসিস্ট!" তারপরই হেসে বললেন, "জাস্ট কিডিং" আমিও হেসে ফেললাম। ভদ্রলোক আবার জিজ্ঞেস করলে, "হ্যোয়ার আর ইউ ফ্রম?"

ততক্ষনে সবুজ আলো জ্বলে উঠেছে। রাস্তা পার হতে হতে আমি জানালাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। তিনি বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। তারপর বললেন, "ওহ, বাংলাদেশ! সালামুয়ালাইকুম!" এবার আমি জোরে হেসে ফেললাম। ওয়ালাইকুম আস-সালাম বলে তাকে জানালাম আমি পেনিস থেকেও একটা ওভারকোট কিনেছি। সে পেনিসে খোঁজ নিলে হয়তো এরকম পেতে পারে। তিনি তখন বললেন, "আই ইউল ডেফিনেটলি চেক পেনিস ফর ওয়ান ইনশাল্লাহ।" ভদ্রলোকের স্ত্রীও তখন একটু স্মিত হাসি দিলেন। রাস্তা পার হবার পর তারা যাচ্ছিল একদিকে, আমি ঠিক উল্টা দিকে। তাই বিদায় দিয়ে বললাম, "ইটস নাইস মিটিং ইউ স্যার।" ভদ্রলোক হেসে বললেন, "নাইস মিটিং ইউ টু। খুদা হাফিজ!" স্বহাস্যে আমিও তাঁকে আল্লাহ হাফিজ জানিয়ে বাসের জন্য হাটতে শুরু করলাম।

হাটতে হাটতে একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিল। আমি এখানে আসার পর থেকে কয়েকটা জিনিস খুব চেষ্টা করি। প্রথমত আইরিশ একসেন্টে কথা বলা (বাসকে বস, ডাবলিনকে ডবলিন ইত্যাদি বলা) এবং আইরিশদের ব্যবহার করা কিছু বিশেষ শব্দযুগল বা প্যাটার্ন ব্যাবহার করা। এতে ওরা খুব খুশি হয়। আজ যখন ওদের থেকেও এরকম খুশি করার চেষ্টা দেখলাম, বেশ ভালো লাগলো। যদি সে বাংলা বলতো, তাহলে আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো। তবুও যতটুকু সে চেষ্টা করেছে, তাতে আন্তরিকতা ছিল ষোলআনা। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এখন তারা বাংলাদেশটাকে চেনে। এই গোড়া আইরিশদের দেশে এটাও যে আশা করা অনেক বেশি!

লিফির জলে বিল্ডিংগুলোর আলো পড়ে চিকচিক করে খুব। সেদিকে তাকিয়ে মনেমনে ভাবছিলাম; কত বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি এই দেশে এসে। সময়ওতো কম পার হয়নি। ২০০৭ গড়িয়ে ০৮কেও পেছনে ফেলে, এখন ০৯ চলছে। জীবনটাকে কেমন যেন পাগলা ঘোড়ার মত মনে হয়। ছুটেই চলছে, ছুটেই চলছে। এ ছোটার যেন শেষ নেই। সেই পাগলা ঘোড়ার আরোহী হয়ে জীবনের পথে কত কিছু দেখলাম। হয়তো আরো কত কিছু দেখার বাকি রয়েছে। এভাবেই কেটে যায় জীবন, তাই না?

১০ মার্চ ২০০৯
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০০৯ ভোর ৬:৪৯
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×