somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ

১০ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রফিকুল ইসলাম রতন
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান একাত্তরের আজকের দিনে এক সামরিক ফরমান জারি করে বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ জনতার উস্কানির মুখেও সেনাবাহিনী খুবই সংযত আচরণ করে চলেছে। সেনাবাহিনীর দৈনন্দিন খাদ্য সরবরাহেও বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাজকর্মে বাধার সৃষ্টি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি কাজে বাধা দিলে বা সামরিক বাহিনীর চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সামরিক বিধিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ ঘোষণায় সামরিক বাহিনীর ১১৪ নম্বর নির্দেশ জারি করে বলা হয়, ‘যদি কেউ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তি বিনাশ অথবা সেনাবাহিনীর চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে তবে তা সামরিক বিধিতে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।’ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এ ফরমান জারির সঙ্গে সঙ্গে পুরো দেশেই তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। প্রতিবাদে লাখো মানুষ বেরিয়ে আসে রাজপথে। বলতে গেলে সবকিছু থেকেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান সরকার। এদিকে গোপনে পাকিস্তান সরকার সি-১৩০ বিমানে রাতের অন্ধকারে সৈন্য আনতে শুরু করে। সমুদ্রপথেও আনা হয় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ৭ মার্চের ভাষণের পর সেনানিবাসে বাঙালি সৈন্যদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। প্রতিটি ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করতে থাকে। সিনিয়র বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা অত্যন্ত গোপনে একে অপরের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে ভেতরের খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিতে থাকেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। সচিবালয়, সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, আদালত, রেলওয়ে ও বন্দরসহ সবাই আমাদের নির্দেশ মেনে চলছে। বিশ্ববাসী ও পশ্চিম পাকিস্তানের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোন মানুষই পাকিস্তান সরকারের জুলুম, নির্যাতন ও সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন করেনি। তবুও তারা হঠকারী চক্রান্তে উš§ত্ত হয়ে সমরসজ্জা অব্যাহত রেখেছে। রংপুর ও রাজশাহীতে সান্ধ্য আইন চলছে। পুরো দেশে আজ তারা ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্ট ঢাকায় অবস্থানরত তাদের লোকদের ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশের মাধ্যমেই তার দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না। গণহত্যার হুমকিকে বিবেচনায় রেখে জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মৌলিক অধিকার সংরক্ষণেও তাকে ভূমিকা পালন করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধুর এ বিবৃতি সংবাদপত্রে ফলাও করে প্রচারিত হয়। ১০ মার্চের আজকের এই দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ৪০ জন কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে ১ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। প্রাদেশিক সরকারের রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে শুরু হয় চোরাগোপ্তা হামলা ও গেরিলা যুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের আপামর জনতা যেখানে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, সেখানে জেনারেল ইয়াহিয়ার এ হুশিয়ারিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের গণ্ডি বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ দিন জাতীয় লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ সময় দেশের এতই দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে যে, প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনা ঘটতে থাকে। আন্দোলন-সংগ্রামরত জনতার প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যেন বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বাংলার মানুষের প্রাণের দাবিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে গঠিত হতে থাকে সংগ্রাম কমিটি, চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং সংগৃহীত হতে থাকে অস্ত্র। বিস্ফোরণোš§ুখ জাতি দ্রুতই লিপ্ত হয় মুক্তিযুদ্ধে। দিশেহারা হতে থাকে পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সর্বত্র শুধু একই আওয়াজ ওঠেÑ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×