[শুক্রবার, ৯ই জিলহজ্ব, ১০ হিজরি সনে আরাফা ময়দানে দুপুরের পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) লক্ষাধিক সাহাবার সমাবেশে হজ্বের সময় এই ঐতিহাসিক ভাষন দেন । হামদ ও সানার পর তিনি বলেনঃ]

১. হে মানুষ ! তোমরা আমার কথা শোনো । এর পর এই স্হানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারব কি-না জানি না ।

হে মানুষ ! আল্লাহ বলেন, ' হে মানব জাতি ! তোমাদের কে আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পার' ।

অতএব শুনে রাখো, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই । আরবের উপর কোন অনারবের, অনারবের উপর কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই । তেমনি সাদার ওপর কালোর বা কালোর উপর সাদার কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই । তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তি-ই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে আল্লাহকে ভালোবাসে ।

২. হে মানুষ! শুনে রাখো, অন্ধকার যুগের সকল বিষয় ও প্রথা আজ থেকে বিলুপ্ত হলো । জাহিলি যুগের রক্তের দাবিও রহিত করা হলো । .....

৩. হে মানুষ শুনে রাখো, অপরাধের দায়িত্ব কেবল অপরাধীর ওপরই বর্তায় । পিতা তার পুত্রের জন্য আর পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয় ।

৪. হে মানুষ ! তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্মান, তোমাদের সম্পদ পরষ্পরের জন্য চিরস্হায়ীভাবে হারাম (অর্থাৎ পবিত্র ও নিরাপদ - কেউ কারো সম্পদ বা সম্মান হানি করতে পারবেনা) করা হলো, যেমন আজকের এই দিন , আজকের এই মাস, এই শহর সকলের জন্য হারাম ।.....

৫. হে মানুষ! তোমরা ঈর্ষা ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকবে । ঈর্ষা ও হিংসা মানুষের সকল সদগুনকে ধ্বংস করে ।

৬. হে মানুষ ! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি । তাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করো না । তাদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপরও তাদের অধিকার রয়েছে । সুতরাং তাদের কল্যাণের দিকে সব সময় খেয়াল রেখো ।

৭. হে মানুষ! অধীনস্হদের সম্পর্কে সতর্ক হও । তোমরা নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তা খাওয়াবে । নিজেরা যা পরবে, তাদেরও তা পরাবে । শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগে-ই তার মজুরী পরিশোধ করবে ।


৮. হে মানুষ ! বিশ্বাসী সেই ব্যাক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্যের সম্মান, ধন ও প্রাণ নিরাপদ । সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্য তা-ই পছন্দ করে ।

৯. হে মানুষ! বিশ্বাসীরা পরষ্পর ভাই । সাবধান ! তোমরা একজন আরেকজন কে হত্যা করার মতে কুফরী কাজে লিপ্ত হয়ো না । .....

১০. হে মানুষ ! শুনে রাখো, আজ হতে বংশগত শ্রেষ্ঠত্ব বা কৌলিন্যপ্রথা বিলুপ্ত করা হলো । কুলীন বা শ্রেষ্ঠ সে-ই যে বিশ্বাসী ও মানুষের উপকার করে ।

১১. হে মানুষ! ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে । বিশ্বস্ততার সাথে প্রত্যেকের আমানত রক্ষা করতে হবে । কারো সম্পত্তি- সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয় । তোমরা কেউ দুর্বলের উপর অবিচার করো না ।

১২. হে মানুষ! জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও মূল্যবান । জ্বানার্জন প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ । কারণ জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথ দেখায় । জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে তোমরা চীনে যাও ।

১৩. হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভূর ইবাদত করবে । নামাজ কায়েম করবে , রোজা রাখবে, যাকাত আদায় করবে, হজ্ব করবে আর সংঘবদ্ধভাবে নেতাকে অনুসরণ করবে, তা হলে তোমরা জন্নাতে দাখিল হতে পারবে ।

১৪. হে মানুষ! শুনে রাখো, একজন কুশ্রী কদাকার ব্যাক্তিও যদি তোমাদের নেতা মনোনীত হয়, যতদিন পর্যন্ত সে আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে, ততদিন পর্যন্ত তার আনুগত্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য ।

১৫. হে মানুষ ! শুনে রাখো , আমার পর আর কোন নবী নেই ।

১৬. হে মানুষ! আমি তোমাদের কাছে দুটি আলোকবর্তিকা রেখে যাচ্ছি । যতদিন তোমরা এ দুটোকে অনুসরণ করবে, ততদিন তোমরা সত্য পথে থাকবে । এর একটি হলো আল্লাহর কিতাব । দ্বিতীয়টি হলো আমার জীবন-দৃষ্টান্ত (হাদিস ) ।

১৬. হে মানুষ! তোমরা কখন-ই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না । কেননা অতীতে বহু জাতি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে ।

১৭. হে মানুষ! প্রত্যেকেই শেষ বিচারের দিনে সকল কাজের হিসেব দিতে হবে । অতএব সাবধান হও ।

১৮. হে মানুষ! তোমরা যারা এখানে উপস্হিত আছো, আমার এ বাণীকে সবার কাছে পৌছে দিও ।

(এরপর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন) হে মানুষ! আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌছে দিয়েছি ? সকলে সমস্বরে জবাব দিলোঃ হ্যা ।

এরপর নবীজী (সাঃ) বললেন, হে আল্লাহ ! তুমি সাক্ষি থাকো । আমি আমার সকল দায়িত্ব পালন করেছি ।

সূত্রঃ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেসন থেকে প্রকাশিত পুস্তিকা ।