somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান প্রসঙ্গে

০৮ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিলখানায় বিডিআর সদস্যদের হাতে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা নিঃসন্দেহে নিন্দাযোগ্য। সন্দেহ নেই বাংলাদেশের ইতিহাসের বর্বর হত্যাকান্ডগুলোর অন্যতম এটি। এই বর্বর হত্যাকান্ডের নিন্দা এদেশের সকল মানুষ একযোগে করেছে। তবে এই নিন্দাকে পুজিঁ করে সেনাবাহিনীর অপকর্মগুলোরে চাপা দেয়ার চেষ্টাটাও হটকারী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কার্যকলাপকে কখনই একটি পেশাদার সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপ বলে চিহ্নিত করা যাবেনা। বরং এ বাহিনীর অনেক কার্যকলাপ নিম্নোক্তভাবে আলোচনার দাবী রাখেঃ-

১. পিলখানায় নিহত সেনাসদস্যদের জানাজায় এক সেনা কর্মকর্তাকে বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলতে শোনা গেল, আমাদের এতো অফিসার মুক্তিযুদ্ধেও মারা যায়নি। কথাটা যদি সত্য হয় তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সেনা অফিসারদের অবদানটা কতটুকু এটা নিয়েও প্রশ্ন তুলা যায়। ত্রিশ লক্ষ মানুষ মারা গেল। অথচ এর মধ্যে ৫০ জনও সেনা অফিসার নেই। অথচ দেখা গেল যুদ্ধের পরে সব পদবী সেনা অফিসার বা সেনা সদস্যরাই কুড়িয়ে নিয়েছেন। সাত বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে কোন অসামরিক ব্যক্তির ঠাই নেই। বীর উত্তমদের মধ্যে একমাত্র কাদের সিদ্দিকী ছাড়া আর কোন অসামরিক ব্যক্তির জায়গা হলোনা। যে বুদ্ধিজীবীরা, যে রাজনীতিবিদরা, যে ছাত্র, যে দিনমজুর বছরের পর বছর আন্দোলন করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন তাদেরও কোন জায়গা নেই। ক্যান্টনমেন্টের সুরম্য ভবনে অবস্থানকারী তথাকথিত সামরিক মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাসের জন্য যুদ্ধে এসে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত ইতিহাসটাকে হরণ করে নিজেদের করে নিল।

২. এই সেনা কর্মকর্তারাই জাতির জনক ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। দেশকে রাজনৈতিক শূণ্য করার মানসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হল। তাদেরকে পদোন্নতি বিভিন্ন দূতাবাসে কূটনীতিকের কাজ দেয়া হল।

৩. তথাকথিত সিপাহী জনতার অভ্যূথান ঘটিয়ে সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসলেন। সিপাহী শব্দটার আগে জনতা শব্দটা না ঢুকালেও মহাশয়ের ক্ষমতার স্বাদ পেতে সমস্যা হওয়ার কথা ছিলনা। কারণ বন্দুকের নলের কাছে জনতা সব সময়ই অসহায়। তারপরেও জনতার নাম বলে জনাব রহমান তার উদারতার পরিচয় দিলেন। এই সামরিক শাসকের সময়ে কম করে হলেও ২৭টি অভ্যূথান ঘটেছে। এই অভ্যূথানগুলো কি কারণে হয়েছে, কতজন মারা গেছে, কতজনের বিচার হয়েছে তার খবর ভোদাই জনতা কখনই জানতে পারেনি। অবশেষে যে রক্তের নদী বেয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন তার ঋণ শোধ করতে গেয়ে তিনি নিজেও মারা পড়লেন। তাকেও মারল আমাদের বিখ্যাত সেনাবাহিনী।

৪. জেনারেল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসলেন আরেক সামরিক শাসক এরশাদ। সামরিক বাহিনীর লোকজন অত্যন্ত দূর্নীতি করেনা বা লুলামী করেনা এই ধারণা এতোদিন সবার মধ্যে ছিল। রাজনীতিবিদদের কেনার জন্য তিনি দেদারসে সরকারি টাকা উড়াতে লাগলেন। সন্তান না থাকলেও জানিনা কাদের জন্য বিদেশী ব্যাংকেও টাকা পাচার করতে লাগলেন। শুধু তাই নয় নিজের সখীদের সন্তুষ্ট রাখার মানসে দেদারসে সরকারি টাকা বিলাতে লাগলেন। অবশেষে, নূর হোসেন, ডাঃ মিলন, জিহাদের মতো আরও অনেকের রক্তের বিনিময়ে একদিন বাঙ্গালী জাতি এই সামরিক লুলটার হাত হতে রক্ষা পেল।

৫. তারপরে দীর্ঘ ষোল বছর দেশে তথাকথিত গণতন্ত্র থাকলেও সেনাবাহিনী শাসন ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি ছিলনা তা বলা যাবেনা। তবে জনগণের মাঝে স্বস্তি ছিল যে অত্যন্ত তাঁদের এই প্রভাব প্রত্যক্ষ ছিলনা।
তবে আমাদের সুযোগ্য সেনাবাহিনী সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতার কারণে তারা এই সুযোগ পেয়েও যায় এবং তথাকথিত ১/১১ এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ক্ষমতা দখল করে। তথাকথিত ডক্টরদের মাধ্যমে এক পুতুল সরকার গঠন করে নিজেরা পিছন থেকে কলকাঠি নাড়তে থাকে।

৬. ১/১১ এর তথাকথিত সামরিক সরকার দেশের অপেক্ষা নিজেদের আখের গোছাতেই সর্বদা ব্যস্ত ছিল। সবখানে সামরিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিষ্ঠিত করে। দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেও নিজেরা আকষ্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়। সামরিক, বেসামরিক সবক্ষেত্রে নাক গলায় এবং সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বঃস করে নিজেদের বশংবদ করে। এই বশংবদের প্রক্রিয়া হিসেবে সমস্ত বেসামরিক প্রশাসনে এরা প্রেষণে নিয়োগ নেয়া শুরু করে এবং নিজেদের ইনকাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় ২০% প্রেষণ ভাতা প্রবর্তন করে। অথচ দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতি তাদের কোন নজরও ছিলনা।

৭. আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চাপে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলেও আমাদের সেনাবাহিনী তাদের পুরনো অভ্যাস ছাড়তে নারাজ। এখনও তারা সরকারের রুটিন কাজকর্মে খবরদারী করতে উৎসাহী। আমাদের সেনবাহিনী এখন বড় বড় বাণিজ্য চুক্তি করতে উৎসাহী। সমুদ্রের তলদেশের সম্পদ বিদেশী কোম্পানীর কাছে ইজারা দিয়ে পার্সেন্টজ হাতিয়ে নিতে মরিয়া।

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কাল হতে এ পর্যন্ত সময়ের অবদানগুলো অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি। অনেকে হয়তো এ বিষয়ে আমার সাথে একমত হবেন না। অনেকেই হয়তো একমত হবেন। অনেকেই হয়তো আগ বাড়িয়ে বলেও ফেলবেন বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই। যারা এমন কথা বলেন আমি তাদের সাথেও দ্বিমত পোষণ করি। একটি স্বাধীন দেশে অবশ্যই সেনবাহিনীর প্রয়োজন আছে। তবে তারা যাতে বেসামরিক প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকে, পূর্ণ পেশাদার হয় এই নিশ্চয়তা অবশ্যই বিধান করতে হবে। এর প্রয়াস হিসেবে সেনবাহিনীর আকার যুক্তিসংগত হওয়া প্রয়োজন। এতো বিশাল সেনাবাহিনী আমাদের দরকার কিনা তাও ভেবে দেখতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আকার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বড়। ফলে এদের বেশিরভাগেরই কোন কাজ নেই। তাই তারা প্রেষণে আসার বিষয়ে এবং বেসামরিক প্রশাসন নিয়ে ভাবতে বেশি আগ্রহ দেখায়। আমার মনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার যথেষ্ঠ অবকাশ আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৪
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×