somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদ্রোহের সূত্রপাত যেভাবে-

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মেজর নাজমুল

বিডিআর পিলখানায় গত বুধবার ঘটে যাওয়া জোয়ানদের বিদ্রোহের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিল? এ প্রশ্নে বিভিন্ন মত পাওয়া গেছে। এসব মতামতের মধ্যে রয়েছে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ দরবার হলে বক্তব্য দেয়ার সময় একজন সৈনিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটির পরই গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু আসলে ঘটনা তা নয়। বিডিআর জোয়ানদের বিদ্রোহের প্রায় দেড় ঘন্টার মধ্যে ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ডাল-ভাত কর্মসূচির সঙ্গে সংযুক্ত তিনজন সেনা কর্মকর্তা পিলখানার দেয়াল টপকে বের হন। তাদেরই একজন মেজর নাজমুল গতকাল শুক্রবার ইত্তেফাককে দেয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সঙ্গে কোন সৈনিকের বাক বিতন্ডা হয়নি। দরবার শুরু হওয়ার মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মাথায় গুলি হয়। গুলির পরই দরবার হলে ছুটোছুটি এবং পিলখানার অভ্যন্তরে একমাত্র দক্ষিণ দিক ছাড়া পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। বিডিআর জোয়ানরা একে অপরকে বলতে থাকে অফিসারদের ধর। বিদ্রোহের নেপথ্যে কারা ছিল সে সম্পর্কে মেজর নাজমুল স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তবে তিনি যে কথাটি বলেছেন সেটি হচ্ছে বিদ্রোহের পিছনে বিডিআর ব্যাটালিয়নের উপ-সহকারি পরিচালকদের (ডিএডি) ইন্ধন ছিল। ডাল-ভাত কর্মসূচি নিয়ে সৈনিকদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ ছিল। তবে তা এতোটা ভয়ংকর রূপ নেয়ার মত ছিল না। ক্ষোভের আড়ালে অন্যকিছু থাকতে পারে।

সেনাবাহিনীর আর্মার কোর এবং ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ডাল-ভাত কর্মসূচির সঙ্গে সংযুক্ত মেজর নাজমুল পিলখানায় বিডিআর জোয়ানদের বিদ্রোহ ও নিরাপদে দুইজন সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা সম্পর্কে কি বলছেন। মেজর নাজমুলের মুখেই শুনুন সেই অজানা কাহিনী। দরবার হলে সকল অফিসার ও বিডিআর জোয়ানরা সকাল ৯টার আগেই উপস্থিত হন। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ৯টা ১ মিনিটে দরবার শুরু হবে। মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ প্রধান গেট দিয়ে দরবার হলে প্রবেশ করে নিজের আসনে বসেন। পাশের আসনে বসেছিলেন উপ-মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী। বামদিকে সকল জেসিও এবং ডানদিকে সকল অফিসার। তিনটি সারির মধ্যে প্রথম দুইটিতে বসেছিলেন অফিসাররা। কিন্তু দরবারের ইতিহাসে যা কোনদিন হয়নি সেটি হচ্ছে তৃতীয় সারিতে বসেছিল সাধারণ সৈনিকরা। ফ্লোরে ছিল সৈনিক ও তাদের পিছনে বেঞ্চে বসেছিল হাবিলদাররা। কর্মকর্তা ও জোয়ান মিলে দরবার হলে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার।

মহাপরিচালকের বক্তব্য প্রদান

ঘড়ির কাঁটায় ৯টা ১ মিনিটে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ দরবার শুরু করে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, গতকাল বিডিআর সপ্তাহের প্যারেড ভালো হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেছেন। ডাল-ভাত কর্মসূচি নিয়ে ক্ষোভ থাকতে পারে। কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলে তার বিস্তারিত পরিসংখ্যান আমি তুলে ধরছি। সরকারের কাছ থেকে আমরা ৪০০ কোটি টাকা পেয়েছি। কিভাবে টাকা খরচ হয়েছে এবং কি আছে তার বিবরণ দিয়ে ডিজি বলেন, সৈনিকদের জন্য টাকা খরচ করা হবে। ডাল-ভাত কর্মসূচির কোন টাকাই অপব্যয় হয়নি আমি এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। দরবার শুরু হওয়ার পর নিয়ম হচ্ছে মহাপরিচালকের বক্তব্য শেষ হলে তিনি নিজেই বলবেন। কারো কোন প্রশ্ন বা বক্তব্য থাকলে বলতে পারেন। কিন্তু তিনি বক্তব্য শেষ করার আগেই স্টেজের দক্ষিণ দিকের দরজা (গ্রীন রুম) দিয়ে এসএমজি তাক করে প্যান্ট ও গেঞ্জি পরিহিত একজন সৈনিক ডিজির সামনে এসে দাঁড়ায়। এ সময় সকল সেনা কর্মকর্তা ডিজিকে ঘিরে ফেলেন। এসএমজি তাক করা সৈনিক ডিজিসহ কর্মকর্তাদের এক লাইনে দাঁড়াতে বলে। ডিজি নিজে লাইনের সামনে চলে যান। দরবার হলে কেউ কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই শুরু হয় গুলি বর্ষণ। দরবার হল থেকে যে যে দিকে পারে ছুটে বেরিয়ে যেতে থাকে।

কর্নেল আনিসের আহ্বান

এসএমজি তাক করে সৈনিক স্টেজের দক্ষিণ দিকের দরজা দিয়ে প্রবেশের পরই পরিচালক (প্রশিক্ষণ) কর্নেল আনিস অফিসারদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ইউনিটে চলে যান। সৈনিকদের নিয়ন্ত্রণ করুন। সব গেট বন্ধ করে দিন। এরপরই গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। রাজধানীর বাইরে থেকে আসা কর্মকর্তাদের কোন ইউনিট ছিল না পিলখানায়। দরবার হলের পশ্চিম, পূর্ব ও উত্তর দিকে গোলাগুলি শুরু করে সৈনিকরা। দরবার হলের পূর্বদিকে পুকুর। একমাত্র দক্ষিণ দিক ছিল ফাঁকা। গোলাগুলির শব্দে দরবার হল থেকে দরজা ও জানালা ভেঙ্গে সবাই বের হতে শুরু করে।

ঢাকা সেক্টর কমান্ডার

দরবার হলের দক্ষিণ দিকে ফাঁকা জায়গায় কিছু সৈনিক দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ঢাকা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিব দ্রুত এসে সৈনিকদের শান্ত থাকার কথা বলেন। এই কথা বলতে না বলতেই উত্তর দিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। সৈনিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। মেজর নাজমুল মেজর দিদারকে সঙ্গে নিয়ে কর্নেল মুজিবকে দ্রুত সরে যেতে বলেন। এরপরই মেজর শফিক ও মেজর দিদারকে নিয়ে নাজমুল ৩৬ ইউনিটের দিকে চলে যান। এ সময় সেনানিবাস থেকে আর্মার কোরের মেজর তানভীর মোবাইল টেলিফোনে নাজমুলকে বলেন, আমরা জেনেছি কি ঘটছে। পোশাক খুলে তোমরা যেভাবে পার পিলখানা থেকে বেরিয়ে যাও।

ব্রাশ ফায়ার ও সৈনিকদের চিৎকার

পুকুরের উত্তর দিক থেকে শুরু হয় ব্রাশ ফায়ার। ক্রমেই গোলাগুলি বাড়তে থাকে। রাস্তা ছেড়ে তারা আড়াআড়ি পথে সিগন্যাল সেক্টরের কাছে এসে দেখতে পান কয়েকটি জীপ যাচ্ছে। রাস্তার পাশে লাঠি ও অস্ত্রহাতে সৈনিকরা চিৎকার করে বলছে অফিসারদের ধর। সিগন্যাল সেক্টরের কাছাকাছি স্থানে একজন অফিসারকে ধরে সৈনিকরা উল্লাস শুরু করে। এ সময় রানার মোস্তাফিজ বলে উঠে স্যার পরিস্থিতি ভালো নয়, ওরা অফিসারদের খুঁজছে। পোশাক খুলে ফেলুন। ধুপি ঘরের পাশে গিয়ে তারা দেখতে পান সবাই ছুটোছুটি করছে। সঙ্গে সঙ্গে গোলাগুলির তীব্রতা বেড়ে যায়।

দেয়াল টপকানোর কথা

ক্রমেই গোলাগুলি বেড়ে গেলে তিন মেজর তাদের অনুগত কয়েকজন সৈনিকের পরামর্শে রাস্তা ছেড়ে দ্রুত মাঠ ধরে প্রায় ৩০০ গজ দূরে পিলখানার সীমানার হাজারীবাগ প্রান্তে চলে যান। পর্যায়ক্রমে তিনজন দেয়াল টপকে বাইরে বের হন। বাইরে কয়েকজন পুলিশ বলতে থাকে শুয়ে পড়ুন গুলি বাইরে আসছে। হামাগুড়ি দিয়ে তিন মেজর বিভিন্ন অলিগলি ধরে হাজারীবাগ বেড়ীবাঁধের দিকে যাওয়ার সময় দেখতে পান তাদের অনুসরণ করছে বিদ্রোহী কয়েকজন সৈনিক। মোবাইল টেলিফোনে ভিতরে সঙ্গীদের তথ্য দিচ্ছে। এ অবস্থায় দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার যাওয়ার পর মেজর শফিক আলাদা হয়ে যান।

সৈনিকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি

হাজারীবাগ বেড়ীবাঁধে পৌঁছার পর মেজর দিদার একটি ট্রাকের গতিরোধ করেন। চালককে সমস্যার কথা বলে মেজর নাজমুল ট্রাকে উঠেন। এ সময় প্যান্ট ও গেঞ্জি পরিহিত দুই সৈনিক জাপটে ধরে ফেলে দিদারকে। ধস্তাধস্তির সময় উপস্থিত লোকদের সহায়তা চেয়ে দিদার বলেন, ওরা ক্রিমিনাল ওদের ধরুন। লোকজন এগিয়ে আসলে দুই সৈনিক পিছু হটে এবং দিদার একটি সিএনজি চালিত অটো রিকশায় চড়ে গাবতলীতে চলে যান। সেখানে মেজর নাজমুলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে তারা সেনানিবাসে গিয়ে রিপোর্ট করেন।

সৈনিকদের ক্ষোভ ছিল

এক প্রশ্নের জবাবে মেজর নাজমুল বলেন, ডাল-ভাত কর্মসূচির ব্যাপারে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও তা সব সৈনিকদের মধ্যে ছিল না। আর এই কর্মসূচি চলাকালে যেসব সৈনিক অনিয়ম ও অন্যায় করেছিল তাদের সাজা দেয়া হয়েছে। তারা পরিশ্রম করেছে বেশি এ কথা সত্যি। আবার অনেকের অন্যায় ও অনিয়মে বাড়াবাড়িও ছিল বেশি। তবে যে ক্ষোভ ছিল তা এতোটা ভয়ংকর রূপ নেয়ার কথা নয়। ঘটনার পিছনে অন্যকিছু থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×