somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৈতিক সন্দেহ: মৃত্যু

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
মৃত্যুর স্বপক্ষে সব কথায় বিফলে যায় যখন নিজের পাড়ায় মৃত্যু এসে পড়ে। ওই রকমের সন্ধিণ হয়তো একবারই। মৃত্যু গ্রহণকালে কেউ যদি তার বেঁচে থাকা নির্ণয় করতে যায় তবে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তার যা যা মনে পড়ে ততটুকই তার বয়স, ততটুকুই তার বেঁচে থাকা। নিজের মৃত্যু নিয়ে মৃত্যুর মুখে যারা থু থু ছিটাতে পারে তাদের মুখের জিজ্ঞাসা চিরকাল স্থির থাকে। ওইসব স্থির মুখের দিকে চেয়ে মৃত্যু হয়তো কখনো কখনো আপন হয়ে ওঠে। কিন্তু মৃত্যু এক মহাবিমূর্ত বিষয়, মৃত্যুই মানুষের প্রকৃত শত্র“। যদিও রবীন্দ্রনাথের বাণী মৃত্যুর পক্ষে আমাদের আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে। মরণ ‘তুহু মম শ্যাম সম’। সেই শৈশব থেকে আজ অব্দি বুঝে না বুঝে মৃত্যু দেখে আসছি শুনে আসছি। ছোটবেলায় মৃত্যুর মানে আর মূর্তি দুটোই ছিল আলাদা। মৃত্যু যারা গ্রহণ করেছেন তাদের সাথে আমাদের কখনো কোনো কথাবার্তা হয়নি। মৃত্যুর ধারণাটা তাই আমাদেও ভেতর নানান আকার ধারণ করে আছে। উপলব্ধির ওপর ভর করেই হয়তো মৃত্যুর ভাবনাগুলো আমাদের ভেতর এত জোর পায়। সেই সাত বছর বয়সে মৃত্যুকে প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম। মারা গিয়েছিল আ্মাদের চুনারিপাড়ার সুধীর পাল কাকা। নতুন বন্যায় মহানন্দার পাড় তখন তোলপাড়। ধসে পড়ছে নদীর পাড়। আর নদীর পাড় ধসে নাকি মরেছিল সুধীর পাল কাকা। এসব নানীর মুখে শোনা। তখন মৃত্যু বলতেই মনে পড়ত নানীর আঙুল ধরে হাঁটা । কারণ নানী এপাড়া ওপাড়া মরা দেখে বেড়াত আর তার সঙ্গী হিসেবে আমাকেও যেতে হতো। সেবার বর্ষা মৌসুমে গ্রামের সবাই ভিজে ভিজে মরা দেখতে যাচ্ছে নদীর ধারে। মরা দেখতে যাওয়া লোকজনের কথোপকথন শুনে আমার একটু একটু উপলব্ধি হতো মৃত্যুর আবহ আর আচরণ। কেউ বলত ‘লোকটা ভালো ছিল, কেউ বলত এত কাঁচা বয়স’ আহা! এমন সময় কেউ চলে যায়? এসব কথাবার্তা আমার ভেতর মৃত্যুর ভাষা তৈরি করেছিল। নানীর সাথে ঘাটে গিয়ে দেখি সত্যি সত্যি একটা লোক ফুলে ফেপে উপুড় হয়ে ভাসছে, আর মরাটার পাশে ভাসছে একটা বাতাবি লেবু। ব্যাস, মরা দেখে ওই সময় তিনটি বিষয় আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলÑ ‘লোকটি ভালো ছিল’, ‘তার বয়স কম ছিল’ আর ‘বাতাবি লেবু ভাসছিল’। পওে শৈশবে যতবার এই তিনটি বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছি ততবার মৃত্যুর কথায় মনে পড়েছে। এমনকি বাতাবি গাছের তলায় গিয়ে যখন বাতাবিগুলো ঝুলে থাকতে দেখতাম তখন মনে হতো ওই মরা লোকটা কোথায় যেন ঝুলে আছে। এই ছিল মৃত্যুর প্রথম অনুভূতি। দ্বিতীয়বারের মত যখন আমার ভেতর মৃত্যুর অনুভূতি তৈরি হলো তখন সেটি ছিল একটি সাবানের গন্ধের ভেতর। মনে হলো মরা বাড়িতে সাবানের গন্ধটায় মৃত্যুর গন্ধ। মৃতদেহ আর সাবান সর্বশেষ সাাতের প্রকৃষ্ট উদাহারণ বটে। যাই হোক, এভাবেই মৃত্যুর স্বাদ সুয়াদ আমার রক্তের ভেতর মিশে যেতে লাগল। সেবার খুব কনকনে শীত ছিল। আমার বাবার অল্প আয়ের সংসার। দাদা বাড়ির টিনের একচালা ঘর। আমাদের পরিবারে শীতের কাপড় কার কার গায়ে ছিল জানি না, তবে সাঝের বেলা বড়শিতে থাকত আগুন। আমার মায়ের আলু সেদ্ধ, ডাল সেদ্ধ করা আগুনগুলো লাল টকটক করত। সন্ধ্যা হলেই আমার মায়ের সঙ্গে আগুনের চারপাশে বসতাম। কেবল বাবা থাকলে আমরা আগুনের ধারে কাছে যেতাম না। সেইদিন অন্তত বাবার ভয়ে গায়ে কোনো শীত লাগত না। বাবা নেই এমন একদিন সন্ধ্যায় আগুন পাতা হয়েছিল আমাদের ঘরে। সেদিন ছিল মাংস সেদ্ধ করা আগুন। আমরাও বসে গিয়েছিলাম আগুনের চারপাশে। আমার মায়ের কোলে ছিল তখন দুই বছরের ছোট বোন মুন্নি। সারাদিন বসে বসে কাঁদত আমাদের মুন্নি। মা বলত, এই পৃথিবীটা ওর ভালো লাগল নারে... যাই হোক, আগুনের উত্তাপে আমাদের শীতগুলো আক্রান্ত হয়েছিল। এমন সময় উঠল মুন্নির কান্না। মাকে বলেছিলাম, ওকে আমার কোলে দাও? মা বলছিল, না না তুমি পারবে না। অযথা ওকে আগুনের ওপর ফেলবে। বারণ ভেঙে তবুও মুন্নিকে কোলে নিতে গিয়েছিলাম আর আমারই হাত ফসকে আগুনে পড়েছিল মুন্নি। নিমিশেই ওর পিঠের দিকটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, নিমিশেই আমার মা প্রকৃষ্ট অন্ধকারের ভেতর চিৎকার করেছিল। ওইতো, ওই প্রথম আমার সামনে সংঘটিত হওয়া প্রথম মৃত্যু। আমাদের প্রিয়জনের মৃত্যুই প্রমাণ করে মৃত্যু কত নির্মোহ আর ভয়াবহ। অবশ্য এমন কথা বলে স্বস্তি পাওয়া যেতে পাওে, আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থেকে মৃত্যুর রঙ আবিষ্কার করতে পারিনি। যদিও মৃত্যু গ্রহণকারী মানুষেরা সে রঙ দেখে নিতে পেরেছে। অবশ্য আমরা যারা বেঁচে থাকি তারা কী উপায়ে মৃত্যুর রঙ অনুভব করব সে সূত্রটি একেবারে বায়বীয়? তাহলে উপায়? উপায় কিছুটা হলেও তা হতে পারে, তা হলো স্বপ্নের ভেতর যখন আমরা মারা যাই এবং যখন আমাদের মৃত্যুর অনুভূতিটি জন্মে। স্বপ্নের ভেতর দেখা মৃত্যুর রঙ আর মৃত্যু গ্রহণকারীর দেখা মৃত্যুর রঙ অন্তত এ দুয়ের সংযোগের ভেতর আমাদের জাগতিক প্রশ্নগুলো আটকে আছে। আমি জানি না মানুষেরা জগতের কোন প্রশ্নটি নিয়ে ঘুমাতে যায়, আবার কোন উত্তরটি নিয়েই বা জেগে ওঠে...
যদি বলি পৃথিবীর ইতিহাস একরকম মৃত্যুর ইতিহাস। যদিও প্রতিনিয়ত মানুষ জন্মগ্রহণ করছে। আমরা হয়তো চূড়ান্ত বিয়োগের কথা মনে রাখি কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মৃত্যুতে আমাদের দেহের চৌকোনা যে ভরে গেছে তার খবর কে রাখে? একমাত্র মৃত্যু চেতনার ওপর আমাদের শাস্ত্রগুলো দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ যদি না মরত তবে আমাদের শাস্ত্রের কী হতো? আগেই বলেছি, যারা মৃত্যু গ্রহণ করেছেন তারাই কেবল মৃত্যুকে বুঝবে। আর যারা জীবিত আছে তাদের কাছে তো মৃত্যু একটা ধারণা। যত প্রাণ ততই মৃত্যুর ধারণা। একবার কি কেউ নিজেকে প্রশ্ন করেছি যে, মৃত্যুর সাথে আমাদের কী রকমের বোঝাপোড়া আছে? বিজ্ঞান আমাদের যা যা বলে, শাস্ত্র আমাদের যা যা বলে তা তা কি আমাদের নৈতিক ধারণাকে সাহায্য করে? এই প্রশ্ন অবৈজ্ঞানিক হলেও নিরন্তর। মজার ব্যাপার হলোÑ টুথপেস্টের সঙ্গে কোথায় যেন মৃত্যুর একটা অদ্ভুত মিল আছে। এই অভিজ্ঞতাটাও শৈশবের উপলব্ধি থেকে আসা, আর কোনো এক মরা বাড়িতে এ রকম মৃত্যুর উপলব্ধিটাকে খুঁজে পেয়েছিলাম স্রেফ টুথপেস্টের ফেনার ভেতর। কল্পনা করা যেতে পারে মৃত্যু গ্রহণকারীর অন্তিম স্নানের প্রক্রিয়াটি। এই প্রক্রিয়াটির ওপর চোখ রেখেই দেখেছিলাম মরা ধোয়া স্নান ঘর থেকে শাদা শাদা সাবানের ফেনাগুলো বেরিয়ে আসতে। তখন মনের ভেতর প্রশ্ন জাগল, মৃত ব্যক্তির গা ছুঁয়ে কী অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেনাগুলো বেরিয়ে আসছে। মানুষ মারা যাবার সঙ্গে সঙ্গেই কি সমস্ত কোষগুলো মারা যায়? নাকি কোনো কোনো কোষ আরো কিছু সময়ের জন্য বেঁেচ থাকে। এখন ওই সাবানের ফেনাগুলো কি জীবিত কোষগুলোর কোনো আকুতি বহন করে? আর এ সকল প্রশ্ন আরো প্রকট হয়ে ওঠে যখন আমরা দাঁতের ভেতর টুথপেস্ট ব্যবহার করি। মৃত্যুর সঙ্গে টুথপেস্টের অনুভবটা এ রকমÑ আমাদের দাঁতের ভেতর জীবাণুগুলো যখন মারা যায় তখন তার অন্তিম দৃশ্যটাও ফেনা ফেনা। মৃত্যুর অনুভূতি নিয়েই মুখের নালা দিয়ে ফেনাগুলো বেরিয়ে আসে। জীবিত মানুষের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ফেনাগুলো আর মরা ধোয়া ঘর থেকে বেরিয়ে আসা ফেনাগুলোর ভেতর মৃত্যু সর্ম্পকে আমাদের অদ্ভুত জিজ্ঞাসা আমাদেরই নিরুত্তর রাখে...

দুই.
কবর খোঁড়ায় পারদর্শী ছিল আমাদের গ্রামের ফোক্কার মিয়া। এ গ্রাম থেকে সেই গ্রামÑ যে ব্যক্তিই মরুক না কেন, ফোক্কার মিয়া নিজ উদ্যোগে তার কবর খুঁড়ত। তার কবর খোঁড়ার কোদালটা ছিল তেলতেলে বাঁকা বাঁশের হাতলওয়ালা। আনন্দের সাথেই কবর খুঁড়ত ফোক্কার মিয়া। মধ্যবয়সী এই লোকটি কবর খুঁড়তে গেলে মাটিতে কোদালের কোপ দেবার আগে পান খেত দুটো। কবর খুঁড়তে গেলে তাকে দুটো পান এক সাথে কেন খেতে হতো এই রহস্য গ্রামের মানুষকে কৌত’হলি করেছিল। কেউ কেউ জানতে চাইত কেন সে এমনটা করে। এমন প্রশ্নে ফোক্কার মিয়া হাসত। শুধু তাই নয়, কবর খুঁড়তে খুঁড়তে মজা করে বলত ‘মরার ঘর খুবই জটিল’। এই ফোক্কার মিয়া হুক্কা টেনে টেনে বাড়ির বারান্দায় বসে থাকত। সিজনে চৌধুরী বাড়ির আম বাগানে জোগান্দারের কাজ ছাড়া তেমন কোনো কাজ করত না সে। লোকজন তাকে পেলেই মরার খবর জানতে চাইত। একবার আমরা ফোক্কার মিয়াকে বলেছিলাম ‘দাদু মরা মানুষ দেখতে কেমন?’ অমনি দাদু আমাদের পরনের ঢিলেঢালা প্যান্ট খুলে দিয়ে বলেছিল ‘মরিলে তা দেখতে পাবা।’ এখনো মনে আছে, সর্বশেষ কার যেন কবর খুঁড়তে গিয়েছিল ফোক্কার মিয়া। নতুন কবর খুঁড়তে খুঁড়তে পার্শ্ববর্তী কবরে কোদালের একটা কোপ চলে যায়। ব্যাস, চিৎকার করতে করতে আর কোনো দিন কথা বলেনি ফোক্কার মিয়া। কেউ কেউ বলত, মরা মানুষের গন্ধ লেগেছিল তার নাকে। কেউ কেউ বলত, আসল মরা মানুষ দেখেছিল সে। এবার মারা গেল ফোক্কার মিয়া। ফোক্কার মিয়ার কবর যে খুঁড়েছিল তার মুখের দিকে কেউ চাইল না। কেউ দেখর না লোকটি কয়টা পান মুখে পুরেছিল। এসব কথা ভেবে ভেবে মৃত্যু উপলব্ধির সাথে ফোক্কার মিয়ার কথাটা বার বার মনে পড়েÑ মরিলে প্রকৃত মরা দেখতে পাওয়া যায়...
আরো একটি গল্প আমার মা আমাদের শোনাতেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরো। কিন্তু খেলার মাঠে আঁধার নামে একটু দেরিতে। ঘরে অ্াঁধার নামে খুব তাড়াতাড়ি। খেলার মাঠ থেকে ফিরতে দেরি হতো একটু একটু। মা রেগে গিয়ে বলত, অন্ধকারকে তোমরা কী মনে করো? অন্ধকারই সব নষ্টের মূল। মায়ের বকাঝকা খেয়ে যখন পড়ার টেবিলে কাজলা দিদি পড়তাম তখন মনে হতো, সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত সবই কি তাহলে নষ্ট? অবশ্য তখন গ্রামে সন্ধ্যা হলে কেউ বাইরে থাকত না। গ্রামে একটা বাড়ি ছিল জমিদারের। জমিদারের বাড়ির দরজায় ছিল বাঘের এপিটাফ। পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে ছিল প্রচুর গরু আর ধানের গোলা। বাড়িটার উত্তরদিকে একটা তেঁতুল গাছ। গাছটির বয়স দেড়শ’ বছর। ওই গাছের নিচে শিবপূজা হতো। কিন্তু তাতে গ্রামের অন্ধকার নষ্ট হয়নি। গ্রামের অন্ধকার নষ্ট হওয়ার গল্পটা হলো আমাদের হেফাজ কাকার মৃত্যুবরণ। জমিদার বাড়ির গরুর তদারকি করত হেফাজ কাকা। এই যেমন এক পাল গরু সকালে মাঠে নিয়ে যাওয়া, সন্ধ্যা হলে জমিদার বাড়ির গোয়াল ঘরে ফেরা। একদিন ঘটল এক কাণ্ড। গরুর জন্য সাঁঝের খাবার বাড়ছেন হেফাজ কাকা। ক্ষুধার্ত গরুগুলো খেতেও শুরু করেছিল। হেফাজ কাকাও গোয়াল ঘর ছেড়ে আসার জন্য পেছন ফিরেছিল। কিন্তু গরুগুলো নাকি সমস্বরে হাসতে শুরু করেছিল। গরুর হাসি দেখে হেফাজ কাকা অবাক হয়েছিল। তার দিন কয়েক পর তার মৃত্যু হয়্। আর সেদিন থেকেই গ্রামের অন্ধকারে সংস্কার চালু হয়ে গেল, গরুগুলো এই গ্রামে এখন থেকে হাসবে। কেউ তখন গরু ছুঁয়ে দেখত না। গ্রাম থেকে সব গরু উধাও হয়ে গেল। পোশা গরুগুলো এলোমেলো ছেড়ে দিল গ্রামের লোকজন। ফলে অন্ধকারের ভেতর উদ্বাস্তু গরুগুলো হেঁটে বেড়াত এ পাড়া ও পাড়া। লোকজন সন্ধ্যার পর গরু দেখলেই বাপরে বলে চিৎকার করত। কেউ জানও হারাত। এই ধারা কয়েক বছর চলেছিল। ছোটবেলাকার কথাÑ মৃত্যু উপলব্ধিতে আরও একটি ব্যাপার যোগ হলোÑ ‘অন্ধকারে গরুর হাসি’।
আমাদের বাড়িতে প্রায় প্রায় লাল মোরগ কেনা হতো। আর মোরগটাকে মৃত্যুর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে হতো আমাকেই। এক হাতে সাদা ছুরি, আরেক হাতে লাল মোরগ, মাঝখানে আমার শঙ্কিত দেহ। যাই হোক, মৃত্যুর বাড়ি ছিল রহমান মৌলভির বাড়ি। ডান হাতে শক্ত করে ধরে থাকতাম মোরগ। মোরগটা আপ্রাণ চেষ্টা করত হাতের মুঠি ভেঙে দিতে। পথিমধ্যে বাম হাতের ছুরিটা দাঁতে চেপে হাত বদল করতাম। ভুলেও মোরগটাকে ছেড়ে ছুরিটা হাত বদল করতাম না। কারণ মোরগের মৃত্যুর সাথে আমার কর্তব্য জড়িত ছিল। মোরগের আকুতি দেখে মাঝে মাঝে মনে হতো, ওকে ছেড়ে দিই। কিন্তু বাবার ভয়ে তা আর করা হতো না। মজার ব্যাপার হলো, ওই সময় আমার চিন্তার একটা সন্ধিণ ছিল। তা হলো যাওয়ার সময় মোরগটা জীবিত থাকত আর ফেরার সময় মরা। খুব অবাক হতাম আমার হাতের কত কাছে মৃত্যু সংঘটিত হতো। মোরগ মরলে কাউকে কখনো কাঁদতে দেখতাম না। কিংবা অন্য কোনো মোরগও বলেনিÑ আহা, মোরগটা ভালো ছিল, ওর এত অল্প বয়স কিংবা কোনো বাতাবি লেবু তার পাশে ভাসত না। কিন্তু একটা শক্ত ছুরি সর্বণ হা হা করে হাসত লাল মোরগের পাশে। আমার গোপন ইচ্ছার পাশে। ছোটবেলার সেই ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিয়ে মনে হয় মানুষ স্বজাতের জন্যই শুধু কাঁদে। কিন্তু মোরগের জন্য কি মোরগের জাতরা কাঁদে? নিশ্চয়ই! মোরগ জাতের কোন কিশোর হয়তো তাদের মৃত্যুকে এভাবেই উপলব্ধি করে। মরা মানে মোরগের পাশে রক্তাক্ত ছুরি পড়ে থাকা।



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×