somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ ব্যাড ডে অব আদম

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিগনেচারটা কি আপনার?
জ্বি স্যার, আমার। জ্বি বলতে গিয়ে গলায় চি-হি-হি করে শব্দ হলো।
ফাইলটা আপনি কবে রিসিভ করেছেন?
আবার তাকালাম স্বাক্ষরটার দিকে। নিচে তারিখ লেখা। চার মাস আগের তারিখ। একটু আগে গলায় শদ্ব ছিলো, এখন তাও নেই।
চার মাসে আগের তারিখ, চার চারটা মাস হয়ে গেল; এই তবু ফাইল আমার টেবিলে আসলনা কেন? Why? Why? Why?
শেষোক্ত Why টির অতি উচ্চ শব্দ ঢাকা-বাংলাদেশ-পৃথিবী ছাড়িয়ে গিয়ে সাতআসমানের দিকে রওয়ানা হলো।
জানেন এটা নিয়ে কত কি হয়েছে? এই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক বরাবর আমি তিনটা চিঠি পাঠিয়েছি এই ফাইলটা পাঠানোর জন্য। তারা শেষমেশ রিসিভ কপি পাঠিয়েছে, এবং রিসিভি কপিতে আপনার সাইন, ঠিক কিনা বলুন।
আরে শালা গাধা নাকি; একবারতো চি-হি-হি করে বললাম যে সাইনটা আমার।
তারপর উনি ইংরেজিতে যা বললেন তার মানে নিম্নরুপ।
“আমি এক্ষুনি বিগবসের কাছে যাচ্ছি। আমি আপনার নামে অভিযোগ করবো। আমি আপনার ১২ টা বাজাবো।”
কিঞ্চিত লেখাপড়া জানা থাকার কল্যাণে আমি কথা গুলোর মানে বুঝতে পারলাম এবং লেখাপড়ার আবির্ষ্কতাকে মনে মনে অতি-কুতসিত ভাষায় গালি দিলাম।
হয়তো এখনই আমার প্রতি নির্দেশ আসবে চলে যাওয়ার, যেভাবে সত্যিকারের আদমকে স্বর্গ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল
চারপাশের সবাই বিষয়টা খুব ইনজয় করছে।এই মূহুর্তে প্রত্যেকে এত মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে যে, বাংলাদেশের ১% লোকও যদি এই মনযোগ দিয়ে কাজ করত তাহলে বাংলাদেশটা এতদিনে আমেরিকা হয়ে যেত। আসলে মনটা আমার দিকে, চোখটা টেবিলের দিকে।
আমি নিশ্চিত “S” আপা আজকে লাঞ্চের সময় ঘটনাটা তার সখিগণকে রসিয়ে-কষিয়ে বলবে। “K” ভাই বিড়ি খাওয়ার অবসরে অফিসের আর সব বিড়িখোরদের বলবে “আদম শালা খাইছে আইজকা ঠেলা, ওরে যে কতবার নিশেদ করছি, কে হুনে কার কতা”।
“M” সাহেব নিশ্চয় এতক্ষণে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বসে আছে “office a ganjam, Adam shes”(অফিসে গ্যানজাম, আদম শেষ)।
আমার অনুমানকে সঠিক বিবেচনা করে সবাইকে মনে মনে এ্যাডভান্স অভিশাপ দিলাম।এ এক কঠিন অভিশাপ। যদি তোরা এই নিয়ে আলোচনা করিস তাহলে তোদের শরীরের এমন জায়গায় ফোড়া হবে যে, না পারবি কইতে, না পারবি সইতে। আমিও ছাড়ার পাএ নই; হুম।

চাকরিটা চলে গেলে কি হবে তাই ভাবছিলাম। আমার সামনে এক সমুদ্র অন্ধকার, এক পৃথিবী দুশ্চিন্তা, এক আকাশ স্বপ্ন ভঙ্গের নিনাদ।

উষ্ঠা মারি তোর চাকরির কপালে। সোজা গ্রামে গিয়ে হাল চাষ করবো। আর যাই হোক ফাইল তো আর খুজতে হবে না। সকাল-সন্ধ্যা মাঠে কাজ করবো, দুপুর বেলা আমার বউ বাটিতে করে পানতা ভাত নিয়ে মাঠে এসে লাজুক গলায় বলবে “মেলা বেলা হইছে, খাইয়া লন” । আমিও কাতল মাছের মত হা-আ-আ করে বলব “খিলায়া দেও”।
এমন সময় ক্রি-ই-ই-ই-ইং। আমার মধু-ভাবনায় ছেদ পড়লো। ফোনের পর্দায় ইন্টারকমের ১২৭ নম্বর। ওই ফাইলওলা বুড়ো হাবড়াটা ফোন করেছে।
ফাইলটা নিয়ে এক্ষুনি আমার রুমে আসুন।
ফাইল!! কিসের ফাইল!! কার ফাইল!! চার মাস আগে কোথায় রেখেছি কে জানে। ফাইলটার চেহারাই তো আমার মনে নাই।
ঘড়ির কাটায় সকাল ১০.৩০ টা। আমি আবারও ঝিম ধরে যাই। আমার হাতে থাকা সকালের নাস্তার প্যাকেট থেকে পোড়া ডিমভাজা-পেয়াজের গন্ধ পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে মিশে যায়।

বিকাল ৪ টা নাগাদ ফাইলটা পাওয়া গেল। ছাই রঙের খামে মোড়ানো কিছু কাগজের সমাবেশ। ওপরে লেখা BLRI । আহ কি মধুর লেখা। সবার চোখ এড়িয়ে ফাইলটাকে একটু আদরও করলাম।
স্যার, আপনার ফাইল।
এ্যা । কিসের ফাইল?(বুইড়াটার মনেই নাই) ও আচ্ছা ঠিকাছে। ধন্যবাদ।
তারমানে চাকরিটা !!!!
আমার সামনে এখন এক সমুদ্র আলো , এক পৃথিবী আশা, এক আকাশ স্বপ্ন ।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×