somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈশ্বিক পানি সরবরাহের গুরুত্ব ও আঞ্চলিক পানি ভাবনা

২৮ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈশ্বিক পানি সরবরাহের গুরুত্ব ও আঞ্চলিক পানি ভাবনা
হাসান কামরুল
বৈশ্বিক পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনকে জাতিসংঘের ২০১৫ সালের ডেভল্যাপমেন্ট গোলের পরে প্রধান এজেন্ডা করার অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। থাইল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল চিয়াংমাই কনভেশন এ্যান্ড এক্্িরভিশন সেন্টারে দ্বিতীয় এশিয়া প্যাসিফিক পানি সম্মেলনের (২-এপিডবিউএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রস্তাব রাখেন। খাদ্য ও পানিকে মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানাবাধিকার ও পানি এখন পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং এর উৎসগুলো ধরে রাখা অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক সুবিধার জন্য জরুরি। জাতিসংঘ ২০১৫ সালের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পরে বৈশ্বিক পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত এবং অবশ্যই তা হতে হবে অবৈষম্যমুলক ও সমতার ভিত্তিতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের মোট সাত বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ৬০ শতাংশেরই বাস এশিয়ায়। কিন্তু এর জন্য যতটা পানির চাহিদা ও সরবরাহ রয়েছে তা অপ্রতুল হওয়ায় এ অঞ্চলের সবাইকে চিন্তিত করে তুলছে দিনের পর দিন। ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ৪০ শতাংশেরও বেশি পানি ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষঙ্ঘ মহল। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বকে দ্রুত ও কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। এছাড়া আইনগতভাবেই আন্ত:নদী পানি সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

Click This Link

সত্যিকার অর্থেই আগামিতে পানি সমস্যা বিশ্বব্যাপি চরম আকার ধারন করবে। বিশ্বব্যাপী পানি দুর্যোগ আসন্ন। পৃথিবীর গঠনের তিনভাগের দুইভাগ পানি হলেও ভবিষ্যত পানির চাহিদা নিয়ে চিন্তিত গোটা পৃথিবী। এতদ বিপুল পানির ভান্ডারের মাত্র দুই শতাংশ খাবার পানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই দুই শতাংশ স্বাদু পানির আবার রকমফের রয়েছে। পানি ব্যবস্হাপনা নিয়ে তাই পৃথিবীব্যাপী শুরু হয়েছে সেমিনার সিম্পুজিয়াম। পৃথিবীর বৃহত্তম পানির রিজার্ভ এন্টার্টিক অঞ্চলে হলেও সে পানি বরফাচ্ছন্ন হওয়ায় তা মানব জীবনের পানির চাহিদা খুব একটা পুরণ করতে পারেনা। সাগর ও মহাসাগরের পানির উৎস সম্বলিত বৃহদ পরিসরও লবণাক্ত হওয়ায় মানব জীবনের ব্যবহার্য প্রভাব সামান্যই বটে। তাই এবারের থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এশিয়া প্যাসিফিক পানি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের রাষ্ট্রপ্রধানরা ছাড়াও জাতিসংঘের ছিল প্রত্যক্ষ সহযোগ। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা সম্বলিত এ সম্মেলনের গুরুত্ব ছিল অনস্বীকার্য। কর্মকৌশল নির্ধারনসহ স্হানীয় ও আঞ্চলিক পানির উৎস ও উৎস বিস্তৃতির ব্যবহার ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়।

অবজেক্টিভস:
১. অর্থনীতি,খাদ্য ও পানি নিরাপত্তা (ইউনোস্কেপ ও বিশ্ব খাদ্য সংস্হা)
২. শহুরে জীবনে পানি নিরাপত্তা ও অনুষঙ্গ (ইউএন-হেভিটেট ও পুন)
৩. পরিবেশগত পানির নিরাপত্তা বিধান (আইইউসিএন)
৪. গৃহস্হালী কাজে পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন (ইউনোস্কেপ ও এডিপি)
৫. পানিজনিত বিপদাবলি নিরুপন ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন (ইসারম)
৬. বিশ্বব্যাপী পানি নিরাপত্তা বিধান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন (ইউনেস্কো,জিডাব্লিউপি,ও নারবো)
৭. পানি সংক্রান্ত দুর্যোগ চিহ্নিতকরণ ও দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা (ন্যাশনাল ওয়াটার ও ফ্ল্যাড ম্যানেজমেন্ট পলিসি, থাইল্যান্ড)
উপরোক্ত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে গোটা সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সংস্হাগুলো তাদেও স্ব স্ব গবেষণা ও ফলাফল প্রতিবেদন আকারে উপস্হাপন করে। সম্মেলনে আশা সঞ্চারিত হলেও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে সমাধিক হারে। পানি ব্যবস্হাপনা শীর্ষক আলোচনার অগ্রগতি তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। পানি বন্টন নীতিমালা নিয়ে সম্মেলন থেকে তেমন কোন দিক নির্দেশনা আসেনি। বৃহৎ শক্তিগুলোর পানি ব্যবহারের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও এ সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারন করা যায়নি। ভাটি অঞ্চলের দেশ সমুহকে পানির ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত করার হারের উর্দ্ধগতি নিয়ে বিশ্ব ফোরাম জোরালো ভূমিকা নিতে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়। সদস্য দেশগুলো ড্যাম নির্মান পরিকল্পনা এ সামিটে উপস্হাপন করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারনে তা যথাযথভাবে উপস্হাপিত হয়নি।
জলবায়ুর পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে স্বাদু পানির ব্যবহার ক্রমশই বেড়ে চলছে। পানির ব্যবহার বৃদ্ধির সহিত যোগানের বৈপরীত চিত্র মানব প্রজন্মকে স্হিমিত করে দিবে একথা নি:সন্দেহে বলা যায়। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই কোন না কোন ভাবে সাগর মহাসাগরের সহিত সংযুক্ত। এর প্রায় ৮৬ শতাংশ দেশ আন্তজার্তিক নদী কনভেশনের সহিত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু এই ৮৬ শতাংশ দেশের মাত্র ২ শতাংশ প্রভাবশালী দেশের মতদ্বৈরতার কারনে আন্তর্জাতিক নদী কনভেশন কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। নদী অঞ্চল বিধৌত দেশসমুহের মধ্যে ওয়াটার ট্রিটি বা পানি চুক্তি নামে বহু চুক্তিনামা বিভিন্ন সময়ে স্বাক্ষরিত হলেও তা মুলত ভাটি অঞ্চলের দেশসমুহের কোন কাজে আসেনি। এর মুল কারন বৈশ্বিক চাপে উজান এলাকার দেশসমুহ ভাটি অঞ্চলের পানির ন্যায্যতা প্রদানে সম্মতি ঙ্ঘাপন করলেও পরে আঞ্চলিক নানান টালবাহানার কারনে তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। উদাহরণস্বরুপ ভারত ও বাংলাদেশের ওয়াটার ট্রিটিগুলো উৎকৃষ্ট বলে প্রতীয়মান। গঙ্গা পানি চুক্তি কিংবা তিস্তা চুক্তি কোনটিই ভারত সেই অর্থে মানেনি। এর মুল কারন কৌশলগত আচরন। কারন কেন্দ্রিয় সরকার ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ক স্হাপনে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ হিসেবে পানির ন্যায্যাতা প্রদানে সম্মত থাকলেও রাজ্য সরকারগুলো তার বিপরীত অবস্হান গ্রহন করে। কিন্তু এ কাল বিলম্ব মুলত: রাজনৈতিক কৌশল । আসলে আপার রিপিরিয়ন বা উজানের দেশগুলো পানির গুরুত্ব ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই লোয়ার রিপিরিয়ন বা ভাটি অঞ্চলে পানি সরবরাহে বিভিন্ন রাজনৈতিক কলা কৌশল গ্রহন করে থাকে। যেটা ভারত বাংলাদেশের সহিত করছে সেটাও এক ধরনের রাজনৈতিক চাল। আবার একই রকম চাল চালছে চীন, চীনও আন্তর্জাতিক নদীমুখে বিভিন্নভাবে পানি সরবরাহ আটকে রাখছে ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। আর এ দুর্ভেদ্য ও জটিল বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই পানি সামিট বা কনভেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশগুলোকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা চলমান। আঞ্চলিক সহযোগীতা ও পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমেই কঠিন এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন পানি বিঙ্ঘানীরা। কেননা আন্তর্জাতিক ভাবে বলপ্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আঞ্চলিক শক্তি ও সম্পর্কই পারে রাজনৈতিক এ সমস্যার সমাধান করতে। তাই ভারত থেকে পানির ন্যায্যাতা আনতে ভারত বাংলাদেশের দ্বি-পক্ষিয় সম্পর্ককে বাড়াতে হবে। যতো পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়বে তত এসব সমস্যার সমাধান দ্রুত গতিতে হবে। তাই ভারত বিদ্বুষি নয়; ভারতকে উন্নয়নের সহযোগি শক্তি ধরেই এগোতে হবে। তাহলেই এ ভূখন্ডের রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×