somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুরুটা গত রাত ৩টা থেকে তারপর অনেকের মতো আমারও একটি শ্বাসরুদ্ধকর দিন

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই জানিয়ে দিই আমি একজন টিভি মিডিয়া কর্মী।
আমার মা সবসময় বলে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখলে কিংবা কাকের ডাক শুনলে নাকি কোন বিপদ আসে আর তাই এসব কথা রাতে বলতে নেই। যাই হোক গত রাতে চোখ বন্ধ করি তখন ২টা বাজে। ঘুম একটু গাড় হতে মোবাইলটি বেজে উঠলো। প্রথমবার রিসিভ করিনি সাইলেন্স করে দেই। এরপর আবার কিছুক্ষণ পর আবার একই ব্যক্তির ফোন। আমি ফোনটি রিসিভ করতেই ওপার থেকে মুহিন ভাই আমাকে জানালেন খালেদ একটি বড় দূর্ঘটনার সামনে আমি আছি। তিনি বললেন তারা কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম মিয়ারবাজার এসে পৌছলে তাদের সামনের গাড়িটি বিপরীত দিক থেকে আসা চট্টগ্রামগামী একটি কাভার্ড ভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঐ বাসের যাত্রীরা ছিল সীতাকুন্ড হিন্দু তীর্থ স্থান থেকে ফেরা তীর্থ যাত্রীবাহী বাস। এ দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে ৪জনসহ মোট ৫জন মারা যায়। আরো প্রায় ৩৫জন আহত হয়। মুহিন ভাই খুব উত্তেজিত হয়ে বললেন আমরা আমাদের গাড়ীতে করে আহতদের নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। তুমি চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশকে কি একটু খবরটা জানাবে।
তাকে শান্তনা দিয়ে বললাম মুহিন ভাই আমি দেখছি কি করা যায়। সেই থেকে আমার আর ঘুম হল না। ভোরে ফজর নামাজ পড়লাম। তারপর ফোন করি আরটিভির কিবরিয়া ভাইকে। তিনি আমাকে বললেন খালেদ আজকে তুই আমার দিনটাকে মাটি করে দিলি। বললাম কেন ভাই। তিনি বললেন দিনের শুরুতেই আজ মৃত্যুর খবর দিয়ে শুরু করলি। আমি বললাম ভাই আমাদের পেশাটাই এমন। নিউজটি ইমেইল করে একটু হাটতে বেরুলাম। আমার বাসা কুমিল্লা বার্ডে আর যারা বার্ডে এসেছেন নিশ্চয়ই তারা বার্ডের পরিবেশ সম্পর্কে জানেন। খোলা রাস্তায় যখন হাটছি তখন আমার এক শুভাকাংখী ডিফেন্সের লোক আমাকে বললেন ভাই আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন। আমি একটু চমকে বললাম কেন কখনো কি আমার কাছ থেকে অসহযোগিতা পেয়েছেন। তিনি বললেন তারপরও একটি গোপন তথ্য আপনার সাথে শেয়ার করবো। আমি বললাম অবশ্যই। তিনি জানালেন ঢাকা বিডিআর এর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা। সেই সাথে তিনি জানালেন কুমিল্লা বিডিআর এর পরিবেশ কি একটু আমাকে জানাবেন।
আমি তার সকল গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এক মেজরের সাথে কথা বললাম যিনি আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করেন। তিনি জানালেন কুমিল্লায় কিছু হয়নি। আর ঢাকার খবর আমি যা জানি তা এতো বেশি কিছু নয়। আর তিনি হাসতে হাসতে আমাকে বললেন খালিদ তোমার সাথে পরে কথা বলবো। এই বলে তিনি আমার ফোনটি কেটে দিলেন। তখনও টিভিতে কোন খবর প্রচার হয়নি। আমি নাস্তা সেরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বাইরে বের হব। এমন সময় বেসরকারি এক টেলিভিশনের সহকর্মী আমাকে ফোনে বললেন কুমিল্লা বিডিআরের কি খবর। আমি চমকে উঠলাম। কেননা আমি তখনও টিভি সেটের অনেক দূরে। তাকে বললাম ভালো কিন্তু মনে মনে ভাবলাম তাহলে কি বড় ধরনের কিছু হতে যাচ্ছে। আমি তড়িঘরি করে বার্ড গেটে এলাম। আমার কথা অনুযায়ী আমার ক্যামেরাম্যান জিকু উপস্থিত। একটি মোটরসাইকেলে করে তাকে নিয়ে রওয়ানা হলাম কুমিল্লা বিডআর সেক্টর সদর দপ্তরের দিকে। সেখানে পৌছে মোটর সাইকেলের সামনে বসা জিকুকে বললাম। এখানের পরিস্থিতি কি জানিনা। তবে তুমি সামনের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে ড্রাইভ করো ক্যাম্পের দিকে তাকাবে না। আমি দেখলাম সেক্টর হেডকোয়ার্টারের গেটে বড় তালা ঝুলছে। থমথমে নীরবতা। আসলে স্যাবোটাজ কোন কিছুর লক্ষণ না। একটু আতংক।
পড়ে পুরো এলাকা ঘুরে ব্যাটালিয়ন গেটে এসে দেখি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপস্থিত। ইতিমধ্যে চতুর্দিকে যত সোর্স ছিল তাদের কে বললাম বর্ডার এলাকায় একটু নজর রাখবেন। কারণ বিএসএফ এই সুযোগটাকে কোন ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে কিনা।
ব্যাটালিয়ন গেটে ততক্ষনে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সহকর্মীরা ও সব ফটো সাংবাদিকরা উপস্থিত হতে লাগলো। ইতোমধ্যে ভেতরে অবস্থান নেয়া একমাত্র অফিসার অপস কমান্ডার মেজর . ভাইয়ের সাথে আমি বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বললেন তাদের অন্য অফিসাররা ঢাকায় আছে। তাদের সকলের জন্য দোয়া করার জন্য তিনি জানালেন। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। পুরো দিনটি পার করি একরকম স্নায়ু চাপের মধ্য দিয়ে। কেননা ঢাকার বিদ্রোহ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পাড়ে। অসম্ভব কিছু না।
আমার বাসা থেকে বারবার ফোন আসছে। আমার শ্রদ্ধেয় আম্মা এবং আব্বা আমাকে বললেন আমি যেন নিরাপদ স্থানে থাকি।
ধীরে ধীরে সময় গড়াতে থাকে দুপুরের পর আমি নিজে ব্যাটালিয়নের ভিতরে প্রবেশ করি এবং অফস অফিসারের সাথে দেখা করি। তাকে বললাম শুধু আপনাকে দেখতে ভিতরে প্রবেশ করলাম। তিনি আমার খোজ নিলেন দুপুরে খেয়েছি কিনা। তিনি নিজে খুব ভালো আছেন জানালেন আর বললেন দেশের এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার জন্য যেন দোয়া করি।

এর পরের পরিস্থিতি আপনাদের সকলেরই জানা। আমরা আসা করছি এই ন্যাশনাল ক্রাইসিস খুব শীগ্রই কাটিয়ে উঠতে আমরা সক্ষম হবো।
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×