আজকে বলাকা বাসে বাসায় ফিরছিলাম, মহাখালী থেকে একজন মধ্যবয়সী লোক তার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে উঠল। ভীড়ের বাসে বাচ্চাটার হাঁসফাস দেখে খুব মায়া হয়। তাই বাচ্চাটাকে আমার কোলে বসালাম। এরপর বাসযাত্রাকালীন আমার সময় কাটানোর প্রিয় উপায়, আমার ভবঘুরে চিন্তাগুলোর লাগাম খুলে দিলাম।
ভাবছিলাম এই বাচ্চাটা একদিন কিশোর হবে, হয়ত এস.এস.সি পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করে স্বল্প আয়ের বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে। আবার এমনও হতে পারে, হয়ত ড্রাগের সর্বনাশা ছোবলে বাবার জীবন বিষাক্ত করে তুলবে, বয়ে আনবে মায়ের দীর্ঘশ্বাস। হয়ত একদিন ভর্তি হবে ইউনিভার্সিটিতে। কোন ইউনিভার্সিটিতে? পাবলিক নাকি প্রাইভেট? তখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর অবস্থা কেমন হবে? তখনও কি আজকের মত বিবিএ পড়ার ধুম থাকবে? ও কি হবে? ইঞ্জিনিয়ার নাকি ডাক্তার?
নাকি তার কোন টেক্সটাইল কোম্পানিতে নিম্ন পদে চাকরি করা বাবা তার খুব বেশি পড়াশোনাই করাতে পারবে না।
আচ্ছা ও কি একদিন কোন লাজুক কিশোরীর প্রেমে পড়বে? পড়তে বসে বইয়ের পাতায় শুধু যার মূখ ভেসে উঠবে! কোন ভাবেই পড়ায় মন বসাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে উঠে পরবে, আর মায়ের অবাক মূখের দিকে চেয়ে ধরা পড়া হাসি হাসবে?
একদিন তো সে বাবাও হবে তাই না? সে তার ছেলে-মেয়েগুলোকে কিভাবে আদর করবে? সে কি তার বউকে প্রাপ্য সম্মান দেবে, নাকি যৌতুকের জন্য মারধোর করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবে? বলবে টাকা না নিয়ে ঘরে ফিরবি না!
নাকি কোন একদিন হরতাল-সন্ত্রাসের মুখে সে অকালে ঝরে পরবে? এই দেশ তাকে কতটুকুই বা দিতে পারবে? কতটুকুই বা সে পারবে দেশকে দিতে?
কি দরকার আর অযথা চিন্তার! আমার নামার সময় হয়ে গিয়েছে। আমি স্রেফ এক ভবঘুরে, আমি নিজেই বা কি দেব এই দেশকে, দেশের মানুষকে? আমি শুধু পারি মানুষকে তার সবচেয়ে শুভ সময়ের আশা করতে।