somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহ্ মরি বাংলা ভাষা (রম্য);)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাষার বিষয়ে কবি সাহিত্যিকদের বাদ দিয়ে এবার রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকাই । এখানেও ভাষা নিয়ে চলছে ধুন্ধুমার কান্ড। আমাদের দেশের এক রাজনীতিবিদ নাকি ইংল্যান্ড সফর শেষে বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তার অভিজ্ঞতা বর্ননা করেছিলেন এভাবে, ‘ব্রিটিশরা খুবই মেধাবী জাতি, শিক্ষাদীক্ষায় তারা এত আগায়া গেছে যে তাদের দেশে পাঁচ বছরের বাচ্চাটাও অনর্গল ইংরেজী বলে। তবে আমি যে জিনিসটা দেইখ্যা সবচাইতে খুশি হইছি; গর্বে বুকটা ফুইলা উঠছে, তারা সবকিছু ইংরেজীতে করলেও আজানটা দেয় বাংলায়।’ আরেক বিখ্যাত রাজনীতিবিদের একটা গল্প শুনছিলাম অনেক আগে। সেবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবি ডঃ কামাল হোসাইন। তখন আলোচ্য রাজনীতিবিদ ডঃ কামাল হোসেনের সমালোচনা করে এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘উনি এতবড় একজন ডাক্তার অথচ তার নির্বাচনী এলাকার কোন রোগীকে উনি কোনদিন দেখেননি, কোন রোগী কি বলতে পারবে কামাল হোসেন কাউকে কোনদিন প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন? তাহলে তিনি ভোট চান কোন অধিকারে?’
এসব পড়ে বোদ্ধারা হয়তো বলবেন এসব নিতান্তই বিদেশী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞানতার ফল। তবে ভাষা সম্পর্কে অর্ধজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ যে আরও হাস্যকর তার প্রমান আমাদের প্রাক্তন সরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সাহেব । এ দেশের মানুষ আর কিছু না হোক তার বিখ্যাত বাবরীয় ভাষার জন্য তাকে যুগযুগ মনে রাখবে।একটা বাক্যে দশটা শব্দ থাকলে তিনি আটটা বলতেন ইংরেজীতে আর বাকি দুইটা বাংলায়। সেই বাংলায়ও আবার থাকত ইংরেজীর অনবদ্য ছোঁয়া। ‘We are looking for শত্রুস’ , ‘This is noyhing but bogus চিঠি’...ইত্যাদি বাক্যমালায় সমৃদ্ধ হয়েছে তার বাবরীয় ভাষা। বিদেশী ভাষা ব্যাবহারে অনবদ্য কেরামতির জন্য আমাদের আরেক রাজনীতিবিদ ভুতপূর্ব ক্রিয়ামন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল সাহেবের কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। আহা ,কি ভাষণটাই না দিয়েছিলেন তিনি জাতীয় ক্রিকেট দলের উদ্দেশ্যে, তাও একেবারে নির্ভেজাল উর্দুতে। কত বছর আগে পাকিস্থানি নেতা জিন্নাহ্ সাহেবের দেওয়া এই ভাষণ হুবুহু মনে রাখার জন্য তিনি জাতির কাছ থেকে একটা প্রশংসাবানীই হয়তো আশা করেছিলেন। কিন্তু হায় এ অজ্ঞান জাতি জ্ঞানীদের কদর বুঝলো না...।
জ্ঞান অর্জনের জন্য চীন দেশে যেতে বাধা নাই একথা সত্য। তবু আমরা একবারের জন্য হলেও চীন না গিয়ে জাপানের ইংরেজি না জানা প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে আসি। জাপান সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন; বিমান বন্দরে স্বাগত জানাতে গিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ক্লিনটনকে ‘How are you?’ বলতে গিযে বলে ফেলেছিলেন ‘Who are you?’ ক্লিনটন প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন ‘I am the husband of Hilary’।

দেশে এখন অনেক নব্য ভাষাবিদের দল আবির্ভুত হয়েছে। এরা নিজেদের ইচ্ছেমত যথেচ্ছা বানান ও উচ্চারণকে বিকৃত করে চলছে। দেশের একজন প্রথিতযশা কবি ও গীতিকার (নাম কইলাম না, মনে আঘাত পেতে পারেন) যার ফেসবুক এবং বিভিন্ন ইয়াহু গ্র“প এ নানা কর্মকান্ড আছে, লক্ষ্য করলাম তার লেখায় ‘ঃ’ ,‘ং’ ,‘্য’ ইত্যাদি কিছু বর্নমালা ও চিহ্ন ব্যাবহার করেন না।একদিন ফেসবুকে তাকে পেয়ে রেফারেন্সসহ তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি ইচ্ছে করে এসব বর্জন করেছেন নাকি ছাপার ভুল? তিনি জানালেন এটা তিনি ইচ্ছে করেই করেছেন , পাঠক পড়ার সময় বুঝে নেবে। সাথে তিনি আরও যোগ করলেন, বাংলা ভাষায় নাকি অনেক প্রায় সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ আছে। এগুলোর ব্যাপারে আমাদের আরও অনেক ছাড় দিতে হবে। লেখকের যুক্তি মেনে আমি তাকে একটা শব্দ বাংলায় লিখে পাঠিয়েছিলাম, ‘আসেন আমরা দুর্নীতিবাজদের ধইরা “মাড়ী” ’। লেখক আমাকে পরামর্শৃ দিয়েছিলেন – ‘ভাষা ও বানান একই অবস্থানে থাকে না। এইসবের ব্যাপারে ক্রিটিক্যালি না ভেবে বোঝার চেষ্টা করতে। কিছু ছোটখাট সমস্যা তো থাকবেই।’এইসব বলে তিনি টেক কেয়ার দিয়ে চলে গেলেন। তাকে বলার সুযোগ পেলাম না ‘মারি’-–র কাছাকাছি বেশ কয়েকটা শব্দ আছে যেমন- মারি (প্রহার করি), মাড়ি (দাঁতের মাড়ি), মাড়ী (মড়ক লাগা)। সবাই জানে ভাষা যুগের সাথে বদলে যায় কিন্তু তাই বলে ভাষার পরিমার্জনার নামে অর্থের পার্থক্যগুলোকে গুলিয়ে ফেলতে পারি না।

( লেখা বেশী বড় না করে লিখছি আর পোষ্ট করছি। আরও আছে...)

আগের পর্ব দেখতে হলে:
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:১০
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×