somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা নারায়ণগঞ্জ থেকে

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা নারায়ণগঞ্জ থেকে
রফিউর রাব্বি

ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মিনার, প্রথম প্রকাশনা, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে প্রথম লেখা- এসব নিয়ে তর্ক এখনো চলছে। এখনো বিভিন্ন অজানা তথ্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে। এইটিই আসলে ইতিহাসের নিয়ম। আর এভাবেই আমরা ক্রমান্বয়ে সত্যের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছি। বলা হয়ে থাকে ১৯৪৮ সালে তমুদ্দুন মজলিসের অধ্যাপক আবুল কাশেমই প্রথম ভাষা আন্দোলনের প্রবক্তা। তাঁর লেখাটিই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রকাশিত প্রথম দাবী। অথচ এ তথ্যটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বরিশালের ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন নান্নু।

মোশারফ হোসেন নান্নুর জন্ম ১৯২৭ সালে বরিশাল জেলায়। ১৩ বছর বয়সে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ছাত্রাবস্থায় ছাত্র ফেডারেশনের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, নরেণ দাস, তারাপ্রসাদ গুপ্ত, শাহ আলম চৌধুরী, মজিবুর রহমান প্রমুখ বিপ্লবীদের সহকর্মী তিনি। কুমুদ বন্ধু ঠাকুরতা, যতীন্দ্র গুহ রায়, শামসুদ্দিন আবুল কালাম, মোজাম্মেল হক, মুজাফ্ফর আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন। ভাষা আন্দোলন ও ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির সকল আন্দোলনের সাথেই তিনি যুক্ত ছিলেন। বর্ণাঢ্য তাঁর জীবনচিত্র। কিন্তু মোশারফ হোসেন নান্নুর জীবন পর্যালোচনা এ লেখার প্রতিপাদ্য নয়। বিষয়টি তাঁর দেয়া একটি তথ্য।

‘ধ্রুবতারা’ নামে বরিশাল থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয়। পত্রিকার সম্পাদক অভিজিৎ দাস। সাগরদী সালাম চেয়ারম্যানের বাড়ি, সাগরদী বাজার, বরিশাল - ৮২০০ থেকে প্রকাশিত। পত্রিকাটি প্রথম বর্ষ ধ্রবতারার দ্বিতীয় সংখ্যা জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৯৯৯-এ ‘মোশারফ হোসেন নান্নু : অকুতোভয় বিপ্লবীর জীবন সংগ্রামের কাহিনী’ শিরোনামে একটি সাক্ষাৎকারধর্মী লেখা প্রকাশিত হয়। মোশারফ হোসেন নান্নুর বক্তব্য নিয়ে লেখাটি তৈরি করেছেন সুশান্ত ঘোষ। মোশারফ হোসেন নান্নু সেখানে এক জায়গায় বলছেন, ১৯৪৮ সালে তমুদ্দুন মজলিসের প্রফেসর আবুল কাশেমই প্রথম ভাষা আন্দোলনের প্রবক্তা কথাটায় একটু ভুল আছে। সে প্রবক্তা ঠিকই, সে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে এটাকে সামনে নিয়ে এসেছেন; কিন্তু এর আগে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার ওপারে একটি প্রেস ছিল। বিজলী প্রেস। সে সময় বিজলী প্রেস থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় প্রবন্ধ বেরোয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা কেন?’ প্রবন্ধটি অসমাপ্ত ছিল এবং পরবর্তী দুই সংখ্যায় এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মুসলিম লীগ সরকার প্রেসটি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। নারায়ণগঞ্জের এই ছোট প্রেসের ছোট কাগজই যে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক প্রথম পুস্তিকা তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

বিপ্লবী এ ভাষা সৈনিক ১৯৪৮ সালে ঢাকায় চলে আসেন। এবং সে সময় থেকেই সরাসরি ভাষা আন্দোলনের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হন। ’৪৮ সালেই তিনি কারাবরণ করেন ও পরে মুক্তি পান। এ সময় হাইকোর্টের গেটের সামনে বিক্ষোভকালে পুলিশ শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হকের উপর লাঠি চার্জ করতে উদ্যত হলে মোশারফ হোসেন নান্নু ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে রক্ষা করেন। লাঠিত আঘাতে তাঁর আঙুল ভেঙে যায়। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের সকল প্রক্রিয়ার সাথে মোশারফ হোসেন নান্নু যুক্ত ছিলেন। গত নভেম্বরে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

মোশারফ হোসেন নান্নুর এ তথ্যটি বহুদিক থেকেই গুরুত্ব বহন করে। এক : পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথেই ভাষার প্রশ্নে সৃষ্ট আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের অগ্রণী ভূমিকা, দুই : বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য তমুদ্দুন মজলিসের অধ্যাপক আবুল কাশেম কর্তৃক উত্থাপিত দাবীর পূবেই নারায়ণগঞ্জে এ দাবীটি উত্থাপিত হওয়া, তিন : ১৯৪৭ সালে নারায়ণগঞ্জে ‘বিজলী’ নামে একটি ছাপাখানা ছিল এবং সে ছাপাখানা থেকে তখন নিয়মিত একটি পত্রিকা প্রকাশিত হত, চার : পাকিস্তান সৃষ্টির প্রায় সাথে সাথেই ১৯৪৮ এর শুরুতে এদেশের বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীরা ‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়’ বলে যে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছিলেন প্রায় তখনি শাসকগোষ্ঠীর সে চক্রান্ত সম্পর্কে এখানে সচেতন একটি গোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল এবং এর বিরুদ্ধে তারা সোচ্চারও হয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসের জন্য এ তথ্যটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।

‘বাঙালি ইতিহাস বিস্মৃত জাতি’ বলে যে দুর্নাম আমাদের রয়েছে তা ঘুচাতে হবে। উত্তর প্রজন্মের জন্য ইতিহাসের অনুদ্ঘাটিত এসব তথ্যাবলী উদ্ঘাটন করা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই লেখাটিও আমার নয়। লিখেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। আবারও আপনারদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৫৬
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×