শুরুটা ছবির হাট -এর সেই আড্ডা থেকেই বলা যায়; একরাশ স্বপ্নময় আবেগ নিয়ে মিলিত হয়েছিল বিভিন্ন বয়সের ব্লগারেরা। উদ্দেশ্য সবার একটাই- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার । অভিজ্ঞতা আর আবেগের মিশেলে অজস্র মতামত, আলোচনা ধাপে ধাপে তৈরী করল দিকনির্দেশনা । তখনও ব্লগারেরা বোধহয় বুঝে উঠতে পারেনি সামনে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে তাদের জন্য!
২২শে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ব্লগারদের দ্বিতীয় সমাবেশে সেদিনের সেই স্বপ্নময় চোখে দেখা গিয়েছিল অনেক আত্মবিশ্বাস; মন্থর গতিতে ক্ষিপ্রতা আর কন্ঠ হতে উচ্চারিত প্রতি শব্দে দৃঢ়তার ঝলক; আমাদের লক্ষ্য ততদিনে আরো সুনির্দিস্ট ।
স্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচীর শুরুতেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের স্বাক্ষর গ্রহণ অভিযান চলবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বলা যায় এক রকম দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক ব্লগাররাই। এমনি প্রবাসী ব্লগাররাও স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে যথেষ্ট সাড়া দিয়েছেন।
বাংলা একাডেমীর বই মেলায় প্রতিদিন শত শত মানুষের শত শত স্বাক্ষর জানিয়ে দিচ্ছে , আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই । আমাদের বেঁধে দেয়া সময় ঘনিয়ে আসছে প্রায় । এক লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহের এই অভিযানকে দিতে হবে এখন এক নতুন মোড় । সে প্রেক্ষিতেই গত পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ ১৩ই ফেব্রুয়ারি বইমেলা প্রাঙ্গনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে চলমান গণস্বাক্ষর কর্মসূচী নিয়ে ব্লগারদের তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পর্যালোচনা করা হয় এ পর্যন্ত অগ্রগতি ও অন্যান্য নানা বিষয় যা নিচে তুলে ধরা হলো প্রস্তাবাকারেঃ
প্রথম পর্বঃ ৩রা জানুয়ারি-২১শে ফেব্রুয়ারি
----------------------------------------------------
প্রথম (৩রা জানুয়ারি, ছবিরহাট) ও দ্বিতীয় (২২শে জানুয়ারি, বসুন্ধরা শপিং মল) সভার প্রস্তাব অনুযায়ী ব্লগাররা প্রস্তাব করেন ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্ব শেষ করে ২২শে ফেব্রুয়ারী প্রেসক্লাবে একটি প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করার ।
ব্লগারদের আরো পর্যবেক্ষণ ছিল যে এই অভিযানে সবকটি বাংলা কমিউনিটি ব্লগের ব্লগাররা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নিলেও তা এখন ব্লগের বাইরে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সুতরাং দ্বিতীয় পর্বের কর্মসূচী ঐ প্রেস কনফারেন্স থেকেই ঘোষণা করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
এ পর্যন্ত ৯০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে – যার মধ্যে বইমেলা থেকে গত দশ দিনে স্বাক্ষর সংগ্রহের পরিমাণ ২০ হাজারের উপরে। প্রথম পর্বে ১ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহের লক্ষ্য যার ফলে পূরণ হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।
দ্বিতীয় পর্বঃ ২২শে ফেব্রুয়ারি -২৬শে মার্চ
---------------------------------------------------
দ্বিতীয় পর্বের লক্ষ্যমাত্রা হবে ১০ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ। এ পর্বে গণস্বাক্ষর কর্মসূচীকে বেগবান করা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আরো সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সমস্ত বিষয়গুলো প্রস্তাবিত হয়ঃ
১. যুদ্ধাপরাধী সনাক্তকরণ এবং তালিকা লিপিবদ্ধকরণের প্রস্তাবঃ মুক্তিযুদ্ধের কথ্য ইতিহাসের ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের শনাক্ত করার জন্য একটি ডিজিটাল আর্কাইভ গড়ে তোলার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এ বিষয়ে সামহোয়্যার...ইন ব্লগ ইতোমধ্যে তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছে। এই কথ্য-ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ সময়কালিন ডায়রি, স্মৃতিচারন ও যুদ্ধাপরাধীদের শনাক্তকারী প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থাকতে পারে।
২. ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন প্রস্তাবনাঃ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ছত্রছায়ায় যুগে যুগে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী সহিংসতা সংগঠিত হয় বলে গণস্বাক্ষর অভিযানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে গণসংযোগ কার্যক্রম হাতে নেয়ার জন্য প্রস্তাব প্রদান করা হয়।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আপামর জনসাধারণ পর্যায়ে গণস্বাক্ষর অভিযানের প্রচারণা প্রস্তাবঃ বিশেষত শিক্ষার্থী ব্লগারদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণস্বাক্ষর অভিযানের প্রচারণা চালানো হবে। জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে গণস্বাক্ষর অভিযান সম্প্রসারণ করার যথাসম্ভব চেষ্টা চলবে।
৪. লিফলেট/পোস্টার/স্টিকারঃ দশ হাজার লিফলেট ছাপানোর খরচ বহন করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন একজন এ্যাডভোকেট। ব্লগার অরন্য আনাম লিফলেট ডিজাইনের কাজ করছেন। অপরদিকে বিশ হাজার স্টিকারের জন্য বিশ হাজার টাকা প্রয়োজন। একটি স্টিকার ইতোমধ্যে সর্বত্র দেখা যাচ্ছে এবং তাই পুণরায় ছাপানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। ব্লগার মেঠোজন পোস্টার ডিজাইনের কাজ করবেন; ছাপা খরচ সংক্রান্ত হিসাব প্রদান করার জন্য ব্লগাররা মেঠোজনকে অনুরোধ করার প্রস্তাব প্রদান করা হয়।
৫. গণস্বাক্ষর অভিযানের ছবি/ভিডিওঃ ফ্লিকারে একটা গ্রুপ করা হয়েছে। সেখানে সব ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন সংরক্ষণের প্রস্তাবনাও দেয়া হয়।
উপস্থিত ব্লগাররা উপরের প্রত্যেকটি বিষয়ে যে কোন বয়সী বা যে কোন পেশায় নিয়োজিত ব্লগারদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা প্রদানের প্রস্তাব প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে কে কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক তা নির্দিষ্ট করে জানাবার প্রস্তাব করা হচ্ছে ।
সুতরাং সময় এসেছে আমাদের একতাবদ্ধতার পরিধি আরো বিস্তৃতকরণের । আমাদের আরো হাত প্রয়োজন, স্বাক্ষরের জন্য; আরো কাঁধ প্রয়োজন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার জন্য; আরো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রয়োজন, প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীদের সনাক্ত করার জন্য ।
আমরা প্রস্তুত আছি, আপনারা প্রস্তুত আছেন তো ???
*** *** **** **** **** *** *** ***
তথ্য আপডেট :: ব্লগার অরণ্য আনাম এর তথ্যানুযায়ী -
প্রস্তাবিত সংবাদ সম্মেলনের সময়সূচী -
রবিবার, ২২শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯
বিকাল ৩:০০ ঘটিকা
জাতীয় প্রেস ক্লাব (দোতলায়)
প্রতিবাদ সমাবেশ -
শুক্রবার, ২০শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯
রাত ১০:৩০ ঘটিকা
রাজু ভাস্কর্য, টি.এস.সি
*** *** *** *** *** *** *** *** ***
একটু লক্ষ্য করুন -
প্রেস ক্লাব -এর বুকিং খরচ বাবদ ৩০০০/- টাকা দিতে হবে ।
ব্যানার, প্রেস রিলিজ ফটোকপি এবং কুরিয়ার মারফত বার্তা প্রেরণ বাবদ সর্বমোট ১০০০/- টাকা প্রয়োজন হবে ।
আহ্বানের প্রেক্ষিতে আমরা তড়িৎ ৪০০০/- টাকা সংগ্রহে সমর্থ হয়েছি।
(৫০০/- + ৫০০/- + ৫০০/- + ৫০০/- + ২০০০/- = ৪০০০/-)
৩০০০/- টাকা প্রেস প্রেস কনফারেন্স জন্য প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি টাকা ব্যানার, প্রিন্ট, ফটোকপি, পত্র প্রেরণ খরচে ব্যয় হবে। যা পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
*** *** ***
আরো কিছু কথাঃ
১. একুশে রাতে টিএসসি-তে সমাবেশ ও ২২ শে ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন জাতীয় প্রেস ক্লাব-এ
২. ২০ ফেব্রুয়ারি, মধ্যরাত: একাত্ম হোন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে
*** *** ***
পেছনের কথাঃ
১. গর্জে ওঠো তুমি স্বাধীনতা ...(যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর ফর্ম)
২. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান : আপনি সাথে আছেন তো ?
৩. গণস্বাক্ষর কর্মসূচী বিষয়ক দ্বিতীয় ব্লগার সমাবেশ : কার্যবিবরণী ও প্রস্তাবনা
*** *** ***
অন্যান্য তথ্যাবলীঃ
সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম ওয়েব সাইট খুলেছে -
www . sectorcommandersforum . org
এবং তারাও নেটে গণসাক্ষর সংগ্রহ শুরু করেছে ...
http : // www . sectorcommandersforum . org / gonoshakkhor . php