বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসায় উপমহাদেশে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল,মুম্বাই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে।বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসা অপ্রতুল হওয়ায় আজকাল অনেকেই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।আবার অনেককেই বাংলাদেশের ডাক্তাররাই পরামর্শ দিচ্ছেন টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।তাই আগামীতে যাদের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে পরিচিত কাউকে চিকিৎসায় নেওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে (আল্লাহ কাউকে যেন এ বিপদে না ফেলেন) তাদের সুবিধার্থে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল সর্ম্পকিত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে চাই.......
কি ধরনের ভিসা নেবেন:
সাধারনত ভারতে টুরিস্ট ভিসা পাওয়াটা সোজা।তাই অনেকেই টুরিস্ট ভিসায় ভারতে যেতে চান।কিন্তু মনে রাখবেন টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে টুরিস্ট ভিসায় চিকিৎসা করানো যায় না।ওরা বর্তমানে নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই সচেতন,তবে সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারলে চিকিৎসা ভিসা খুব কঠিন না।
কিভাবে যাবেন:
মুম্বাই আপনি বেশ কয়েকটি উপায়ে যেতে পারেন।ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে মুম্বাই যেতে পারেন,আবার কলকাতা হয়ে ট্রেনে করে যেতে পারেন।কলকাতা থেকে ট্রেনে করে যেতে চাইলে দুই রাত ও একদিন লাগবে এবং এয়ারে গেলে আড়াই ঘন্টা লাগবে।বিমানে অর্থাৎ এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসে জনপ্রতি নয় হাজার টাকার মতো খরচ হয়,তবে ট্রেনে সময় বেশী লাগলেও খরচ তুলনামূলক বেশ কম।এছাড়া টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের রোগী এ মর্মে প্রমানপত্র থাকলে ট্রেনে পচাত্তর ভাগ ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন:
মুম্বাইতে পৌঁছার পর আপনাকে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে তা হলো থাকা-খাওয়ার সমস্যা।কেননা মুম্বাইতে সব হোটেলে বাংলাদেশীদের থাকতে দেওয়া হয় না!তাই আপনার পকেটে অনেক টাকা থাকলেও আপনি থাকার জন্য তেমন ভাল সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।তবে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের সবচেয়ে কাছে যে হোটেলে বাংলাদেশীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে তার নাম হলো হোটেল শান্তিদূত,এটি প্যারেলে অবস্থিত।এজন্য আপনাকে দৈনিক গুনতে হবে ১৩০০ রূপি!এছাড়া টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের কাছে প্যারেলেই কে.জি.এন নামক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের দৈনিক ৬০০ রূপি হারে এক রূম ভাড়া দিয়ে থাকে,রূমেই রান্না-বান্নার সকল জিনিস-পত্রের ব্যবস্থা থাকে।তাই সকল দিক বিবেচনায় কে.জি.এন এ ভাড়া থাকাটাই ভাল।
হাসপাতালে রুগী রেজিষ্ট্রেশনকরন:
টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের কার্যক্রম সকাল নয়টায় শুরু হয়।নতুন রুগীদের প্রথমেই রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়।এজন্য বাংলাদেশীদের প্রথমেই নির্দিষ্ট ফরম পূরন করে ওদের সিকিউরিটি অফিসারের কাছে চিকিৎসা ভিসার প্রয়োজনীয় প্রমানাদি দেখাতে হয়।এবং টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য ২০০,০০০ রূপি জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়।প্রয়োজনীয় টেস্ট ও অপারেশন খরচ এই জামানত হিসাবের সাথে পরবর্তীতে সমন্বয় করা হয়।রুগীর রেজিষ্ট্রেশন হওয়ার পর রোগের ধরন অনুযায়ী হাসপতাল তাদের ডাক্তারদের নিকট প্রেরন করে।
হাসপাতালে রুগী ভর্তিকরন:
ডাক্তার যদি মনে করেন রুগীর অপারেশনের প্রয়োজন তবে তিনি রুগীকে একটি নির্দিষ্ট তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলবেন।হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আনুসাঙিক নিয়ম পূরনে আপনাকে ডাক্তারের সেক্রেটারীর সহায়তা নিতে হবে।সাধারনত অপারেশনের সময় দুই ব্যাগ রক্তের জন্য ডোনার যোগার করতে বলা হয়।এই ডোনার যে কোন রক্তের গ্রুপের হতে পারবেন,তবে ডোনার পাওয়া না গেলে অন্তত এইটুকু প্রমান করতে হবে আপনি ডোনার যোগার করতে চেষ্টা করেছেন।এজন্য ডাক্তারকে এই ব্যাপারে অনুরোধ করতে হয়।
অন্যান্য:
রুগীর সকল পথ্য একটু কষ্ট হলেও হাসপাতাল থেকে নিবেন,কেননা বাইরের দামের সাথে হাসপাতালের দামের বিস্তর ফারাক।এছাড়া ডলার ভাঙানোর সময় আর যাই হোক কে.জি.এন থেকে ভাঙাবেন না,কারন ওরা সুযোগ পেলেই ঠকায়।এইজন্য আপনি হাসপাতালে কোন বাংলাদেশী পাওয়া গেলে তার থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।খুব ভাল হয় যদি কলকাতা থেকে ডলার ভাঙিয়ে আনতে পারেন।
আশা করি আমার অভিজ্ঞতা কারো না কারো কাজে লাগবে।সবার মঙল কামনা করি।