somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

* || * :P* ~ * গোপন কথা * ~ * B-)* || *

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




"চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে ..... " গানটা শুনতে শুনতে মনে পড়লো আমার আর কোকড়া চুলওয়ালীর (ব্লগে) কিছু না বলা ঘটনা ... অনেক সময় ওর আম্মু এখানে ঢুঁ মারে তার মেয়েকে নিয়ে কিছু লিখলাম কিনা ... উনি আপাতত ব্যাস্ত আছেন, তাই সাহস করে এটা লিখছি, তবে সাবধানের মার নেই.... সুতরাং, উনি কিছু জেনে যাওয়ার আগেই জলদি জলদি পড়ে ফেলুন :P

কোকড়া চুলওয়ালীর আম্মুর ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় দেড়-ফুটির জন্য একজন খেলার সাথী দরকার ছিল (সেদিন তার অল্প জ্বর থাকায় সে স্কুলে যায়নি)... সেদিন আমি ফ্রি থাকায় দায়িত্বটা আমাকেই পালন করতে হয়েছিল ... অবশ্য আমার কাজ থাকলেও পুসকির জন্য ছুটি নিয়ে হলেও যেতাম ... যাই হোক, সকাল বেলা ওখানে গিয়ে দেখি পুসকি ঘুম থেকে উঠে রেডী হয়ে বসে আছে ... চোখে মুখে কিছু একটা দুষ্টুমী খেলছে ... মনে মনে বলি আজকে এমন কিছু একটা হবে যার জন্য হয় ওর বকা খেতে হবে অথবা ওর আম্মুর ... এইটা বুলেট প্রুফ অবস্হা ... বুলেট মিস হলেও যে কোন এক জনের বকা আজকে মিস হবে না .... :|

যাই হোক তার আম্মু পরীক্ষার জন্য চলে যেতেই কোকড়া চুলওয়ালী বলে বসলো চলো আজকে আমরা অন্য রকম খেলা করবো ... ওর কথা শুনে তো মনে একটু খটকা লাগলো .... কারন সাধারনত আমরা বিভিন্ন সাইকোলোজিক্যাল গেম অথবা কাগজ-কলম দিয়ে খেলা যায় এমন কিছু খেলি আজকে তার মনে কি দুষ্টুমী খেলছে বুঝতে না পেলে বললাম -- কি খেলা খেলবো আজকে ?

ও বললো -- ক্রিকেট :)
আমি বলি -- কি ? .... এই খেলার কথা কোথা থেকে জানলা ? :|
ও বললো -- আম্মু সেদিন ইন্টারনেটে খেলা দেখছিল আর আমাকে বলছিল কিভাবে খেলে ... আজকে তুমি আমাকে ঠিকমতো শিখায়ে দিবা আর আমরা খেলবো , ঠিকাছে ?

কোকড়া চুলওয়ালীর মা একজন কঠিন ক্রিকেটের পাগলী, একসময় নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে খেলা দেখতো ... আজকাল সময়ের অভাবে অতটা পাগলামী না করলেও খুব একটা কম ও করে না ... খেলা হলে সেদিন রান্না ঘরে তার যাওয়া হয়না, সময়মতো খাওয়া হয়না ... পরিক্ষা থাকলেও পড়তে বসতে চায় না ... বড়ই যন্ত্রনা (এটা আমার কথা না , কোকড়াচুওয়ালী বলেছে এটা :P)

আমি বললাম -- খেলবো কিভাবে, ব্যাট, বল লাগবে তো ... :|
ও বললো -- আমার একটা বল আছে তো (এই বলে কোথা থেকে জানি একটা টেনিস বল আনলো)

আমি বললাম -- এখন ব্যাট লাগবে

ওর কান্ড দেখে অবার না হয়ে পারলাম না .... ইন্টারনেটে খেলা দেখে সে ব্যাট ও চিনে ফেলেছে .... তখন দেখি সে গুটি গুটি পায়ে স্টোর রুম থেকে একটা ছোট্ট কাঠের টুকরা তুলে এনেছে ...

তা দেখে আমি বললাম -- এক কাজ করো ওটা দিয়ে খেলতে গেলে হাতে ব্যাথা পাবে ... তোমার ব্যাডমিন্টনের একটা র‌্যাকেট নিয়ে এসো

নিজের রুম থেকে র‌্যাকেট এনে এবার সে বললো -- এবার বলো কিভাবে খেলতে হয়?
তাকে নিয়ে টেবিলে বসে কাগজে স্টেডিয়াম , ক্রিজ , বাউন্ডারী একে সাদামাটা ভাবে বুঝিয়ে দিলাম এর নিয়ম কানুন গুলো ... এর মাঝে দেখি তার সবচেয়ে পছন্দ লেগেছে ওভার বাউন্ডারী / ছক্কা মারা আর বোল্ড আউটের ব্যাপার গুলো ...

এবার শুরু হলো আমাদের খেলা ------- বাইরে বরফ পড়ছিল তাই ঘরের ভিতরেই ইনডোর গেম খেলব বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ...

বেশ বড় ড্রইংরুমে টি টেবিল আর ২টো সিঙ্গেল সোফা আর এক পাশের ডাইনিং টেবিল সরিয়ে দেখি আমাদের স্টেডিয়ামটা খুব একটা খারাপ হয়নি ... একটা চেয়ার কে স্টাম্প বানিয়ে খেলা শুরু করার প্ল্যান করলাম .... এবার দু জনের মধ্যে টস হলো ... কে ব্যাট করবে আর কে বল ... টস হেরে আমার ভাগ্যে ব্যাট করার নির্দেশ দেয়া হলো ... যথাবিহীত আজ্ঞা সহকারে আমি চলে গেলাম ক্রিজে ... কোকড়াচুলওয়ালী এবার বল করা শুরু করলো ....

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বল ঠেকিয়ে দিলাম বলে আমাকে বলা হলো এভাবে না ... স্ট্রোক খেলতে হবে ... চতুর্থ বল খেললাম হালকা ড্রাইভ ...

এবার পুসকি চোখ রাঙ্গিয়ে বলে --- পরের দুটো বলে দুটো ছক্কা মারবে কিন্তু
আমি বললাম -- তুমি এত ভাল বল করছো আমি কিভাবে মারবো বলো ?
ও বললো -- তা জানি না , মারতে বলেছি তুমি জোরে মারবে ব্যাস ...

(আশে পাশের কাচের জিনিশ গুলোর কথা চিন্তা করে)পঞ্চম বলকে ওভার বাউন্ডারী না মারতে পারায় কটমট করে তাকিয়ে গটগট করে সে ফিরে গেল ওভারের শেষ বলটি করতে .... একটু পরে দেখি ৬ষ্ঠ বল আমার দিকে না এসে নিজেই ওভার বাউন্ডারী ক্রস করতে যাচ্ছে ... এবং ফলাফল হিসেবে তার অব্যার্থ নিশানায় বলটি শোকেজের গায়ে লাগতেই বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে উঠলো ... আরে এইটা ভাঙ্গলে ওর মা তো আমার মাথা ফাটাবে ... এবার পুসকিরে বললাম --- এবার সুন্দর করে বল করো আমি ছক্কা মারি ...

ওভারের শেষ বলে ডাইনিং টেবিলের উপর দিয়ে জানালার গ্লাসে বলটা গিয়ে লাগতেই জীবনে প্রথম দেখলাম ব্যাটসম্যানের চেয়ে বোলার অনেক বেশী খুশী হলো

এবার বোলার নিজেই আম্পায়ার হয়ে আমাকে আউট ঘোষনা দিয়ে বললেন যাও বল করো এবার আমি ব্যাট করবো :| .... আমি বললাম -- তথাস্ত !

প্রথম বল করতেই দেখি কোকড়া চুলওয়ালী শচীনের মতো ব্যাট ঘুরিয়ে নিজেও ঘুরে গেল কিন্তু বল ব্যাটে না লাগায় কোন রান হলো না .... আমি ভাবলাম এমন করে আস্তে বল করলে আজকে নির্ঘাত একটা এক্সিডেন্ট হবে.... তাই একটু জোরে ছুড়লাম দ্বিতীয় বলটি ... এবারও পুরা ব্যাট ঘুরিয়ে দিলেও বল - ব্যাট একসাথে না হওয়ায় কোন রান হলো না ...

আমি বললাম -- শোনো , তুমি আগে ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে বল ব্যাটে লাগাও এর পরে অমন করে ছক্কা মারতে পারবে ... ঠিকাছে ?

তৃতীয় আর চতুর্থ বলটি সে খুবই সুন্দর মতো জায়গাতে দাড়িয়ে হালকা করে ঠেকিয়ে দিলো .... পঞ্চম বলটি ও ঠেকাবে ভেবে আস্তে করে ডেলিভারী দিতেই বিদ্যুৎ চমক খেলে গেল পুসকীর হাতে , বলে ব্যাটে এক হয়ে দুর্দান্ত গতিতে বল দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গিয়ে দেয়ালে লাগলো - ছক্কা ! অমনি তার আনন্দ আর কে দেখে ... যেন বিশ্বকাপ জয় করেছে এমন আনন্দে লাফাতে শুরু করে দিলো আর বললো --- ছক্কা ছক্কা ছক্কা মেরেছি :) .... আমি ওকে বললাম -- এত জোরে মারলে ঘরের কাচের জিনিস কিছু ভেঙ্গে গেলে আম্মু এসে কিন্তু বকা দিবে ...

তার সাফ কথা -- আমি ছক্কা মারবো .... এখানে সমস্যা হলে বাইরে বরফে খেলবো ... চলো ...

আমি বললাম -- তোমার না শরীর খারাপ ? আজকে ভিতরেই খেলি
ও বললো -- তাহলে আমাকে ছক্কা মারতে দিতে হবে এখানেই ....
আমি বললাম -- (কি আর করা) আচ্ছা ঠিকাছে :|

এবার আমি কিছুক্ষন বল করছি এমন করে যেন ও মারতে না পারে ... কখনো বলছি এবার তুমি ঠেকাও ... কখনো বলছি এবার গ্রাউন্ড শট দিয়ে চার রান নাও .... এভাবে চলতে চলতে একসময় মনে হলো ছক্কার ভুত মনে হয় ওর মাথা থেকে নেমেছে ... দুটো বল আসতে করার পর তৃতীয় বলটি আবার আস্তে করার পরেই দেখি আবার সেই দুর্দমনীয় ব্যাটিং ...

ঝড়ের বেগে ব্যাট ঘুরলো, বল-ব্যাট এক হলো এবং আকাশ ছোয়া শটের শেষ পরিনতি হিসেবে আমাদের স্টেডিয়ামের একপাশের ফ্লাড লাইট (এনার্জি সেভার লাইট) প্রচন্ড বিষ্ফোরনের শব্দে (;)) ভেঙ্গে গেল ... এইবার দুই ক্রিকেটারের মানসপটে এমন একজনের চেহারা ফুটে উঠলো যে এই অবস্হা দেখলে আমাদের দুজনকে পিটিয়ে তক্তা বানাবে :| ....

জলদি জলদি হোল্ডার থেকে ভাঙ্গা লাইট খুলে গারবেজে ফেলা হলো, কাচের টুকরোগুলো প্রথমে ব্রাশ দিয়ে একসাথে করে এর পরে গুড়োগুলো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে টি টেবিল আর সোফা জায়গা মতো রেখে দেয়া হলো ... এর পরে দু-জনে এক দৌড়ে রাস্তার ওপাশের দোকান থেকে একই রকম এনার্জি সেভার লাইট কিনে ঘরে ঢুকে জায়গা মতো লাগিয়ে দেখা হলো ঠিকঠাক জ্বলছে কি না ... এর পরে আমরা কেবল মাত্র লাইট অফ করে টিভি অন করে "ড্রাগন বল জি" দেখা শুরু করেছি .... অমনি দেখি কোকড়া চুলওয়ালীর আম্মু বাসায় এসে হাজির ।

এসে হাসি মুখে বললো --- কি ব্যাপার মানিক জোড় আজকে এত লক্ষি হয়ে গেলো কিভাবে ? আজকে সূর্য কোন দিকে দিয়ে উঠেছিল ? আমি তো ভেবেছিলাম বাসায় এসে দেখবো লঙ্কাকান্ড হয়ে গিয়েছে .... এখন তো সব দেখি ঠিকঠাক আছে .... এদিক ওদিক ফিরে সব কিছু ঠিকঠাক পেয়ে উনি বেশ আশ্বস্হ বোধ করলেন মনে হলো ..... এদিকে আমরা এক জন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে খালি একটু হাসি দিলাম .... তবে মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম গার্বেজের মধ্যের ভাঙ্গা টুকরাটা যেন ওর চোখে না পড়ে :|

পরম করুনাময় মনে হয় আমাদের দোয়া কবুল করেছিলেন , ন হলে এতো দিনে তো নির্ঘাত একটা কঠিন শাস্তি আমাদের দুজনের উপোরে আপতিত হতো সেই সাথে কিছু বকা ফ্রি পাওয়া যেত :( ... তবে এ যাত্রায় বেচে গেলাম মনে হয় :) ....

তবে যাই হোক না কেন আমরা দু জনেই কিন্তু সেদিন ছক্কা মেরেছিলাম B-)










সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০০৯ দুপুর ২:১৩
৫৭টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×