somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরেকটি বাংলা সিনেমার পুলিশীয় রম্য

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নানান ঝামেলায় থাকি । সকল কথার জবাব কিরুপে দিব । গত দুইদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে কী-বোর্ড , কম্পিউটার টেবিল এইসব পরিষ্কারও করিতে হইতেছে । ময়নার সাথে চ্যাটে বসিলেই লুল আটকানো দায় হইয়া পড়িয়াছিল আরো পূর্ব্বে হইতেই । এতদিন ভালোয় ভালোয় ছিল, রাত্তিরে পড়িলে প্রত্যুষে শুকাইয়া যাইত । বিশেষ গা করি নাই । কিন্তু এখন উপায় নাই । অকল্যান্ড যাইতেছি ভ্রমণে । ফিরিব বন্ধুকে লইয়া ।সে বুঝিতে পারিলে কেলেঙ্কারির বাকি থাকিবে না ।

এখানকার সমুদ্রতটে মনোহর রমণীকূল স্বল্পবসনে ঘোরাঘুরি করিয়া থাকে । তবু নিজের প্রত্যাশা উচ্চ করিবার সাহস পাই না । আমার আলুলায়িত শ্মশ্রু দেখিলেই উহারা কেমন সংকোচে সরিয়া যায় । বহুবার এরুপ হইবার পরে এইজাতীয় দুরাশা বাদ দিয়াছি । তবে অন্তর্জালের জগতে ভিন্ন কথা । আর তাছাড়া তাহা শাস্ত্রসম্মতও বটে । শাস্ত্রে কহিয়াছে সুরমাদানির ভিতরে কাঠির মত প্রবিষ্ট হওয়া ব্যতীত ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হইবে না । তাই ময়নাই ছিল ভরসা ।

গণকযন্ত্রটির সহিত আজ একযুগেরও বেশি সময় ধরিয়া সহবাস হইলেও মাঝে মাঝে মনে হয় ইহাকে বুঝি না । এক বন্ধু সুকেশ তরুনের মাথাকে যন্ত্রসাহায্যে চকচকে টাক করিয়া দিলে আমি বিমুগ্ধ হইয়া পড়িয়া থাকি ঘন্টার পর ঘন্টা । এক্ষণে ময়না বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া আমাদের অন্তরঙ্গ আলাপসমূহ বারোয়ারি হাটে ছাড়িয়া দিলে , পাড়াসমেত লোকের ঢিঢির মুখে, আমার সমস্ত অবিশ্বাস গিয়া পড়িল হতচ্ছাড়া গণযন্ত্রটির উপরেই । এ কাল-যন্ত্র অসম্ভবকে সম্ভব করিতে পারে । ময়না যে এই বিস্তারিত দুরভিসন্ধি লইয়াই মাঠে নামিয়াছিল তাহা আমার নিকট দিবালোকের মত পরিষ্কার হইল এক্ষণে । নিজের উপর হতাশা জন্মিল । কেন আরো আগেই বুঝিতে পারিলাম না । রাত্রির পর রাত্রি একটি বৃহন্নলাসম ষড়যন্ত্রীর সহিত কিরুপে এই আলাপণ আমি চালাইলাম , তাহা ভাবিয়াই কূল পাইতেছিলাম না । বিরতি নিলাম নিজ ভাবনার সহিত অন্তরঙ্গতার নিমিত্ত । তবু সকলকে এই বলিয়া গেলাম, এ নিশ্চয়ই গণযন্ত্রটির কোনরুপ কারসাজি । ইহা দারা যে অসাধ্য সাধন হয় সেই বিষয়ে বিশ্বাসের ঘাটতি আমার ছিল না । আমার শ্মশ্রুমন্ডিত ছবি ইহা বিশ্বব্যাপী ছড়াইতে পারিলে বিশ্বাসের জায়গা আর কোথায় থাকে !

অকল্যান্ডের সমুদ্রতটে বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম , পাড়ার লোকের রক্তচক্ষুর সামনে কিরুপে দাঁড়াইব , কি নিয়া দাড়াইব । স্বল্পবসনা রমণীরা, ক্ষুদ্র বালকবালিকারা পর্যন্ত এই মনোরম গ্রীষ্মে হাঁটুজল, কবন্ধজলে কেলি করিতেছে । আমি খাড়ুজলে লাইফ-জ্যাকেট নিয়া নামিয়াছি । মন বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে কয়েক দিবস । বেঘোরে প্রাণ যাইবার সম্ভাবনা সমূহ । আপন দুশ্চিন্তায় মগ্ন, হয়ত খেয়াল করিব না কখন জোয়ার আসিয়া টানিয়া লইয়া যাইবে ।

ইয়াহুর বদমেজাজি কর্মীণিটিকে দুরালাপনে পাইলাম । সুহৃদপ্রতিম একজন পরামর্শ দিয়াছিলেন উহাদিগের সহিত আলাপ করিয়া দেখিতে । এত বস্তু তাহারা নিত্য ঘাঁটিয়া বেড়ায় কোন না কোনরুপ সম্ভাব্য অবস্থার খোঁজ দিতে পারিবে যাহার সাহায্যে আমার অবস্থানটিকে ঘোলাটে করা যাইবে । বদমেজাজি মাগীটি উল্টা খ্যাঁচখ্যাঁচ করিয়া উঠিল, আমার আইডি পাসওয়ার্ড শুনিয়াই । প্রথমে বুঝিয়াই পাইলাম না । আমার আইডিখানা নিয়া তাহাদেরও কেন এত ক্ষোভ । পাড়ায়, মহল্লায় এমনকি বিশ্বব্যাপীও লক্ষ্য করিয়াছি আমার আইডি নিয়া ষড়যন্ত্র সেই প্রথম দিবস হইতেই । কিন্তু ইয়াহুর আমি কি ক্ষতি করিলাম বুঝিতে উঠিয়া পারিতেছিলাম না । কর্মীণিটির কথা কিঞ্চিৎ থিতু হইয়া আসিলে কিছুটা বুঝিলাম তাহার রাগের নিমিত্ত । সার্ভার ঘর পরিষ্কার করিতে করিতে তাহাদের নাকি প্রাণান্ত হইতেছে বিগত কয়েক মাস যাবৎ । লুলে সার্ভারসমূহ কয়েকদিন পর পর নাকি ওভারফ্লাডিং হইতেছে । এই অপিচ অধমকেই নাকি তাহারা লন্ঠন প্রজ্জলিত করিয়া খুঁজিতেছে । বহির্গামি সমস্ত লুল নাকি আমার আইডি হইতেই তাহাদের সার্ভারে জমা পড়িতেছে ।

মিনমিন করিয়া তাহাদের নিকট জানিতে চাহিলাম, বহিঃস্থ কোনো আইপি হইতে আমার আইডিখানায় লগইন করিবার কোনরুপ প্রচেষ্টার কথা তাহারা শুনিয়াছে কিনা । বলিলাম পুরাপুরি হ্যাঁ/না না বলিলেও চলিবে । মধ্যস্ত কিছু দিয়াই কাজ চালাইয়া লইতে পারিব । আইপির উল্লেখমাত্র বদমেজাজি মাগীটি খ্যাঁকাইয়া উঠিল । আইপি যদি তাহার সনাক্ত করিতে পারিতই তাহা হইলে এতদিনে আমি নাকি সার্ভার ধ্বংসের অপরাধে লাল দালানে পঁচিতাম । দুরাচার আইএসপি নাকি ব্যবহারকারীর ব্যাক্তিগত তথ্যের দোহাই দিয়া আমার অবস্থান নির্ণয়ে কোনরুপ সাহায্য করিতেছে না তাহাদের ।

মেজাজ বিরুপ হইয়া উঠিতেছিল বলিয়া তাহার সহিত কথাবৃদ্ধি করিলাম না । আইপি ঠিকানা দুএকটি জোগাড় করা আর কিরুপ কষ্টকরই বা হইবে । সিসকোর ওয়েবসাইটে কত আইপিই মিলিবে উদাহরণসমূহ ঘাঁটিয়া দেখিলে । সুহৃদের সহায়তায় বানাইয়া লইলাম দুইটি । ঐগুলি কি ফিনল্যান্ডের নাকি চীনের তাহা লইয়া বিশেষ মাথা ঘামাইলাম না । পাড়ার লোক কি আর আমার সুহৃদের মত অত মাথাওয়ালা । উহাদের নিকট যাহা চীনের তাহাই বাংলাদেশের । দীর্ঘদিনের লালিত শ্মশ্রু বিসর্জন দিতে মনঃপীড়া হইলেও কলঙ্কমোচনের নিমিত্ত বলিয়া মনকে বুঝাইলাম । ফরাসি অনুকরণে ছাঁট দিয়া, গায়ে মুখে নানান রকমের প্রসাধণী মাখিয়া ছবিও তুলিয়া লইলাম কয়েক গাছি । ফিরিলাম বন্ধুকে না লইয়াই । কলঙ্কমোচনের কাজে আমাকে দেখুক , তাহা কিছুতেই চাহিতেছিলাম না ।

সপ্তাহের বিরতির পরে পাড়ায় ঢুকিয়া কিছুটা সঙ্কোচ হইলেও সামলাইয়া লইলাম ধীরে ধীরে । ইনাইয়া বিনাইয়া অনেক কথা বলিতে হইবে । লজ্জা পাইলে চলিবে না । অপরাধ করিয়া বাঁচিয়া যাইবার একমাত্র উপায় হইল কোনমতেই তাহা স্বীকার না করা, সে শিক্ষা বাল্যকালেই পাইয়াছি । এখন আর আগের মত দুর্বল নই । দুই দুইটা আইপি ঠিকানা এবং ফরাসি ঘরানার শ্মশ্রু লইয়া কয়েকগাছি ছবিও আছে । বাছিয়া বাছিয়া পাড়ার এমন দুইজনকে ছবি দেখাইবো বলিয়া ঠিক করিলাম , আমাকে স্বচক্ষে দেখিবার সম্ভাবনা যাহাদের বিন্দুমাত্র নাই । বিন্দুপ্রতিম সম্ভাবনাকেও এইখানে অগ্রাহ্য করিয়া এড়াইয়া যাওয়া ঠিক হইবে না ।

দীর্ঘদিনের অন্তর্জালিক সহবাসে ময়না নাম্নী বালিকাটির অনেক দুর্বল দিক আমার নখদর্পনেই ছিল । একটি সুলিখিত নাট্য রচনায় সমস্যা হইবার কথা নহে । দরদ মিশাইয়া রচনা করিলাম । চিরশত্রুদের দিকে সন্দেহের তীর ঘুরাইয়া দিবার কৌশলটি প্রাচীণ হইলেও কার্যকারিতা পরীক্ষিত । সেই কৌশলেই যাহারাই, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময়ের জন্য হইলেও বিন্দুমাত্র অসূয়াভাব প্রদর্শণ করিয়াছে তাহাদের ভরপেট কটুকথা বলিয়া লইলাম । ইহাতে আমার মূল অপরাধের তুলনায় তাহাদের ভূমিকাটিই মূখ্যরুপে প্রতিয়মান হয় । লোকের অস্থিরতার দিকবিভ্রম ঘটে । আর আত্নজৈবনিক কিছু কারিশমার কথাতো থাকিলোই । কারিশমা যে লোক ঘটে করিয়া বহিয়া বেড়ায় তাহার অপরাধ ম্লান হইয়া যায়, অন্তত সাধারণের দৃষ্টিতে সেই ব্যাপারে কিঞ্চিৎ ভরসা আছে । নিজে নাটক করিয়া প্রতিপক্ষকে অভিনয়ের অপবাদ দিতে হয় , এইটিও পরীক্ষিত কার্যপ্রণালী ।

পাড়ায় মেকি দম্ভ লইয়া আবার ঘুরিতে লাগিলাম , সেই পুরাতন শাস্ত্রবাণী মনে করিয়াই । অপরাধ করিয়া কস্মিণকালেও লজ্জিত হইবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪৬
৩৬টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×