somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

জাতীয় কল্যাণের স্বপ্নে অনাগত দিন

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় কল্যাণের স্বপ্নে অনাগত দিন
ফকির ইলিয়াস
-------------------------------------------------------------------------
বর্ষীয়ান রাজনীতিক জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপাট তৈরির পর তার এ দায়িত্ব গ্রহণ যেমন আনন্দের, তেমনি বেদনারও। বেদনার এজন্য যে, এই প্রাজ্ঞ রাজনীতিক আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে সরে যাচ্ছেন। তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার মাথায় তুলে নিয়ে জাতীয় বিবেকের প্রতীক হচ্ছেন। বেদনা এ জন্য যে, এই অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব এই রাজনীতির ময়দানেই হারিয়েছেন তার সহধর্মিণী আইভি রহমানকে। আইভি রহমান দেখে যেতে পারেননি রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমানকে।
জিল্লুর রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এটা তার জীবনের বহুল গৌরবোজ্জ্বল সময়। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জাতির জনকের স্বপ্নের প্রতি জিল্লুর রহমান ছিলেন অবিচল, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। এবার তিনি জাতীয়ভাবে সেই চেতনা ধারণ ও লালনের সুযোগ পাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে।
ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগে তথাকথিত সংস্কারবাদীরা যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার জন্য তৎপর ছিল তখন জিল্লুর রহমান দলকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন শক্ত হাতে। প্রবীণ এ মানুষটি তার নীতি ও দলীয় আনুগত্যের প্রতি ছিলেন সুদৃঢ়। কঠিন পরিস্খিতি মোকাবেলা করেছেন। সভানেত্রী শেখ হাসিনার অবর্তমানে হাল ধরেছেন অভিজ্ঞ কাণ্ডারির মতো। দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে দলকে নির্বাচনমুখী করেছেন। যার সুফল পেয়েছে আওয়ামী লীগ ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে।
নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান বহন করছেন জাতির প্রতি এই প্রজন্মের প্রগাঢ় ভালবাসা, দেশ মাতৃকার প্রতি কঠিন দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্বটি হচ্ছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। বলতে দ্বিধা নেই, বাঙালি জাতি একটি কঠিন কাল অতিক্রম করছে। সেই কালটি হচ্ছে চারদিকে কালো শক্তির দাপট, দুর্নীতি, দু:শাসন এবং চরম অর্থনৈতিক মন্দাবস্খা।
দেশের অভ্যন্তরে চলছে একটি চরম স্নায়ুযুদ্ধ। আর এই যুদ্ধটি হচ্ছে মুক্তিকামী মানুষ বনাম হীন মতলববাজদের মধ্যে। সুবিধাবাদী-মৌলবাদী একটি চক্র তৎপর রয়েছে যে কোন ফাঁকফোকরে দেশে অস্খিরতা সৃষ্টি সুযোগ নেয়ার জন্য। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটি জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার পর গোপনে একটি মহল সংঘটিত হচ্ছে বলে দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা সংস্খাগুলো রিপোর্ট দিচ্ছে। এমন কি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ আসছে, যা মোটেই শুভ লক্ষণ নয়।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী চক্রটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হচ্ছে সরাসরি জঙ্গি। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ডানপন্থি বলে কথিত এদের সহযোগী চক্রটি। দুটি সংবাদ পত্রপত্রিকায় দেখেছেন দেশের মানুষ। নিজামী-মুজাহিদ প্রমুখ বলেছেন, তারা পালিয়ে যাবেন না। তারা আইনগতভাবে সব কিছু মোকাবেলা করবেন। আর বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা সাকা চৌধুরীও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে।’
এসব কথার অর্থ কি দাঁড়ায়? বোঝাই যাচ্ছে এই ইস্যুটি জোরালোভাবে সামনে এলেই মৌলবাদী রাজাকার আর ডানপন্থি দোসর দুই শক্তি মিলে দেশে একটি অরাজকতার সৃষ্টি করতে উদ্যত হবে। যুদ্ধাপরাধী নিজেই যদি বলে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে তাহলে এটাকে মশকরা ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না।
দুই.
বিএনপি-জামায়াতের সাংসদরা নবম জাতীয় সংসদের শুরু থেকেই একটি ছলছুতো খুঁজছে তা কারও অজানা নয়। আসন বন্টন নিয়ে তারা সংসদ বয়কট করেই চলেছে। নবম জাতীয় সংসদের নতুন স্পীকার আবদুল হামিদ। অথচ বিএনপি আসন চাইছে সাবেক স্পীকার জমিরউদ্দিন সরকারের বন্টন করে যাওয়া খতিয়ানের ভিত্তিতে। নবম জাতীয় সংসদে অষ্টম জাতীয় সংসদের স্পীকারের ‘বন্টননীতি’ চলবে এটা কিভাবে প্রত্যাশা করছেন তারা?
কথা সেটা নয়। কথা হচ্ছে­ বিএনপি আসলে একটা গোলযোগ বাঁধাতে চাইছে। বিএনপি চলতি সংসদে নাও যেতে পারে। এমনকি আগামী অধিবেশনেও তারা যাবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধছে। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যে গাঁটছড়া বেঁধে ছিল তা শেষ হবে কি না তা তাদের নিজস্ব বিষয়। তবে একটি কথা, দালাল-রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার ধান্দা আর কত? সত্য কে অস্বীকার করার মানসিকতা আর কত?
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। কিছু পুরনো চুক্তি নবায়ন হয়েছে। এ নিয়েও নানা কথা বলছে বিএনপি। টিফা, গ্যাস উত্তোলন, ট্রানজিট, বন্দর বিষয়গুলো নিয়ে বর্তমান সরকার কোন চুক্তি করলে তা গোটা দেশবাসীকে জানিয়ে করা দরকার। ট্রানজিট বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে ভেবে দেখতে হবে তা থেকে বাংলাদেশ কতটা উপকৃত হচ্ছে সে দিকটিও। বাঙালি সব সময়ই প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রত্যাশী তবে তা হতে হবে দ্বিপক্ষীয়। আমি মনে করি বই বিক্রি, স্যাটেলাইট চ্যানেল আদান-প্রদানসহ বাণিজ্যিক যে কোন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হতে পারে ভারতের সঙ্গে এবং এটাও মনে করি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল কখনই দেশবিরোধী, জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোন চুক্তিই প্রতিবেশী কারও সঙ্গে করবে না।
টাস্কফোর্স গঠন করে যদি মৌলবাদী জঙ্গি চক্রকে দমন করা যায় তবে সে বিষয়ে লাভবান হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিটি দেশই। কোন হীন দুষ্টচক্রকে দমনে যে কোন শুভ পরিকল্পনার তো বিরোধিতা করা উচিত নয়। আমি বুঝি না তারপরও বারবার খোন্দকার দেলোয়ার কেন টাস্কফোর্সের বিষয়টির এত বিরূপ সমালোচনায় পঞ্চমুখ।
বাংলাদেশে নানা ধরনের অশুভ শক্তি তৎপর। কোন মহলকে কে কিভাবে ইন জোগাচ্ছে তা খেয়াল রাখতে হবে গভীরভাবে। পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউটের কারিকুলাম ইস্যু নিয়ে জ্বালাও পোড়াও করার কাজে নেমেছে একটি মহল। এরা কারা? কেন তারা একযোগে দেশের প্রতিটি পলিটেকনিকেল অঙ্গন সরগরম করে তুলল?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষা সিলেবাস বদলায় এবং বদলাবেই। বিশ্বের অগ্রসরমাণ শিক্ষা ব্যবস্খা সে উদাহরণই রেখে যায়। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলতে পারে। কোন সভ্যতাই জ্বালাও পোড়াও গ্রাহ্য করে না। এ বিষয়ে সদা সতর্ক থাকতে হবে সরকারকে। যাতে কোন অহেতুক ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুষ্টচক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
দেশের প্রতিটি মানুষের লক্ষ্যবিন্দু হওয়া উচিত জাতীয় কল্যাণ। দেশ ও মাটিকে যদি ভালবাসতে হয় তবে ব করতে হবে আত্মপ্রতারণা। এই প্রজন্মকে দেখাতে হবে মুক্তজ্ঞান চর্চার আলোচিহ্ন। এর কোন বিকল্প নেই। অনাগত দিনগুলোকে সুখের ছায়ায় ঢেকে দিতে হলে বাদ দিতে হবে সব হীনমন্যতা। সেজন্য প্রতিটি মানুষকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে নিজ নিজ পাঁজর ছুঁয়ে।
নিউইয়র্ক, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত








৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×