somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবাহ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদে বাড়ি এসে বিপাকে পড়লাম। অবশ্য এ এমন ধরনের বিপাক যে পাকে সবাই পড়তে চায়। হিন্দুদের সাত পাকেঁ বাধা পড়ার মতই ব্যাপার।
মা আমার জন্য মেয়ে দেখেছেন। মেয়ে সোমত্ত হলে মা-বাবাদের চুল যেমন দুশ্চিন্তায় সাদা হয়ে যেতে থাকে তেমনি ছেলে বিবাহ যুগ্যি হলে পুলকে বাবা-মায়ের চুল নতুন করে গজাতে থাকে। আর সেই ছেলে যদি ঢাকা মেডিকেলে পড়ে তাহলে তো কথাই নেই!
গত ঈদে অর্থাৎ রোজার ঈদে মেয়ের দুজন নিকট সম্পর্কীয় আত্মীয় আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে দেখে গেছেন। এবং তাদের মেয়েকে আমার সাথে গাটছড়া বাঁধার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। ফলশ্র“তিতে আমার গার্জিয়ানদ্বয় অর্থাৎ আমার মা ও বড় ভাইকে নিয়ে তাদের অতীব সুন্দরী ,কাচা হলুদ রঙা ফর্সা মেয়েকে দেখিয়ে নিয়ে এসেছেন। সুন্দরী মেয়ে পছন্দ হওয়ারই কথা তারপর তাদের পণের পাল্লাও বেশ ভারী।
এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি, আমাদের অঞ্চলে চিংড়ি চাষের কারণে কতিপয় বুদ্ধিমান লোক সাধারণ গরীব ধান-চাষীদের জমি ইজারা নিয়ে চিংড়ি চাষ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ নয় একেবারে তালগাছ বনে গেছে। আমার হবু (!) শ্বশুর এই বিরল প্রজাতির দু®প্রাপ্য সদস্য।
এই বিরল প্রজাতির ধনাঢ্য সদস্যদের মধ্যে একটা অলিখিত গোপন প্রতিযোগীতা আছে। জামাই প্রতিযোগীতা। নিজের ছেলেরা ক অক্ষর গোমাংস থাকলেও তা নিয়ে তাদের কারো মাথা ব্যথা নেই। কার জামাই কত বড় চাকরি করে ,কার জামাই ডাক্তার ,কার জামাই ইঞ্জিনিয়ার ,কার জামাই জজ-ব্যরিষ্টার ,কার জামাই সচিবালয়ে চাকরি করে তাই নিয়ে এ বিরল প্রজাতির ভাবনার অন্ত নেই। নিজের জামাইকে যে যত বড় দেখাতে পারে সে সমাজে তত সম্মান লাভ করে। নিজের ছেলেদের বেলায় লবডংকা।
ঈদের আগের দিন রাতে মা যখন বিয়ের প্রসংগ তুললেন তখন পাশে উপবিষ্ট পিতার অবর্তমানে আমার বর্তমান অভিভাবক বড় ভাই ও ভাবী। বড় ভাইও আমার মত ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছে। সে সরকারী চাকরি করে এবং আমার পড়াশুনার খরচ বহন করে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো ,বিয়ের প্রস্তাব এসেছে বড় ভাইয়ের শ্বশুরকুলের আত্মীয়ের মধ্য থেকে। যে কারণে বড় ভাইয়ের আগ্রহটা বেশী। তবে তার স্বভাব অনুযায়ী সে এ প্রসংগে কথা বলছে খুবই কম।
বড় ভাইয়ের কারণে সরাসরি না বলতে পেরে আমি মায়ের উপর ঝাঝ দেখালাম ‘আমার এখনও পড়া শেষ হয়নি। এর মধ্যে বিয়ের কথা আসছে কেন?’
‘রেজাল্ট ভাল না হলে বিদেশের একটা স্কলারশীপ পাওয়া অসম্ভব।’ আমি জানালাম।
‘সেই ব্যবস্থাই তো হচ্ছে’ আমার কম কথার বড় ভাই একটা ছোট বাক্য বলে থেমে গেল যেন বাকীটা আমি হাতগুনে বুঝে ফেলব।
বাক্যের বাকীটা মা শেষ করলেন ‘ তোর বিদেশ যাওয়ার সব খরচÑখরচা হীরার বাপই দেবে তাই সে যে কয় লাখ টাকা লাগুক। ওদের একমাত্র জামাইকে ওরা বিদেশ ফেরত ডাক্তার বানাবে এটাই ওদের ইচ্ছে।’ মা দম নেয়ার জন্য থামলেন।
ভাবী ছিল রান্নাঘরে। শুধু ঈদের কদিন এসে মাকে সাহায্য করে বলে তার বাড়াবাড়িটা একটু বেশী। মাকে রান্নাঘরের কোন কাজে হাত দিতে দেয় না।
ভাবী আমাদের সবার জন্য দুমিনিটের ম্যাগী নুডুলস দশমিনিটে তৈরী করে নিয়ে এসে আমার হাতে দিতে দিতে বলল ‘তোমার মাথা খারাপ করে দেয়ার জন্য হীরার একবার দর্শনই যথেষ্ট।’
‘ যে জিনিস দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায় তা না দেখাই ভাল। কি দরকার শুধু শুৃধু মাথাটা খারাপ করার।’ আমি হাসতে হাসতে বললাম। ‘তাছাড়া তুমি তো জানোই ভাবী উল্লুকের গলায় হীরার মালা শোভা পায় না।’ কেউ হাসছে না দেখে আমি হাসি থামালাম।
‘ তোমাকে যে উল্লুক ভাবে সে নিজেই উল্লুক।’ ভাবী পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
‘ আমি নিজেকেই নিজে উল্লুক ভাবি।’
বড় ভাই কি মনে করে , সম্ভবত সে থাকলে মা ভাবী ও আমি খোলাখুলি ভাবে ঐ মেয়ের ব্যাপারে আলাপ করতে পারব না বিবেচনা করে অন্ধকার রাতে তিন ব্যাটারীর টর্চ লাইট হাতে নিয়ে ‘মা আমি একটু বাজারের দিকে যাচ্ছি ’ বলে বেরিয়ে পড়ে।
মা ‘তাড়াতাড়ি ফিরিস ,বেশী রাত করিস না ,তুই আসলে সবাই খেতে বসব ’বলে বড়ভাইকে তাগিদ দেয়।



ভাবী আমার চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের বড় । বিয়েও হয়েছে বছর দুয়েক। । তাছাড়া সে থাকে ভাইয়ের সাথে খুলনায়। আমি ঢাকায়।ঈদ এবং অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানেই শুধু আমাদের দেখা হয়। এজন্য আমাদের মধ্যের জড়তা কাটেনি।
ভাবী আমার থেকে একটু দুরত্ব রেখে মায়ের পাশ ঘেষে বসে।
আমি ভাবীর দিকে তাকিয়ে কৌতুহল বশে জিজ্ঞেস করি ‘তোমার হীরা না মতি লম্বা কেমন?’ আমি নিজে লম্বা বলে মেয়েদের এই ব্যাপারটাই প্রথমে দেখি।
‘সুন্দরী মেয়েরা সাধারণত খাটোই হয়। তবে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। হীরা যথেষ্ট লম্বা। কি বলেন মা ? আপনি তো দেখেছেন?’ সে মায়ের দিকে তাকায়।
মা হয়তো আমার পড়াশুনার ক্ষতি হবে কিনা এদিকটা খতিয়ে দেখছিলেন। এজন্য থতমত খেয়ে বললেন ‘হ্যা হ্যা বেশ লম্বা। আমার চেয়েও লম্বা। দেখতেও খুব সুন্দর। গায়ের রঙ ফর্সা। তোর সাথে মানাবে বেশ।’ মা যে হবু ছোট বৌমার ব্যাপারে খুব খুশী তা মায়ের চোখমুখের আলোর আভা দেখে বেশ বোঝা যায়।
ভাবী উঠতে ঊঠতে বলে ‘ তোমার তো গাড়ির খুব শখ। সে ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। আমিই করে দেব। তবে শর্ত একটাই। মাঝে মধ্যে আমাকে গাড়িতে করে ঢাকা শহর ঘুরিয়ে দেখাতে হবে।’
তাহলে ব্যাপার এটাই! ভাবীই ঘটকালির দায়িত্বটা পালন করছে।



ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার একটা অলিখিত নিয়ম আছে। যুথিকে ঈদ মোবারক জানানো। অবশ্য মনে মনে। স্বল্পভাষী যুথির সাথে অল্প-বিস্তর কথা হলেও ওকে এ ব্যাপারটা জানানো হয়নি। দেখি এবার ঈদের পর ঢাকায় যেয়ে ওকে বলতে হবে। তবে আমার মনে হয় কিছু কিছু জিনিস না বলাই ভাল। নিজের জন্য কিছু রাখতে হয়। তো সে প্রিয়তমা হলেও। আর এবার রূপবতী রাজকন্যে হীরার চিন্তা যেভাবে আছন্ন করে আছে তাতে শ্যামলা অন্যের আশ্রিতা যুথি পাত্তা পাবে কিনা সন্দেহ। মুখে যতই বড় বড় কথা যৌতুক বিরোধী বুলি আওড়াই না কেন মনের কোনে লটারীর মতই আসা সম্পদের লোভ কার না আছে! যৌতুক বিরোধী বাতচিত তো অন্যের জন্য। নিজের উপর অহেতুক কেন ওসব প্রয়োগ করা। তাছাড়া তারা তো আর যৌতুক দিচ্ছে না। তাদের একমাত্র মেয়ে-জামাইকে তারা উপঢৌকন দিচ্ছে। জামাইকে দেয়া মানেই তো মেয়েকে দেয়া। জামাইকে বিদেশ থেকে ডাক্তারীর উচ্চ ডিগ্রী আনানো তো মেয়ের জন্যই ইনভেস্টমেন্ট।
বাকিটুকু আগামী পর্বে..
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×