somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেব্রুয়ারির নবমঃ দৈনিক খবরাখবর এবং বিষয়াশয়, অনুষঙ্গ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তেরছা হয়ে বাঁধা মশারিটা সকালে জানিয়ে দিল, এরকম অযত্নে টাঙানো হলে সে কালকে থেকে ধর্মঘট শুরু করবে। আমি সব শুনে একটু নিরুপায় বোধ করছি। ভাবলাম, দাবি-দাওয়া মেনে নেই; রাতে মশা খুব জ্বালায়। ঘরের কোণে কোণে খুঁজে পেতে কয়েক টুকরা দড়ি পেলাম। সেগুলো হাতে পায়ে জুড়ে দিতেই মশারির মুখে কী বিগলিত হাসি! আমারও ভালো লাগলো, যাক বাবা। এবারে খুশি, হলো তো?

এরকম ভেবে পা ডুবিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। একটু এগুতেই দেখা গেল দরজার কোণে গতরাতে রহিমার ছড়িয়ে দেয়া সাদা চকের মত বিষে মুখ ডুবিয়ে দুটি কিশোর-তেলাপোকা মরে আছে। তাদের ঊর্ধ্বমুখী ছয়-ছয়টি পা নির্দেশ করছে একটা গুরুতর প্রোপাগাণ্ডা: পতিতার মেলে ধরা উরুর মত ব্যক্ত হয়ে গেছে জীবন আর কৈশোরের আকুল কৌতূহল। আমার খারাপ লাগে। আচমকাই গলার মাঝে খট করে একটা দলা আটকে যায়। ইদানীং এই বাজে ব্যাপারটা ঘটছে। বেশ আগে, একটা সময়ে খারাপ লাগার ব্যাপারগুলো আমার অনুভূতিকে দেউলিয়া করে দিতো আর সেসময়ে নানামুখী ব্যস্ততায় আমি সেই বিপন্নতা ঢেকে ফেলতাম। আজকাল সেটা হচ্ছে না (কিছুটা স্বস্তিকর ব্যাপার। সর্বদা ঢাল-তলোয়ারে প্রস্তুত থাকাটা কষ্টের), আবার এহেন উটকো গলায়-আটকে-থাকা দলার প্রকোপও বাড়ছে। আমি বেশ দুশ্চিন্তায় থেমে থাকি কিছুক্ষণ।

কিশোর তেলাপোকাদের ঠেলে সরিয়ে দিই একটু। পৃথিবীর পাঠ চুকেছে, এখন পিঁপড়েরা আসবে ভূরিভোজের আহার্য নিয়ে যেতে। আমি সেই ফিস্টের হাট-বাজার একটু স্থানান্তরে পাঠিয়ে ঘটিয়ে ভুলে থাকতে চাই যে আমার গলায় একটা কিছু আটকে আছে।

সামনে এগিয়েও পিছনে ফিরে যাওয়া যেতে পারে। যেমন আমি নীল দানাদার কলয়েডীয় পেস্ট টেনে নিই, শিশ্ন টেপার মতো বের করে আনি সরস মাজক, এরপরে ব্রাশে লাগিয়েও কিছু সময় নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকি!

পরে ফিরে এলে দেখি চৌকো চৌকো আলোবাক্স ঘরের মাঝে অ্যাসেম্বলি বসিয়েছে। বসে পড়তে পড়তে তারা খিক করে হাসে, ঠ্যালা দেয় একে অপরকে, দুলে ওঠে সম্মোহনে। আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই তারা জোরে চেঁচিয়ে ওঠে, "ওমা! তুমি তো পুরাই নগ্ন! হে হে হি হি হু হু!"

আমি একটু ঝামটে উঠি, কিংবা সেখানেও আমার গলায় আটকে থাকা দলাটি সরে যায় না বলে আমি নীরবই থাকি। "সরো সরো, জায়গা দাও দেখি!" আমি বললেই তারা সরে যাবে এমনটাও ঘটে না। আমাকে অনেক কিছু করতে হবে এখন। সাদা-রঙিন জামা জড়াতে হবে, এবং ভুলে যেতে হবে যে একটু আগেই নগ্নতা আমাকে আরাম দিচ্ছিল। আলোবাক্সেরা গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল হেসে কুটি কুটি, সেটা এখন পারবে না, এই সত্য মেনে নিতে নিতে আমি আরো একবার হেরে যাই। আমাকে আরো প্রসাধনে চর্চিত হতে হবে, চুল আঁচড়ে নিপাট ভদ্রলোক সেজে বেরুতে হবে বাইরে। এসকল নিছক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রণা মেখে আমি পথে নামি।

রোদ চিরে যেতে থাকে যেভাবে তাতে আমি আরাম পাই। জামার অশ্লীলতা ভেদ করেও সুস্থ রোদ আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে এমনটা ভাবি, ভাবতে ভাবতেই একরাশ ধুলো জুতোর ওপরে এসে পড়ে। ফুটপাতের পাশে অলস-শয্যাবাসী ধুলো। মনে পড়ে যায় জুতোটার চামড়ার গর্তে গর্তে কত অজ্ঞাত ধুলো জমছে রোজ। দুয়েকদিন পর পর আমি কালি মেখে দিলে গর্তে বসবাস করা ধুলোরাও হোলি খেলে, কালো হোলি! তারপরে আবার নীরবতা, নতুন অতিথিরা আসে, গল্প জুড়ে দেয়, কুশল বিনিময়, হাপিত্যেশ! অতঃপর পুনরায় হোলি। চক্রাকারে আমি আর ধুলো একটা সম্পর্ক স্থাপন করেছি পরষ্পরের সজাগ সম্মতি ছাড়াই। সেই কথাও মনে পড়ে।

ফুটপাতের পাশে নগর-রূপায়কেরা রেলিং দিয়েছে, সার সার রূপালী রেলিং। রোদ মেখে ঝিকিয়ে উঠছে চিৎকারে। আমি একটু ছুঁয়ে দিতেই আঙুলে ফালা ফালা তড়িতের মতো তাপ ঢুকে পড়ে। আমি কৌমার্য হারানোর মতোন হতাশা আর বেকুবি আর হা-হুতাশ আর গ্লানি আর অসহায়ত্ব টের পাই। সিদ্ধান্ত নিই, এবারে হাত রাখা যায় রেলিং সঙ্গমে। এবারে ঘর্মাক্ত হওয়া যায়, অবসন্ন হওয়া যায়। এবারে রেলিংকে ভেতরে টেনে ঢুকিয়ে বীর্যহীন করে দেয়া যায়। আমি উল্লাসিত হই!

তারপরে আমি লম্বা পা ফেলি সামনে। মনে পড়ে যায় তেলাপোকা কিশোরদ্বয় আমার মতোই বেরিয়েছিল, আমার ঘরের কালো-পথে ওরা হাঁটতে হাঁটতে মিশে গেছে পা ছড়িয়ে। মনে পড়ে চৌকো আলোবাক্সগুলোকে, ওরা নিশ্চয়ই এখন জমাট রুলটানা ঘরে বাসর সাজিয়ে ফেলেছে। মনে পড়ে একটা নীলবীর্য-শিশ্ন রেখে এসেছি মুখ না লাগিয়েই, ওখানে এখন স্বতঃস্ফূর্ত নিঃসরণ হবে, ভিজে যাবে ক্রমশই আমার বেসিন, টাইলসের খাঁজ, চৌকাঠ, কার্পেট, আলোবাক্সের কাফেলা!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:২৫
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×